চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
লজ্জা ও সম্ভম মানুষের এমন একটি স্বভাবজাত গুণ যদ্দরা একাধিক নৈতিক গুণাবলীর প্রকাশ ঘটে। লজ্জাশীলতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসুল (সা.) বলেছেন, ঈমানের সত্তরের চেয়েও অধিক শাখা প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে উত্তম শাখা হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা এবং নিম্নতম শাখা হল, রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। লজ্জা মানুষকে সকল প্রকার অন্যায় অবিচার সমস্ত পাপ কাজ অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। লজ্জাহীন মানুষ ভালো মন্দ নির্লজ্জ বেহায়াপনা সকল কাজ করতে পারে। কোনো কিছু তাকে মন্দ কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারে না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,পৃর্ববর্তী নবীগণের বাণী হতে পরবর্তী লোকরা যা পেয়েছে তা হল,তুমি যখন লজ্জাহীন হয়ে যাবে, তখন তোমার যা ইচ্ছে করতে পারবে। (সহি বুখারী)।
তবে ইলম হাসিলের ক্ষেত্রে লজ্জাশীলতা প্রশংসনীয় নয়।প্রখ্যাত মুফাসসির ও বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ রহ. বলেছেন, লাজুক এবং অহংকারী ব্যক্তি ইলম হাসিল করতে পারে না। লজ্জা যেহেতু মানুষের স্বভাবজাত গুণ তাই মানুষ মাত্রই কম বেশি লজ্জার অধিকারী হয়ে থাকে। তথা অন্য মানুষের সামনে সাধারণত নির্লজ্জ কাজ করাকে পছন্দ করে না।চেষ্টা করে তাকে যেন কেউ কোনো কোনো খারাপ কাজ করতে দেখতে না পায়। অনুরুপভাবে নিজের বেইজ্জতীর ভয়ে অনেকেই জনসম্মুখে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু নির্জনে নিভৃতে অনেকেই লজ্জার পরিচয় দেয় না। যেমন মানুষের সামনে সতর উন্মুক্ত করা বা বিবস্ত্র হওয়াকে লজ্জা ও আত্মামর্যাদার পরিপন্থী মনে করা হয় কিন্তু নির্জনে তেমনটি মনে করা হয় না।অথচ নির্জনে থাকাবস্হায়ও বিবস্ত্র না হওয়ার লজ্জার দাবী।
কারণ সর্বদ্রষ্টা আল্লাহ তাআলা নির্জনেও দেখেন। তাই আল্লাহ তাআলার সঙ্গেও লজ্জা প্রদর্শন করতে হবে। আর আল্লাহ তাআলার সঙ্গে লজ্জা প্রদর্শনের দাবী কেবল এতেই সীমাবদ্ধ নয়,বরং যে কোনো কাজ তাঁর দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় তা কোনো অবস্থায়ই না করা।এ প্রসংগে আকায়ে মুহাম্মদ তাজদারে মদিনা রাসুল (সা.) উম্মতকে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই তো একবার তিনি সাহাবায়ে কেরামকে সম্বোধন করে বলেন : তোমরা আল্লাহকে এ পরিমাণ লজ্জা কর, যেমনটি লজ্জা করার দাবী রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন হে আল্লাহর রাসুল! আলহামদুলিল্লাহ আমরা তো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে লজ্জা করে থাকি। তখন তিনি বললেন, আমার বলার উদ্দেশ্য এটা নয়। বরং যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে পরিপূর্ণ লজ্জা করবে, তার তিনটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, নিজের মাথা এবং মাথা সংশ্লিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গের হেফাজত করবে দ্বিতীয়ত পেট এবং পেট সংশ্লিষ্ট বিষয়ের হেফাজত করবে। তৃতীয়ত মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী অবস্থাসমূহকে স্মরণ করা।
লজ্জা এবং ঈমান একটি আরেকটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যার মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানের গুণাবলি থাকবে তার মধ্যে অব্যশই লজ্জার মতো মহামূল্যবান গুণও থাকবে। যার মধ্যে লজ্জা থাকবে না তার মধ্যে ঈমানও থাকবে না পূর্ণাঙ্গ। রাসূল (সা.) বলেছেন, লাজুকতা ও কম কথা বলা ঈমানের দুটি বৈশিষ্ট্য। আর অশ্লীলতা ও বাচালতা মুনাফিকির দুটি বৈশিষ্ট্য। হজরত ওমর (রা.)-এর ছেলে হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ঈমান ও লজ্জা এ দুটি ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। যখন এর একটি ছেড়ে দেয়া হয়, তখন অন্যটি এমনিতেই চলে যায়।
মোটকথা, যে ব্যক্তি আখেরাত কামনা করে, সে যেন দুনিয়ার রং তামাশা চাকচিক্য ছেড়ে দেয়।আর যে এমনটি করল সে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে লজ্জা প্রদর্শনের হক আদায় করেছে। এ থেকে বোঝা গেল যে,আল্লাহ তাআলার সঙ্গে লজ্জা করা আবশ্যক। আর সে লজ্জা কেবল মৌখিক দাবীর নাম নয়। বরং তা হল দেহ,আত্মা এবং খাহেশাতকে আল্লাহ তাআলার হুকুমের আনুগত্যের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে তোলা এবং সর্বদা আল্লাহ তায়ালার বন্দেগী করার চিন্তা ফিকির করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সেভাবে লজ্জা প্রদর্শনের করার তৌফিক দান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।