বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.) কর্তৃক আনীত বিষয় যা জরুরিভাবে স্বতঃসিদ্ধ প্রমাণিতরূপে পরিজ্ঞাত, তাই জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত। এই জরুরিয়াতে দ্বীনের কিছু বিষয় ইসলামী শরীয়াতে বিস্তারিতভাবে আর কিছু বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলোর ওপর বিস্তারিতভাবেই ঈমান আনয়ন অপরিহার্য। যেমন সালাত। তার রূপ, ধরন, পাঠ পদ্ধতি, ওয়াক্ত ও রাকায়াত সংখ্যা ইত্যাদির ওপর বিস্তারিতভাবে ঈমান আনতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি নামাজ ফরজ হওয়াকে তো স্বীকার করে, কিন্তু পাঁচ ওয়াক্তের স্থলে তিনি ওয়াক্ত, চার রাকায়াতের স্থলে দুই রাকায়াত বিশ্বাস করে তাহলে সে মুমিন বলে বিবেচ্য হবে না।
আর অত্যাবশ্যকীয় বিষয় যেগুলো ইসলামী শরীয়তে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে সংক্ষিপ্তভাবেই ঈমান আনতে হবে। যেমন ফিরিশতা মন্ডলী, তাদের সংখ্যা, তাদের সকলের অবস্থান ও দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আল কোরআন ও আল হাদীসে উল্লেখ নেই। সুতরাং এ ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে ঈমান আনয়ন করতে হবে না।
মোটকথা ঈমানের সে সকল বিষয়ে সংক্ষেপিত বিবরণ এসেছে, সেখানে সংক্ষেপিতভাবে ঈমান আনতে হবে। আর যেসকল বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে, সেখানে বিস্তারিতভাবে ঈমান আনয়ন শর্ত। এমন কি যদি কেউ সালাত ফরয হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হয়ে তার তাসদীক বা সত্যায়ন না করে অর্থাৎ সালাত ফরজ হওয়াকে বিশ্বাস না করে তবে সে কাফির বলে পরিগণিত হবে। এটাই প্রসিদ্ধ অভিমত এবং অধিকাংশ মুজতাহিদগণই এ মতের সমর্থক। (শরহুল মাকাসিদ : ৩/৪২০)।
ঈমান আনয়নের দুটি ধারা আছে। যথা : (ক) তাহকিকী ও (খ) তাকলিদী। তাহকিকী ঈমানের অর্থ হলো, এমন ব্যক্তির ঈমান আনয়ন করা, যে ঈমানের সকল বিষয়কে স্বীকার করে ও সকল বিষয় দলিল প্রমাণাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতেও ক্ষমতা রাখে। আর তাকলিদী ঈমানের অর্থ হলো এমন ব্যক্তির ঈমান আনয়ন করা যে ঈমানের সকল বিষয় স্বীকার করলেও তা’ দলিল প্রমাণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। এই দুই ধারার ঈমানই গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য। তবে মনে রাখা দরকার যে, তাকলিদী ঈমানের তুলনায় তাহকিকী ঈমান অধিকতর শক্তিশালী ও মর্যাদাসম্পন্ন।
উল্লেখিত দুই ধারার ঈমান আনয়নকারীদের সম্পর্কে ওলামায়েদ্বীন ও আইয়ামে মুজতাহেদীন নিম্নোক্ত অভিমত প্রদান করেছেন। যথা (ক) যে ব্যক্তি বিনা দলিলে ঈমান এনেছে, তার সম্পর্কে ইমাম আজম আবু হানীফাহ, সুফিয়ান সাওরী (রাহ.)সহ অধিকাংশ মুজতাহিদ বলেন : ওই ব্যক্তির ঈমান সঠিক ও সহীহ। তবে প্রমাণাদি অন্বেষনে অনীহা প্রকাশ করলে গোনাহগার হবে। (মুরামুল কালাম : ৫৫)।
(খ) অধিকাংশ উলামা ও সকল ফুকাহা, মুকাল্লিদের অর্থাৎ বিনা দ্বিধায় অন্যের কথা মান্যকারীর ঈমান সহীহ ও ইহকাল-পরকালে তার ওপর ইসলামী আহকাম প্রয়োগ করা সঠিক বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। (শরহুল মাকাসিদ : ৩/৪৫২)।
(গ) ঈমাম আবু হানিফাহ, সুফিয়ান সাওরী, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ইমাম আহমাদ (রাহ.)সহ বেশিরভাগ ফকীহ ও হাদীস বিশারদ বলেছেন যে, তার ঈমান সহীহ ও গ্রহণযোগ্য। তবে দলিল প্রমাণের তথ্য তালাস পরিত্যাগ করার অপরাধী বলে গণ্য হবে। কেউ কেউ এ ব্যাপারে উম্মতের ঐক্যমত আছে বলে বর্ণনা করেছেন। (শরহে ফিকহে আকবর : ১৪৩)।
এ পর্যায়ে ঈমান ও ইসলামের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্পর্কে অবহিত হওয়া একান্ত দরকার। ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ আন্তরিক বিশ্বাস। আর ইসলাম শব্দের আভিধানিক অর্থ অবনত হওয়া, মস্তক অবনত করা, বিনয় প্রকাশ করা, আত্মসমর্পণ করা। ঈমানের সম্পর্ক ওই সকল বিষয়ের সাথে যেগুলো অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত, অর্থাৎ যেগুলো বিশ্বাস বিষয়ক। আর ইসলামের সম্পর্ক ওই সকল বিষয়ের সাথে যেগুলো কর্মের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়, তথা নামাজ, রোজা ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয় ও আমলকে ইসলাম বলে। স্মর্তব্য যে, আল কোরআন ও আল হাদীসে ঈমান ও ইসলাম শব্দদ্বয় একটি অপরটির জায়গায় প্রয়োগ হতে দেখা যায়। এরদ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এই শব্দ দুটির প্রয়োগ স্থল প্রায় এক, অথবা পরস্পরে সম্পুরক। অর্থাৎ একটি অন্যটি ব্যতীত পরিপূর্ণ হয় না বা গ্রহণযোগ্য হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।