Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা না চট্টগ্রাম- প্রথম চ্যাম্পিয়ন কে?

ক্রিকেটের প্রাপ্তি তরুণ প্রতিভা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

করোনায় ক্রিকেটারদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে হঠাৎই একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। মহামারির কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএল না হওয়ায় বিসিবির প্রথম ভাবনাতেই আসে টি-টোয়েন্টির চিন্তা। আর বছরটি মুজিবশতবর্ষ হওয়ায় আসরটি নাম পায় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। তড়িৎ নেওয়া সেই সিদ্ধান্তই কাজে লেগে গেছে, জাতীয় দল-তো বটেই পাইপলাইনে থাকা ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে ‘ঘরোয়া ক্রিকেটার দিয়ে টুর্নামেন্ট হোক’ অনেক দিনের সেই দাবিও মিটেছে অনেকের। কাগজে কলমে এবং মাঠের পারফরম্যান্সে সেরা দুটি দল ফাইনালে উঠলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজটি শতভাগ সফল। উঠতি ক্রিকেটাররা অনেকেই জানান দিয়েছে নিজেদের সক্ষমতা, তুলে রেখেছেন জাতীয় দলে জায়গা পাবার দাবিও। তাইতো আজকের ফাইনালে জেমকন খুলনা বনাম গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের লড়াইটা অনেকেই দেখছেন ক্রিকেটে বিজয় হিসেবেই।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৪টায় সেরা দুই দলের ফাইনাল হলেও ব্যাটিং বোলিংয়ে দুই দলের তফাতটা স্পষ্ট। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই রানের ফোয়ারা বইয়ে দিয়েছেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের দুই ওপেনার লিটন দাস এবং সৌম্য সরকার। ৯ ম্যাচে ৫২.৮৫ লিটন করেছেন ৩৭০ রান। এমন পারফরম্যান্সের কারণে টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার দৌড়েও বেশ ভালো ভাবেই টিকে আছেন তিনি। সৌম্যও ব্যাট হাতে কম যাচ্ছেন না। তিনি ১০ ম্যাচে ৩১.১১ গড়ে ২৮০ রান করেছেন। বোলিং পারফরম্যান্স দিয়েও জেমকন খুলনার চেয়ে যোজন বিয়োজন ব্যবধানে এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম। দলটির সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। চলতি টুর্নামেন্টেই নিজের স্লােয়ার আর কাটারের ধার ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ৯ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে তিনি টুর্নামেন্টের সেরা বোলার। তার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে উইকেট নিচ্ছেন আরেক পেসার শরিফুল ইসলামও। এই পেসার ৯ ম্যাচে ১৪ উইকেট ঝুলিতে নিয়েছেন।
খুলনার সঙ্গে চট্টগ্রামের শক্তিমত্তার পার্থক্যটা একজনই কমিয়ে দিতে পারতেন। তিনি সাকিব আল হাসান। পারিবারিক কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ছন্দে না থাকলেও ফাইনালে দলটির ঢাল হতে পারতেন তিনি। যদিও ফাইনালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম হতে পারেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেলেও প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৫ উইকেট নিয়ে একাই চট্টগ্রামকে ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। ৩৫ রানে ৫ উইকেটের ক্যারিয়ার সেরা পরিসংখ্যান নিয়ে নিজের সামর্থ্যটা বেশ ভালো ভাবেই জানান দিয়েছেন সদ্যই হ্যামরস্ট্রিংয়ের চোট থেকে ফিরে আসা মাশরাফি। ৯ ম্যাচে ২৫৪ রান নিয়ে খুলনার সেরা ব্যাটসম্যান জহুরুল ইসলাম অমি। তিনি কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে ৮০ রানের একটি ঝকঝকে ইনিংস খেলেছেন। তাই তাঁকে নিয়ে ফাইনালের স্বপ্ন দেখা খুলনার জন্য দোষের কিছু হবে না।
বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়া একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হওয়ায় আলোয় আসার সুযোগ পেয়েছেন দেশের তরুণ অনেক ক্রিকেটার। বিশেষ করে যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের তরুণরা নিজেদের মানসিকতার পরিচয় রেখেছেন আলাদাভাবে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ মনে করছেন, তাদের পারফরম্যান্সে সব ক্রিকেটারের মধ্যেই একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। টুর্নামেন্টে খেলার ধরণ,পরিসংখ্যান, দলের জয়ে প্রভাবে হিসেবে সিনিয়রদের ছাপিয়ে গেছেন অনেক তরুণ। লিটন দাস, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্তর মতো অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞরা থেকেছেন ব্যাটিং পারফরম্যান্সের শীর্ষে। উঠতি তারকাদের মধ্যে নাঈম শেখ, ইয়াসির আলি রাব্বিরাও চিনিয়েছেন নিজেদের। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দারুণ প্রভাব তৈরি করেছেন পারভেজ হোসেন ইমন, আকবর আলি, তৌহিদ হৃদয়, শামীম পাটোয়ারিরা।
বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমানের অভিজ্ঞ কব্জির ঝাঁকুনির সঙ্গে মুন্সিয়ানা দেখাতে দেখা গেছে শরিফুল ইসলামকে। স্পিনে রাকিবুল হাসান জানান দিয়েছেন নিজের প্রস্তুতির। ফিল্ডিং দিয়েও শামীম, রাকিবুলরাও চিনিয়েছেন তাদের মান। ফাইনালের আগের দিন জেমকন খুলনা ও বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও মুগ্ধতার কথা জানান এসব তরুণদের নিয়ে, ‘সবমিলিয়ে টুর্নামেন্ট আমার মনে হয় যে খুবই ভালো হয়েছে, খুব ভালো ক্রিকেট খেলা হয়েছে। বিশেষ করে আমি মুগ্ধ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে, তারা যেভাবে পারফর্ম করেছে, সাহসী এবং সেনসেবল ব্যাটিং করেছে। তাদের বোলিং, ফিল্ডিং সবমিলিয়ে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত। আমার মনে হয় এটা আমাদের সবার জন্যও খুব ভালো একটা প্রতিযোগিতা তৈরি করবে যেটা আমি সবসময় বিশ্বাস করি। আমাদের ক্রিকেটের প্রতিযোগিতা বাড়াতে আমাদের সাহায্য করবে।’
আগামীতে আছে পর পর দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ভয়ডরহীন মানসিকতার সঙ্গে মাঠের নৈপুণ্যে তারা শিগগিরই জাতীয় দলের দরজায় তারা কড়া নাড়ার দাবিবার বলে মনে হচ্ছে মাহমুদউল্লাহর। সব মিলিয়ে একটি দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় থাকতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেট দর্শকরা। দেখা যাক মাহমুদউল্লাহ নাকি মিঠুনের হাতে ওঠে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শিরোপা।



 

Show all comments
  • মোঃ আতিকুর রহমান পলাশ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১৪ পিএম says : 0
    সাকিব আল হাসান নেই জেমকন খুলনার দলে সেটা একটি খুলনার জন্য একটা বড় ঢাক্কা কারন সাকিব আল হাসান একজন ভালো খেলোয়াড় তিনি থাকলে খুলনার দলে সেটা খুব খুলনার জন্য খুব ভালো হতো তিনি খুলনার দলে ঢাল হয়ে থাকতে পারতো আমার এটি মনে হয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চ্যাম্পিয়ন


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ