পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা বসবাসের অনুপোযোগী-এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। একটি রাজধানীর পরিবেশ, শৃঙ্খলা, দূষণের মাত্রাসহ বাসযোগ্যতার যেসব গুণাবলী থাকা দরকার ঢাকায় তা কতটা আছে, তা বিশদ ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। যানজট, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, পানি দূষণ, বর্জ্য দূষণ নিত্যকার বিষয়। এসব সমস্যা এতটাই তীব্র যে ঢাকায় নাগরিকদের সুস্থ্যভাবে জীবনযাপন করার পরিবেশ নেই বললেই চলে। গত কিছুদিন ধরে বায়ু দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, বুক ভরে শ্বাস নেয়ার জো নেই। মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। ঢাকা এখন শীর্ষ বায়ু দূষণের শহর। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকার বায়ু দূষণ রোধসহ পরিবেশ উন্নয়নের জন্য যে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদফতর রয়েছে এবং মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ যে কর্তৃপক্ষ রয়েছে, তারা বছরের পর বছর ধরে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে পরিবেশবিদসহ সচেতন মহলের উদ্বেগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষের মন্ত্রী ও কর্তা ব্যক্তিদের কোনো মাথাব্যথা ও বিচলন আছে বলে মনে হয় না। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকার পরিবেশ উন্নয়ন এবং নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের জন্য ৮০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধরা হলেও তা বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ সময় পর্যন্ত ঢাকার বায়ু নির্মল করার যে কাজ করার কথা ছিল, তা না করে প্রকল্পের পুরো অর্থ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে। প্রকল্পের এ অর্থের মধ্যে ১৮২ কোটি টাকা কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, মিডিয়া ক্যাম্পেইনে ৩৪ কোটি টাকা, কনাসলটেন্সিতে ৩৩ কোটি টাকা, কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে ৩৩ কোটি টাকা এবং ৩১টি নতুন গাড়ি কেনায় ব্যয় করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বরাদ্দকৃত অর্থ প্রকল্পের মূল কাজে ব্যয় করা হয়নি। পুরো অর্থই ভিন্ন খাতে ব্যয় করে লুটপাট করা হয়েছে।
ঢাকার বায়ু নির্মলের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা নগরবাসী তো বটেই, পরিবেশবিদসহ সচেতন মহলের অনেকেই জানে না। এমন একটি প্রকল্প রয়েছে, তা অনেকের অজানা এবং অগোচরেই থেকে গেছে। ফলে মন্ত্রণালয়সহ এ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের একশ্রেণীর কর্মকর্তা পুরো অর্থই দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভারি করতে সক্ষম হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তত্ত¡াবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল পরিবেশ অধিদফতর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের ৪৬০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন। এ টাকা দিয়ে উভয় সিটি করপোরেশন নির্মাণ করেছে ৮৩.৯১ কিলোমিটার রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত উন্নয়ন, ২৩টি ফুটওভার ব্রিজ, ১৮ কিলোমিটার মিডিয়ান-ফুটপাতের গার্ড রেইল, ২০টি যাত্রী ছাউনি, রোড মার্কিং, জেব্রা ক্রসিং, রোড সাইন, ৯৯টি রিমোট কন্ট্রেল ট্রাফিক সিগন্যাল, ডিএসসিসি’র হাজারীবাগে দোতলা অফিস ভবন, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের জন্য ২৫ ধরনের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা ইত্যাদি। যেখানে প্রকল্পের কাজই হচ্ছে বায়ু দূষণ রোধ এবং পরিবেশ ও বায়ু নির্মল করা, সেখানে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে যে কাজ করা হয়েছে, এগুলো কি পরিবেশ ও বায়ু দূষণ রোধ করেছে? এগুলোর সাথে পরিবেশের কি সম্পর্ক? এমন বিস্ময়কর ঘটনাই ঘটিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, অধিদফতর থেকে শুরু করে দুই সিটি করপোরেশন। বায়ু নির্মল সংক্রান্ত প্রকল্পের অর্থ যে নয়-ছয় করে হরিলুট করা হয়েছে তা এ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছেও ধরা পড়েছে। কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীসহ অন্যন্য সদস্যরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সংসদীয় কমিটি প্রকারন্তরে স্বীকার করেছে, প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে অদক্ষতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। তারা প্রশ্ন করেছেন, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বায়ুর মান উন্নত করা বা দূষণ কমানো। তার কাজ কতটুকু হয়েছে? বরং দূষণ বেড়েছে। প্রকল্পের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি প্রকল্পটির পুনর্মূল্যায়ণের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করলে কি বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে? যারা এই অর্থ অন্যখাতে নিয়ে লুটপাট করেছে বা কেন নেয়া হলো, এ সংশ্লিষ্টদের কি জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে?
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং নির্মল ও স্বাস্থ্যপোযোগী করে তোলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদফতরের এ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানীর বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, বর্জ্য দূষণ রোধসহ পুরো পরিবেশকে নির্মল করতে তো পারেইনি, উল্টো দিন দিন চরম খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। পরিবেশ উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করা হলেও তা লুটপাট করে শেষ করে দেয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়টি থেকেও যেন না থাকার মতো অবস্থায় রয়েছে। আমরা মনে করি, রাজধানীর সব ধরনের দূষণসহ দেশের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ উন্নয়নকল্পে এ মন্ত্রণালয়ের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঢেলে সাজাতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি দেয়া জরুরি। আমরা আশা করবো, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়সহ দফতর-অধিদফতর রদবদল করে তাদের অধিকতর কার্যকর করার দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।