Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কার্বন নিঃসরণ কমাতে আরো উদ্যোগ নিতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বর্তমান বিশ্বের প্রধান সংকট হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট। এটা সম্প্রতি সৃষ্টি হয়নি, এর যাত্রা শুরু হয়েছে প্রায় দেড়শ’ বছর আগে শিল্পায়ন শুরুর পর। ক্রমশ তা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এতে রোগ-ব্যাধি, ঝড়-বৃষ্টি, খরা, উঞ্চতা বেড়ে জানমালের ব্যাপক অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। উপরন্তু পাহাড়-পর্বত ও এন্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাতে সমুদ্র তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ডুবে অসংখ্য মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার এবং প্রয়োজনীয় বৃক্ষ না থাকা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে বহুবার বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন হয়েছে।কিন্তু তেমন সফল মেলেনি। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্যারিসে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়, যা ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৫’ বলে খ্যাত। এই চুক্তিতে ১৯৬টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির প্রধান সারমর্ম হচ্ছে: বায়ুমন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হবে। তাপমাত্রার ‘বেস ইয়ার’ ধরা হয়েছে ১৮৮০ সাল। কারণ প্রকৃত শিল্পায়ন সে বছর থেকেই শুরু হয়েছিল। তাই পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৮৮০ সালে যা ছিল, তার থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন কোনো ভাবেই না বাড়ে। সেই সঙ্গে ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্য করা এবং ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরির কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সম্মেলনে একশ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘কার্বন ক্লাইমেট ফান্ড’ গঠন করা এবং তাতে কে কত অর্থ দেবে তা নির্ধারণ করা হয়। বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এই ফান্ড থেকে সহায়তা পাবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অধিকাংশই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে গেছে! সর্বোপরি যে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারাও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এমনকি সবুজায়নও বৃদ্ধি করেনি তেমন। সর্বোপরি জলবায়ু ফান্ডের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করেনি। অর্থ ব্যবহারে দুর্নীতিরও অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তারা জলবায়ু ফান্ড পেতে যত ব্যস্ত,স্বীয় দেশে কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং সবুজায়ন ও বৃক্ষ বাড়াতে তত সচেষ্ট হয়নি! যেমন: চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রণীত ‘বিশ্বে ইকোসিস্টেম রিমোট সেন্সিং মনিটরিং-২০২০’ প্রতিবেদন মতে,’বিগত ২০ বছরে বিশ্বের শহরাঞ্চলে গড়ে মাথাপিছু সবুজ স্থান ২০০০ সালের ২৩.১৪ বর্গমিটার থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ৪০.৪৭ বর্গমিটারে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে উচ্চ আয়ের দেশে তা ৭৯.৯৭ বর্গমিটার (যুক্তরাষ্ট্র ১৫৭.৩৬ ও কানাডায় ১২১.৯৬), মাঝারি আয়ের দেশে ২৯.৩ বর্গমিটার আর নিম্ন আয়ের দেশে মাত্র ১৯.৬৯ বর্গমিটার’। অপর এক খবরে প্রকাশ, ‘পৃথিবীর ফুসফুস বলে খ্যাত আমাজন জঙ্গলে গত ১২ বছরের নিরিখে ২০২০ সালে সব চেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে অ্যামাজন জঙ্গল। মাত্র এক বছরে ১১,০৮৮ বর্গ কিলোমিটার জঙ্গল কেটে ফেলা হয়েছে’। বিশ্বের অন্য বড় বনের অবস্থাও কম-বেশি তথৈবচ! তাই জাতিসংঘ মহাসচিব গত ২ ডিসেম্বর বলেছেন, মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে আত্মঘাতী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। আমাদের গ্রহ ভেঙে পড়ছে। রেডক্রস গত ১৭ নভেম্বর বলেছে, ‘বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন কোভিড ১৯-এর চেয়ে বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতএব করোনাভাইরাস সংকটের মতো জলবায়ু পরিবর্তনকেও একই ধরনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বিশ্বকে’। স্মরণীয় যে, কার্বন নিঃসরণকারী প্রধান দেশ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ইউরোপের দেশগুলো, ব্রাজিল ইত্যাদি। কিন্তু এ দেশগুলোও এর চরম ক্ষতির শিকার হয়েছে। যেমন: বিশ্বে বর্তমানে সর্বাধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণকারী দূষণ আক্রান্ত প্রথম পাঁচটি দেশ হলো: চীন (২৮%), আমেরিকা (১৫%), ভারত (৭%), রাশিয়া (৫%) ও জাপান (৩%)। অর্থাৎ, উন্নত-অগ্রসর দেশগুলোও দূষণের কারণে চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় বায়ুমন্ডলের উঞ্চতা ও ক্ষতি বেড়েই চলেছে। এর প্রতিবাদে বিশ্ববাসী ব্যাপক সোচ্চার হয়েছে। গড়ে তুলেছে আন্দোলন। তাতে নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী, পরিবেশবিদ ও পরিবেশবাদীরা সরব হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে গত বছর জাতি সংঘের সাধারণ পরিষদে দু’দিনব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তথাপিও পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি। বলতে গেলে অবনতি অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য, চীন, ভারতসহ কিছু দেশ এবং বড় কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা নতুন করে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করবে না। ২০১৯ সালে জার্মানীও দেশটির পরিবেশ রক্ষায় ১০০ বিলিয়ন ইউরো খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার জন্য। জানা মতে, বাংলাদেশের সরকারও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যে ১৩টি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়নি এখনও, সেগুলো আর নির্মাণ করা হবে না। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা গত ২ ডিসেম্বর বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমরা ১.৪২ কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করছি। এ দিয়ে আমরা কার্বন নিঃসরণ কমাতে ২০২৫ সালের মধ্যে কয়লা চালিত বয়লারগুলোর পরিবর্তে বিদ্যুৎচালিত বয়লার প্রতিস্থাপন করব এবং রাস্তায় চলবে হাইব্রিড গাড়ি’। এই অবস্থায় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মুখপাত্র ক্লারে নুলিস গত ১১ ডিসেম্বর জেনেভায় চায়না মিডিয়া গ্রুপ’কে বলেছেন, ‘মানবজাতির বাসস্থান পৃথিবী এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। তাই সব দেশকে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের সময়ে আরও সবুজ, প্রতিরক্ষাসূচক পরিবেশ নির্মাণ করতে হবে’। তিনি আরও বলেছেন, ‘২০৫০ সালে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চাইলে, সব দেশের উচিৎ জরুরি ব্যবস্থা নেয়া। অপচয় করার মতো সময় আমাদের হাতে একদমই নেই’। স্মরণীয় যে,জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করা হলেই কার্বন নিঃসরণ যে ব্যাপক হ্রাস পাবে তার জ্বলন্ত প্রমাণ করোনা মহামারিকালে কার্বন নিঃসরণ কমে যাওয়া। গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশিত গ্লােবাল কার্বন প্রজেক্ট এর বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, ‘কোভিড-১৯ মহামারীকালে লকডাউন এবং যোগাযোগ ও চলাচলের বিধিনিষেধের কারণে ২০২০ সালে কার্বন নিঃসরণ রেকর্ড ৭% কমেছে। অর্থাৎ এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আনুমানিক ২.৪ বিলিয়ন নিঃসরণ কমেছে। এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ০.৯ বিলিয়ন টন এবং ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় ০.৫ বিলিয়ন টন নিঃসরণ কমে যায়’।

অমানিশার ঘোর অন্ধকার ভেদ করে আলোর আভা উদয় হয়েছে।গত ১১ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার পর ২৭টি দেশ নিয়ে গঠিত) শীর্ষ সম্মেলনে এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। চুক্তির সারবত্তা হচ্ছে: ‘১৯৯০ সালে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করা হতো, ২০৩০ সাল নাগাদ সেই মাত্রা থেকে ৫৫% কমিয়ে আনা হবে’। উপরন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামী ১০ বছর বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থার কাঠামো নির্মাণ করবে। কানাডার ট্রুডোর সরকার এক খসড়া আইন উন্মোচনে বলেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি কার্বন নিরপেক্ষ হবে। অপরদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী জনসন ঘোষণা করেছেন, ‘২০৩০ সাল নাগাদ ১৯৯০ সালের চেয়ে ৬৮% কার্বন নিঃসরণ কমানো হবে যুক্তরাজ্যে। তিনি অপরিশোধিত তেল, গ্যাস ও কয়লা প্রকল্পে নতুন করে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর তার প্রথম কাজ হবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-২০১৫-তে ফিরে যাওয়া। তিনি জলবায়ু বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে। বাইডেন আরও বলেছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের কার্বন নির্গমন নেট জিরোতে নামিয়ে আনার জন্য তিনি কাজ করবেন।

এই অবস্থায় গত ১২ ডিসেম্বর প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পঞ্চবার্ষিকী পালন উপলক্ষে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘ক্লাইমেট অ্যামবিশন’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে চীন, জাপান, ভারত, কানাডা, ইতালি, পাকিস্তান, ইউরোপীয় কমিশন ও বাংলাদেশসহ বহু দেশের শীর্ষ নেতা অংশগ্রহণ ও ভাষণ দেন। এ সম্মেলন উদ্বোধনী ভাষণে জাতিসংঘের মহাসচিব সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা জারি’র আহবান জানিয়ে বলেছেন, ‘বায়ুমন্ডলে কার্বন জমা পড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই জরুরি অবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।তিনি আরও বলেন, ‘চলতি শতকে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক কার্বন নিঃসরণের হার ৭.৬% কমাতে হবে। পথ পরিবর্তন না করলে আমরা চলতি শতকেই গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি দেখব, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ’ (ইতোমধ্যেই ৩৮টি দেশ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে)। এ সন্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি বলেন, ‘প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে চীন। পাশাপাশি ইতিবাচকভাবে এ চুক্তি বাস্তবায়নও করছে। ২০৩০ সালে চীনের ইউনিট জিডিপিতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৬৫% কম হবে। সে সময়ে প্রাথমিক জ্বালানি ভোগ্যে অ-জীবাশ্ম জ্বালানির অনুপাত ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে। বন সংরক্ষণ পরিমাণ ২০০৫ সালের তুলনায় ৬০০ কোটি ঘনমিটার বেশি হবে এবং বায়ু চালিত বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুতের ধারণ ক্ষমতা ১.২ বিলিয়ন কিলোওয়াটের বেশি হবে’। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ঘোষণা করেন, ‘কানাডা ২০৩০ সালের মধ্যে ২০০৫-সালের লেভেলের ৩০ শতাংশ নিচে হ্রাস করবে। উপরন্তু তার দেশের বার্ষিক কার্বন ট্যাক্স ২০২২ সালের পর থেকে টন প্রতি ১২ মার্কিন ডলার বাড়াবে’। সেই সঙ্গে জলবায়ুর লক্ষ্যকে জয় করার উদ্দেশে নতুন করে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথাও ব্যক্ত করেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তির ৫ম বার্ষিকী পালন করছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা চুক্তিতে নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর ধারে কাছেও নেই’। উপরন্তু তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অর্থায়নের পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রশমন ব্যবস্থা গ্রহণে উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। জানা মতে, কপ২৬ অনুষ্ঠিত হবে ২০২১ সালে গ্লাসগোতে।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ন্যায় বিশ্বের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদরাও জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ জ্বালানি দিয়ে বিমান, জাহাজ, কার, ট্রেন ইত্যাদি চালানোর চেষ্টা করছে। তাতে ইতোমধ্যেই অনেকেই সফল হয়েছেন। যেমন: ব্রিটিশ কোম্পানি রোলস-রয়েস সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক প্রযুক্তিতে তৈরি প্লেনের গ্রাউন্ড টেস্টিং সফলভাবে শেষ করেছে। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে প্লেনটি ঘণ্টায় ৩০০ মাইল বেগে উড়তে পারবে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাটারিতে ৬ হাজার সেল রাখা হয়েছে। থাকবে বিশেষ তাপ সুরক্ষা ব্যবস্থা। এই প্লেন উড়লে তাতে দূষণ কম হবে। চীন পারমাণবিক ফিউশন বা কৃত্রিম সূর্য তৈরি করেছে, যাতে ১৫০ মিলিয়ন ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা তৈরি হতে পারে, যা সূর্যের কোর অংশের উত্তাপের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। চীনা বিজ্ঞানীদের আশা, যন্ত্রটি একটি শক্তিশালী ক্লিন এনার্জি অর্থাৎ গ্রইনহাউস গ্যাসবিহীন শক্তির উৎসের সম্ভাবনা খুলে দিতে পারে। সূর্য, বাতাস ও পানি থেকে জ্বালানি তৈরির পরীক্ষামূলক প্ল্যান্ট চালু করেছে জার্মানির জুরিখের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি সফল হলে এ দিয়ে বিমান চালানো হবে। জুরিখের এই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই স্পেনে আরও বড় পরীক্ষামূলক প্ল্যান্ট চালু করেছে। অ্যাপেতা মোটর দাবি করেছে, তাদের সৌর বিদ্যুৎ চালিত গাড়িটি সরাসরি সূর্যের আলোতেই চলাচল করতে পারে। দৈনিক এটি পাড়ি দিতে পারে ৪৫ কিলোমিটার। ভবিষ্যতে তারা এটির আরও উন্নতি করবে, যাতে বছরে ১১ হাজার কিলোমিটার চলতে পারে। জার্মানির ডয়চে বান ও সিমেন্স মবিলিটি হাইড্রোজেনে ট্রেন চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২৪ সালে এই ধরনের ট্রেনের ট্রায়াল রান হবে। এই প্রযুক্তিতে ট্রেন প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ছুটবে।সরকারও হাইড্রোজেন ভিত্তিক জ্বালানি তৈরির জন্য ৯০০ কোটি ইউরো দিচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে যানবাহন চালানোর এসব প্রক্রিয়া চলমান আছে। হয়তবা অচিরই বড় সাফল্য আসবে।

বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি বৈশ্বিক। তাই শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ালেই বিশ্বের উঞ্চতা হ্রাস পাবে না। কিছু কমতে পারে মাত্র। তাই বর্তমান বিশ্বের প্রধান ও প্রকট সংকট বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা হ্রাস করার জন্য বিশ্বের সব দেশকেই একসাথে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে এবং সবুজায়ন ও বৃক্ষ রোপন বৃদ্ধি করতে হবে বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী।নতুবা এ ক্ষেত্রে এসডিজি পূরণ হবে না। অপরদিকে জলবায়ু ফান্ডের প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত পরিশোধ করা ও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করা এবং সে ফান্ড সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব বান কি মুনের মন্তব্য স্মরণযোগ্য। মুন বলেছেন, ‘আমাদের যেহেতু দ্বিতীয় আরেকটি পৃথিবী নেই,তাই কার্বন নিঃসরণ কমাতে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যতীত আর কোন উপায়ও নেই’। অপরদিকে, ইউএনডিপি প্রধান বলেছেন, ‘বশ্বব্যাপী উন্নয়নের শক্তিশালি ও নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। মানব সমাজের উন্নয়নের কারণে পরিবেশ ও প্রকৃতিতে যে প্রভাব পড়ছে তা মোকাবিলায় এটি খুবই জরুরি’। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ অব্যাহত থাকায় এবং বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমাদের উন্নয়নের ধারণা আবারও নির্দিষ্ট করা উচিৎ’।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ু


আরও
আরও পড়ুন