বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
জমহুর ওলামায়ে কেরামের মতে, ঈমান ও ইসলাম এক অভিন্ন। এ অর্থে যে, দুটিরই লক্ষ্য বিশ্বাস গ্রহণ ও আনুগত্য করা। আর এ অর্থে যে, নাম এবং হুকুমের দিক থেকে সকল মুমিনই মুসলিম ও সকল মুসলিমই মুমিন। এ মতের ওপরই উম্মতের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত ও আল কোরআন ও আল হাদীসের সাক্ষ্য বর্তমান। (শরহুল মাকাসিদ-৩/৪৪২)।
এতদপ্রসঙ্গে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বলেন : ইসলাম হতে ঈমান পৃথক হয় না। তদ্রæপ ঈমান থেকে ও ইসলাম পৃথক হয় না। সুতরাং যে ব্যক্তি মুসলমান সে মুমিনও বটে। আর যে মুমিন সে মুসলিমও। যদিও আভিধানিক অর্থের দিক থেকে ঈমান ও ইসলাম পৃথক পৃথক। যেমন পেট ও পিঠ। পেট ছাড়া পিঠ অথবা পিঠ ছাড়া পেট কল্পনা করা যায় না। যদিও পেট ও পিঠ ভিন্ন ভিন্ন বস্তু। এতদর্থে ঈমান হলো- তাসদীক তথা আন্তরিক বিশ্বাস, আর ইসলাম হলো আনুগত্য। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক ও তার রাসূল (সা.)-এর প্রতি আন্তরিকব বিশ্বাসী হবে, সে অনুগতও হবে এবং আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাসীও হবে। রাফেযী সম্প্রদায় ও মুতাযিলা সম্প্রদায়ের মতে ঈমান ও ইসলাম একটি হতে অপরটি পৃথক ও আলাদা হতে পারে। (উসুলুদ্দীন লিল বযদুবী : ৫৫)। স্মরণ রাখা দরকার যে, এই দুটি সম্প্রদায়ই বাতিল ফিরকার অন্তর্ভুক্ত। এজন্য তাদের অভিমতকে গ্রহণ করা যায় না বা বাতিল।
বস্তুত গভীর মনোযোগের সাথে আল কোরআন ও আল হাদীস অধ্যয়ন করলে ঈমান ও ইসলাম পরস্পর সম্পুরক, তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এতদপ্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) আর যে ব্যক্তি দ্বীন হিসেবে ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু অন্বেষণ করে, তবে তা’ অদৌ গ্রহণ করা হবে না। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৮৫)। (খ) ইরশাদ হয়েছে : অনন্তর আমি উক্ত জনবসতি হতে ঈমানদারগণকে বের করলাম। একটি ঘর ব্যতীত মুসলমান কোনো সদস্য পেলাম না। (সূরা যারিয়াত : আয়াত ৩৫, ৩৬)।
(গ) ইরশাদ হয়েছে : তোমরা ইসলাম গ্রহণকে আমার জন্য খোটার ব্যাপারে পরিণত করো না, অর্থাৎ তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার প্রতি করুণা করেছ এমনটি মনে করো না। বরং আল্লাহপাক তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি পথ প্রদর্শন করে তোমাদের প্রতি করুণা করেছেন। (সূরা হুযুরাত : আয়াত ১৭)।
উল্লেখিত আয়াতে কারীমার আলোকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঈমানও ইসলাম পরস্পরে সম্পুরক। এর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। আর যায় না বলেই উভয় শব্দের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক অভিন্ন।
শুধু তাই নয়। আল হাদীসেও এর প্রমাণ বিধৃত আছে। যেমন : (ক) বিশ^ নবী হযরত মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) জনৈক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে আগত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন : আল্লাহ পাক ও তার রাসূল (সা.)-এর ওপর ঈমান আনয়নের পরিচয় হলো- ‘লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’-এর সাক্ষ্য প্রদান করা, সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমযানের সিয়াম পালন করা, গণীমতের মালের এক পঞ্চমাংশ বাইতুল মালে জমা দেয়া। (সহীহ বুখারী : ১/১৩)।
(খ) উল্লিখিত আয়াতে কারীমা ও আলহাদীসের আলোকে বুঝা যায় সে এখানে ইসলাম বলতে হাকীকতে শরীয়াত তথা ঈমানকে বুঝানো হয়েছে। যদ্বারা ইসলাম ও ঈমান এক হওয়া বুঝা যায়। (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী : ১/৬৬)।
এ পর্যায়ে অবশ্যই স্মরণ রাখা দরকার যে, মুসলমান কোনো বদআমল বা গুনাহের কারণে কাফির হয়ে যায় না। তবে, ঐ শ্রেণীর বদ আমল, যা আল্লাহ দ্রোহিতা ও দ্বীন ইসলামের অস্বীকৃতির নিদর্শন বহন করে, তা মানুষকে ইসলামের গন্ডি হতে বহিষ্কার করে দেয়। যেমন মূর্তিকে সেজদাহ করা, আল কোরআনকে অবমাননা করা, আবর্জনা স্তুপে নিক্ষেপ করা, কোনো প্রাণীর মূর্তি বা বিগ্রহকে তার অমরত্ব লাভের উপায় বলে মনে করা ইত্যাদি দ্বীন ইসলামকে অস্বীকার করার নামান্তর বিধায় তা’ কুফর।
যদি কোনো ব্যক্তি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) আনীত সকল বিষয়ে অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও তদনুযায়ী আমল করল। এর পরেও সে স্বেচ্ছায় পৈতা পরিধান করল অথবা স্বেচ্ছায় প্রতিমাকে সেজদাহ করল, তাকে ইসলামের গন্ডি হতে বহির্ভূত বলে গণ্য করা হবে। কেননা, তার উল্লিখিত কাজ বা আমল বিশ্ব নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তাকযীব বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করার নির্দশন বলে চিহ্নিত করা হবে। এমন কি কুফরীর কথা মূলে উচ্চারণ করাও কুফরী বলে সাব্যস্ত হবে। সুতরাং এ সকল কাজ, আচরণ, সবই কুফরী। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃষ্ঠা ৭৭)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।