পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শীত আসছে বাড়ছে ঢাকার বায়ুদূষণ। ঢাকার বাতাস হয়ে পড়ছে চরম অস্বাস্থ্যকর। বায়ুদূষণে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এখনও বিশ্বের শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর তালিকায় রয়েছে। দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ফলে রাজধানীর মানুষের রাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া বায়ুদূষণের ফলে মানুষের গড় আয়ু তিন বছর কমছে বলে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ১৬২ নিয়ে গতকাল বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের দিল্লি যথাক্রমে একিউআই ২১৩ ও ২০২ স্কোর নিয়ে তালিকার প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। একিউআই স্কোর ১০১ থেকে ২০০ হলে অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। সে হিসাবে ঢাকার বাতাস এখন অস্বাস্থ্যকর। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোর অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। এ ছাড়া ৩০১ থেকে ৪০০ এর স্কোর ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এই বায়ুমান মানুষের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।
বায়ুদূষণকে পরিবেশবাদীরা মানুষের নীরব ঘাতক হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন। বায়ুদূষণ ক্রমাগত বিশ্বব্যাপী মৃত্যু এবং বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়ার ফলে মানুষের হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ ও ক্যান্সার হওয়ার শঙ্কা বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ যেমন- স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দু’টি সংগঠন হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট ও ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনের ‘এয়ার কোয়ালিটি অ্যান্ড হেলথ ইন সিটিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষিত বায়ুর কারণে ২০১৯ সালে রাজধানীতে ২২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু তিন বছর কমছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে ‘পলিউশন অ্যান্ড হেলথ : আ প্রোগ্রেস আপডেট› শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রকার দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে দুই লাখ ১৫ হাজার ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে শুধু বায়ুদূষণের কারণেই সর্বাধিক এক লাখ ৭৩ হাজার ৫১৫ জনের মৃত্যু হয়।
মূলত চার কারণে রাজধানীর বাতাস দূষিত হচ্ছে। এগুলো হচ্ছেÑ অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজ, পুরনো যানবাহনের আধিক্য, শহরের আশপাশের ইটভাটা ও শিল্প-কলকারখানার দূষণ এবং শহরের ভেতরে যে ময়লা আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক ও কঠোর না হওয়ায় এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটছে না। বরং বায়ুদূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বায়ুদূষণের সমস্যায় জর্জরিত। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে চরম অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। শীত আসার সাথে সাথে নির্মাণকাজ, রাস্তাঘাট, ইটভাটা এবং অন্যান্য উৎস থেকে দূষক কণা ব্যাপকভাবে নিঃসরণের কারণে শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এবার শীত আসার আগেই ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করেছে। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ নীরব। পরিবেশ অধিদফতর বা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বায়ুদূষণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। রাজধানীতে যেসব এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে সেসব এলাকার রাস্তায় প্রতিদিন সকাল- বিকাল পানি ছিটানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও তা করা হচ্ছে না। রাজধানীতে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়ে বাতাস দূষিত করলেও পরিবেশ অধিদফতর এসব বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না। রাজধানীর আশপাশে এখনো অনেক অবৈধ ইটভাটা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর উদাসীন। রাজধানীতে পুরনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি অনেক চলাচল করছে। এগুলোর কালো ধোঁয়ায় প্রতিনিয়ত বাতাস দূষিত হচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। অথচ ঢাকার ভয়াবহ বায়ুদূষণ রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। দূষণের সব থেকে বড় উৎস ঢাকার বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কাজ। শহরের মধ্যে উন্নয়নকাজের ফলে সৃষ্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণেও সঠিক ব্যবস্থা নিতে পারছে না দুই সিটি করপোরেশন। পরিবেশ অধিদফতর এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। এই বায়ুদূষণ রোধে দেশের সর্বোচ্চ আদালত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করলেও তা মানা হচ্ছে না। বালু ও মাটিভর্তি ট্রাক দিনের বেলা চলাচল করতে নিষেধ করা হলেও তা দিব্যি দিনেই চলাচল করছে। এসব ট্রাক চলাচলের সময় ছালা বা ত্রিপল দিয়ে ঢেকে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় বালু বা মাটিভর্তি উন্মুক্ত ট্রাকই চলাচল করতে দেখা যায়। যেসব স্থানে রাস্তা মেরামতের কাজ হচ্ছে সেখানে প্রতিদিন সকাল-বিকাল রাস্তায় পানি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও সিটি কর্পোরেশন বা পরিবেশ অধিদফতর কেউ এ দায়িত্ব পালন করছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষণের শহরের মধ্যে শীর্ষস্থানে প্রায়ই উঠে আসছে ঢাকা। ঢাকার বাতাস হচ্ছে চরম অস্বাস্থ্যকর। এতে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এই বায়ুদূষণ রোধে সরকার আন্তরিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতর এ ব্যাপারে পুরোপুরি ব্যর্থ। উচ্চ আদালতের নির্দেশও উপেক্ষিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। সেসব দেশ বায়ুদূষণ রোধে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু আমরা সে তুলনায় কিছুই করছি না।
তবে পরিবেশ অধিদফতর এ মতামতের সঙ্গে একমত নয়। তারা বলছে, বায়ুদূষণ কমাতে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে বায়ুদূষণবিরোধী অভিযান। এরই মধ্যে ভেঙে দেয়া হয়েছে অনেক ইটভাটা। বন্ধ করা হয়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। বড় বড় রাস্তায় প্রায়ই পানি ছিটানো হচ্ছে। পুরনো গাড়ি চলাচল যাতে না করতে পারে সে জন্য নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে। এমনকি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলি, পোস্টার ছাপানো এবং বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বায়ুদূষণ রোধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
করোনা মহামারিকালে ঢাকার বায়ুর মান ছিল স্বাভাবিক। এরপর ২০২১ সালে আবার ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের শুরুর দিকে অর্থাৎ জানুয়ারিতে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) স্কোর ২৬৯ নিয়ে ঢাকা আবার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে আসে। একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা তখন চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।