Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রিয় নবীর সা. কর্মসূচি

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আলাউদ্দিন ইমামী

॥ এক ॥
ইসলামে দুর্নীতি, সন্ত্রাস মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ কিছুই নেই। যারা ইসলামে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ আবিষ্কার করতে চায় তারা ইসলামের শত্রু। যারা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদী কাজ করে তারা ইহুদীর চর এবং শত্রুদের ভাড়াটে লোক। সৌদি আরবের প্রধান মুফতী এবং হেফাজতে ইসলামের আল্লামা শফী তাই বলেছেন। আল্লাহর নবী (সা.) মদিনায় যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং চার খলীফা যে রাষ্ট্র শাসন করেছেন, সেখানে কোন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছিল না। কারণ ইসলামে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ হারাম। এই হারাম কাজে কোন মুসলমান জড়িত হতে পারে না
দুর্নীতি কাকে বলে
নীতি বিরোধী সমস্ত কাজই দুর্নীতি। আল্লাহর দেয়া নীতি, নবী (সা.) প্রদর্শিত নীতি, সামাজিক নীতি, রাষ্ট্রীয় নীতি এবং মানবিক নীতি অমান্য করার নাম হল দুর্নীতি। ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্নীতি কবিরা গুনাহ। এ ধরনের দুর্নীতি বন্ধ ও নির্মূল করা শুধু সরকার ও পুলিশের কাজ নয়, প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের কোন অন্যায় দেখলে, সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিরোধ করে। প্রতিরোধ করা অসম্ভব হলে মুখে যেন প্রতিবাদ করে। মুখে প্রতিবাদ করাও যদি সম্ভব না হয়, অন্তরে ঘৃণা করে (তার থেকে যেন দূরে থাকে।) আল হাদীস। এই দায়িত্ব অবহেলার কারণে বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী। দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বয়ং চেয়ারম্যান ময়মনসিংহ জে আর সি পি আয়োজিত কর্মশালায় গত ৬-১২-২০১৫ ইং তারিখ তার বক্তব্যে বলেছেন, “দেশে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি নেই”। যা আগে কখনো শুনা যায়নি। আল্লাহ, রাসূল (সা.) এবং শরিয়ত বিরোধী কাজ করা আসল দুর্নীতি, যারা আসল দুর্নীতিতে লিপ্ত তারা অন্যান্য দুর্নীতি না করে থাকবে কিভাবে? দুর্নীতিও বা বন্ধ করবে কিভাবে? অবিচার, পক্ষপাতমূলক বিচার, বিলম্বিত বিচারও দুর্নীতি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে দুর্নীতি আগে বন্ধ করতে হবে। আল্লাহর নবী (সা.) মদীনা সনদ রচনা করে তাই করেছিলেন।
সন্ত্রাস কি?
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কারো ক্ষতি করার অথবা কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য ত্রাস সৃষ্টি করার নামই হল সন্ত্রাস। যারা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জানমালের ক্ষতি সাধন করে, নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সন্ত্রাস করে তারাই সন্ত্রাসী। এরা ধনী, প্রভাবশালী অথবা ক্ষমতাবানদের ভাড়াটে হয়েও সন্ত্রাস করে। সন্ত্রাস যেই করুক, যেভাবেই করুক, যখনই করুক। সকল অবস্থায় সবার জন্য এ সন্ত্রাস হারাম। হারামের পর হারাম। এ অবস্থা সৃষ্টির জন্য সমাজ, রাষ্ট্র এবং বিচার ব্যবস্থা। অথবা কায়েমী স্বার্থবাদী গড ফাদারগণ। অশিক্ষা, কুশিক্ষা এবং পরিবেশও এর জন্য দায়ী।
জঙ্গিবাদের পরিচয়
সন্ত্রাসের চরম ও মারাত্মক রূপ হচ্ছে জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের চাইতে আরো বিপজ্জনক আরো ক্ষতিকর। সন্ত্রাসে মানুষ খুন হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু জঙ্গিবাদে মানুষ খুন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ কারণে জঙ্গিবাদ ইসলামের দৃষ্টিতে আরো বড় পাপ, কবিরা গুনা এবং হারাম।
খুনের অপরাধ অথবা সমাজের চরম অশান্তি সৃষ্টির কারণ ছাড়া কোন মানুষ (সে যে ধর্মের এবং ভাষারই লোক হোক না কেন) খুন করাকে আল্লাহ হারাম করেছেন। এই কারণে জঙ্গিবাদীরা দ-নীয় অপরাধে অপরাধী। জঙ্গিরা শুধু সাধারণ নিরাপরাধ মানুষ নয়, আল্লাহওয়ালা এবং আলেম ওলামাদের পর্যন্ত হত্যা করে। আল্লাহ বলেন,
“যারা কোন একজন মানুষকে খুনের অপরাধ অথবা ফাসাদ সৃষ্টির কারণ ছাড়া হত্যা করল, সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল।” অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “কোন মুমীন মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করল, তার পরিণতি হল জাহান্নাম। সে ওখানে চিরদিন থাকবে।” আল কোরআন।
বর্বর যুগে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ
৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরব বিশ্ব ছিল দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী আর জঙ্গিবাদীদের অভয়ারণ্য। খুন, জুলুম, পরের সম্পদ, আত্মসাৎ, লুঠতরাজ, চুরি, ডাকাতি, জুলুম, অত্যাচার, সংঘাত, সংঘর্ষ, কথায় কথায় মারামারি, সামান্য তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গোত্রে গোত্রে, পাড়ায় পাড়ায় যুদ্ধ, নারী নির্যাতন, এমন কি কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে হত্যা করা, জেনা ব্যভিচার, ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি অপরাধ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক। নারীর ইজ্জত আবরু লুণ্ঠিত হত দিনে দুপুরে। তেমন এক জাহেলী সমাজে আবির্ভাব হন নবী মুহাম্মদ (সা.)। সে সময়ের চরম অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে প্রিয় নবী (সা.) আরব বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে দেন জানমালের নিরাপত্তা। নারী ফিরে পায় তাদের হারানো ইজ্জত ও সম্মান।
নেতারা যদি শান্তি চায়
নেতা-কর্মকর্তারা যদি বর্তমান নিরাপত্তাহীনতা ও অশান্তি থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে চায়, বাংলাদেশের জনগণ যদি দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্তি পেতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে তাদেরকে প্রিয় রাসূল (সা.) প্রদত্ত কর্মসূচিকেই রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সবাইকে স্বীকার করতে হবে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা জাহেলী বর্বর যুগের আরব দেশের মত প্রায়। তাই প্রিয় নবী (সা.) প্রদত্ত কর্মসূচি হতে পারে সেই কাক্সিক্ষত শান্তি ও মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি। বাংলাদেশের নেতা-কর্মকর্তারা কি সেই কর্মসূচি গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছে?
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের বর্বর, খুনী, লম্পট, বখাটে, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, জংলী ও জঙ্গিবাদ মানুষগুলোকে তাঁর কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ, শান্তি প্রিয়, মানবতাবাদী, সভ্য, চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ মানুষে পরিণত করে একটি সুন্দর নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ জাতিকে উপহার দিয়েছেলেন। যার ফলশ্রুতিতে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরা আকৃষ্ট ও প্রভাবিত হয়ে প্রিয় নবীর আদর্শের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল। তার কর্মসূচিগুলো নি¤œরূপ :
১নং কর্মসূচি-বিশ্বাস ও চিন্তার পরিবর্তন
আরবীয় লোকদের বিশ্বাস ও চিন্তা ছিল পরকাল বিমুখ, ভোগবাদী ও চরম দুনিয়ামুখী। এই জীবনই সব, এর পর আর কিছু নেই। কিছু দেব-দেবী আছে ওদেরকে ভেট ভেগার দিয়ে খুশী রাখতে পারলেই হল। কোন সমস্যা নেই। নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের ক্ষতি করলেও কোন সমস্যা নেই। এরকম বিশ্বাস আর চিন্তার কারণে এমন কোন কাজ নেই যা তারা করত না। যত রকমের অপরাধ আর নোংরামী আছে সব কিছুতে তারা লিপ্ত ছিল। মানুষ খুন আর লুটতরাজ ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের জন্য নারীরা মানুষ ও মানবিকতার উপযুক্ত জীব ছিল না, ছিল তাদের ইচ্ছামত ভোগের বস্তু। বর্তমানে আমাদের দেশে যা চলছে ঠিক তেমনই। সে কঠিন সময়ে প্রিয় নবী (সা.) তাদের বিশ্বাস আর চিন্তার পরিবর্তন আনলেন। দুনিয়ার জীবনই শেষ নয়, বরং জীবনের সূচনা মাত্র। মৃত্যুর প্রাচীর অতিক্রম করার পরই শুরু হবে আসল জীবন।
সেখানে আছে শুধু জীবন আর জীবন। সে জীবন মরণ শূন্য। পরাক্রমশালী মহা ক্ষমতাধর একজন আল্লাহ আছেন যিনি সকল মানুষের ¯্রষ্টা ও মাবুদ। মানুষের সুখ শান্তি তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার মধ্যেই। দুনিয়ার জীবনের সকল ভাল কাজের উত্তম পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য কঠিন শাস্তি দেবেন তিনি। অনন্ত অসীম কাল সেখানে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে অপরাধকারীকে। আর চরম সুখ ও শান্তিতে জান্নাতে থাকবেন ভাল মানুষের দল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ