Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিশোরী বধূ এখন প্রতিবন্ধী

মো. শামিম হোসেন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বাল্যবিয়ের অভিশাপে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বৃষ্টি খাতুন (১৪) নামের কিশোরী এখন শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিশোরী বৃষ্টি খাতুন এক সময় অন্য সকল কিশোরী মেয়েদের মতো ভাল ও সুস্থ ছিল। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ে করায় ফলে এখন সে আর হাটাচলা একা করতে পারে না।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দেশিগ্রাম ইউনিয়নের দেশিগ্রাম গ্রামের মৃত নূর হোসেনের বিধবা স্ত্রী বাচা খাতুন (৪৫) একমাত্র মেয়ে বৃষ্টিকে নিয়ে দেশিগ্রামের আদর্শপাড়ায় অতি দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করছেন। বৃষ্টির মা ও মামারা একই গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে আব্দুল মমিন (১৬)’র সাথে গত ২০১৯ সালের ১৫ জুন বৃষ্টির কাবিন ছাড়াই বাল্যবিয়ে দেয়। বৃষ্টি ২০১৬ সালে দেশিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি পাশ করে। এ সময় বৃষ্টি খাতুন বাল্যবিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেয়। তারপরেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়। অবশেষে গত ২০১৯ সালের ১৫ জুন সন্ধ্যায় নতুন জামাইকে বাড়িতে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন বাচা খাতুন। এক পর্যায়ে জোর পূর্বক কিশোরী বধূ বৃষ্টিকে বাসর ঘরে যেতে বাধ্য করেন। এতে রাগে অভিমানে ঘরে রাখা তরল কীটনাশক (বিষ) পান করেন। সে সময় ৭ দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো বাল্যবিয়ের প্রতিবাদকারী কিশোরী বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি এখন পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।
এরপর চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও পরবর্তীতে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে বৃষ্টি পঙ্গুত্ব বরণ করতে থাকে। আর তা দেখে মুখে মুখে তিন তালাক দিয়ে স্বামী আব্দুল মমিন পাশের দেওঘর গ্রামে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই আরেকটি বাল্যবিয়ে করে বহাল তবিয়তে রয়েছে বলে জানান বৃষ্টির মামাতো ভাই সুলতান হোসেন।
অথচ সে সময় ওই বাল্য বিয়ে নিয়ে বৃষ্টি অভিভাবকদের কাছে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল বাল্য বিয়েতে তার মত নেই। বরং তাকে স্কুলে পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য বারবার অনুরোধও করেছিল। কিন্তু অভিভাবকরা তার কথায় কর্ণপাত না করায় তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে এবং চিকিৎসার অভাবে দিন দিন বৃষ্টির অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানান তার মা বাছা বেওয়া।
ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৯ সালে যখন গোপনে বৃষ্টির বাল্যবিয়ে হয় তখন আমরা জানতাম না। পরবর্তীতে কীটনাশক পান করে ওই মেয়ে যখন অসুস্থ্য হয়েছে তখন বিষয়টি জেনেছিলাম। এরপরে কি হয়েছে তা জানিনা।
বাল্যবিয়ের পরে বৃষ্টির বর্তমান পঙ্গুত্বের বিষয়টি দেশিগ্রাম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস নিশ্চিত করেছেন। বৃষ্টির মা আরো বলেন, আমার মেয়েটিকে বিয়ের জন্য মমিন ও তার বাবা আব্দুল মতিন জোড়াজোরি করে। এক পর্যায়ে আমরা গরীব হওয়ায় মেয়েকে বিয়ে দেই। কিন্ত বিয়ের পর মেয়ে স্বামী সাথে রাত্রি যাপন করতে না চাইলে তাকে শারীরিক নির্যাতন করার পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে রাখা হতো। এক পর্যায়ে মেয়েটি কীটনাশক পান করে। সে সময়ে যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় তারা কাবিন করেনি। বর্তমানে ছেলের বাবা ছেলেকে অন্যত্র আরেকটি বাল্য বিয়ে দিয়েছে। আর আমি অর্থাভাবে এখন মেয়েকে কোন চিকিৎসা করাতে পারছিনা। এছাড়া ছেলেটি আমার মেয়েটিকে চিকিৎসা না করে এবং দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় প্রতিবাদ করলে তারা আমাদেরকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে তাড়াশ ইউএনও মো. মেজবাউল করিম বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন এসেছি। বিষয়টি দ্রুত খোঁজ নিয়ে বাল্যবিয়ের শিকার বৃষ্টির চিকিৎসার জন্য কি করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিবন্ধী

১৪ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ