Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মার বুকে বিস্ময়

৪১তম স্প্যানে যুক্ত হলো পদ্মার এপার-ওপার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

পদ্মাসেতুর ৪১তম তথা শেষ স্প্যানটি বসেছে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর। তাতেই সংযোগ পূর্ণ হলো মাওয়া-জাজিরার। মুন্সীগঞ্জ আর শরিয়তপুরের মধ্যে নৌপথে যে কয়েক ঘণ্টার দূরত্ব, তা মাত্র পাঁচ মিনিটে নামিয়ে আনার শেষ ধাপটি পূরণ হলো গতকাল বৃহস্পতিবার। এর মাধ্যমে সরকারের চ্যালেঞ্জিং একটি প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন ঘটলো। স্বপ্ন হলো সত্যি।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর দূরত্ব যেন ছিল অলঙ্ঘনীয়। সেই দূরত্ব কাটিয়ে উঠতেই স্বপ্নের পদ্মাসেতুর যাত্রা শুরু। সেই যাত্রা শেষ করার পথে অন্যতম একটি ধাপ পূরণ হলো শেষ স্প্যানটি বসার মাধ্যমে। আগামী ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ৪১তম এই স্প্যানটি চূড়ান্তভাবে বসে যায় ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির ওপর। এর মাধ্যমে দৃশ্যমান হলো পূর্ণ ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এই শেষ স্প্যানটি বসানোর কাজ। গত বুধবারই (৯ ডিসেম্বর) স্প্যানটি মাওয়া প্রান্তের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ক্রেনে তুলে ১২ ও ১৩ নম্বর খুঁটির কাছে এনে রাখা হয়েছিল। সকালে শুরু হয়ে দুপরের আগেই পদ্মার এপার-ওপারে ইস্পাত কংক্রিটের কাঠামোতে সংযোগ বাঁধলো। তীব্র খরস্রোতা এই নদীতে সেতু নির্মাণ সমসায়িক বিশ্বে বিরল ঘটনা। প্রায় ২০ থেকে ২২ বছরের প্রচেষ্টার সফলতা মিললো।

১৯৯৮ সালে যমুনা নদীতে যমুনা বহুমুখী সেতুর যাত্রা শুরু হলে পদ্মায় সেতু নির্মাণের দাবি প্রবল হয়। সেই দাবি থেকে কাজ শুরু হতে আরও এক দশক সময় লেগে যায়। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। একপর্যায়ে সে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে সংশ্লিষ্ট মামলা খারিজ হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়।

বিশ্বব্যাংক সরে দাঁড়ানোয় পদ্মাসেতু নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু বিশ্বকে বিস্মিত করে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে। নানা মহলের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত নিজের ঘোষণায় অটল ছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ পর্যন্ত দেশের মানুষের টাকাতেই গড়ে উঠলো দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম এই অবকাঠামো।

২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মাসেতুর কাজ শেষ করার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের। কিন্তু নদীর তলদেশে মাটির গঠনগত বৈচিত্রের কারণে কাজ পিছিয়ে যায়। সাড়ে ৪ বছর ধরে শুধু সেতুর খুঁটির কাজ চলে। আর ৩ বছর তিন মাস সময় লাগে সেই খুঁটিতে স্প্যান বসাতে। সেতুর ৪২টি খুঁটির ওপর ৪১টি স্প্যান ওঠার মাধ্যমে স্ট্রাকচারাল কাজ শেষ হলো।

পদ্মাসেতুর খুঁটি ৪২টি, স্প্যান ৪১টি। প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। শধু নদীতে সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই পাড়ের সঙ্গে সংযোগ মিলিয়ে সেতুটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। রোড ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার। রেল ভায়াডাক্ট শূন্য দশমিক ৫৩২ কিলোমিটার। অর্থাৎ সংযোগ ও ভায়াডাক্টসহ সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৪৮২ কিলোমটার। প্রমত্ত এই নদীর বুকে সেতু গড়তে নদী শাসন করা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। সংযোগ সড়ক উভয়দিকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি সেতুটি নির্মাণ কাজ করছে। নদী শাসন কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের আবুল মোনেম লিমিটেড। সেতু নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই দেশের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, আগামী ২০২২ সালের জুন মাসে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ’ বিষয়ে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি আট বছর সেতু বিভাগের সচিব ছিলাম। ফলে আমি এখনো এটিকে দেখাশোনা করে থাকি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।



 

Show all comments
  • Kabir Hossain Taposh ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
    পদ্মা সেতু এক বিজয়ের নাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Kaiser ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
    Total Reply(0) Reply
  • Md Lutfor Rahman ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০১ এএম says : 0
    পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থে করতে চাওয়ার পর আমাদের অনেক অর্থনীতিবীদও কঠোর সমালোচনা করে বলেছিলেন অন্য সব প্রকল্প মুখ থুবরে পরবে। আজ তারা কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • S.M. Jakir Hossain ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৩ এএম says : 0
    অভিনন্দন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বাস্তবে ধরা দিল স্বপ্নের পদ্মা সেতু
    Total Reply(0) Reply
  • নওরিন ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারাবাহিক সরকারের ১২ বছর পূর্তির এক মাস আগেই দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বাস্তবে ধরা দিল স্বপ্ন। অভিনন্দন বঙ্গবন্ধুকন্যা!
    Total Reply(0) Reply
  • Fourkan Ahamed ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৪ এএম says : 0
    সকল ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে স্বপ্ন মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে.. ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা.. আজ আমাদের গৌরবের দিন...
    Total Reply(0) Reply
  • Shahidul Islam Shahid ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    বাঙালির সক্ষমতা অনন্য উচ্চতায়....স্রোতের প্রতিকূলে থেকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার অনন্য উপহার... স্বপ্নপূরণ বাঙালির, দক্ষিণবঙ্গের মানুষের... কৃতজ্ঞতা আজীবন.... প্রিয় নেত্রী!
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ahamed Mahin ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
    ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই গণতন্ত্রের মানসকন্যা আমাদের সবার প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনা কে । যার অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা একের পরে এক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Chowdhury ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৩৮ এএম says : 0
    জীবন থেকে ৭০ টা বছর পেরিয়ে গেছে । কোন দিন অঝোর ধারায় চোখের পানি ঝরে নি । বাবা হারালাম নির্বাক ছিলাম, মা চলে গেলো তখনো নির্বাক । ৭১ এ কারাবন্দীর ৮ মাস , চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম , সার্কিট হাউসে পাক সেনাদের শক্ত বুটের আঘতেও অশ্রু ঝ ঝরে নি । মুক্ত বাংলার বুকে প্রথম যখন স্বাধীনতার পতাকা উড়ল তখনো নির্বাক ছিলাম । অনেক শোকে অনেক আনন্দে ব্যক্ত করার ভাষা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু আজ যেন বহু বছরের জমে থাকা অশ্রু গুলু এক সাথে বেরিয়ে আসছে । আনন্দাশ্রু । নিজের শক্তিতে ভর করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আনন্দের অশ্রু । প্রতিদিনের মতো ভোর ৬ টায় ফজরের নামাজ শেষে অনলাইনে বাংলা খবরের কাগজে চোখ পড়তেই দেখলাম পদ্মার দু পাড় এক হয়ে মিশে একাকার হয়ে গেছে । পদ্মা সেতু তার বাস্তব রুপ নিয়ে সবার সামনে হাজির । কুটিল বিশ্ব দেখল বাঙালির ইচ্ছাশক্তি কত প্রকট । এইসব ভাবতে ভাবতে বোধশক্তিই হারিয়ে ফেলেছিলাম । চেতনা ফিরে পেতেই দেখি ইতিমধ্যে অনেক অশ্রু ঝরে পড়ে গেছে । চোখ মুছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললাম " আলহামদুলিল্লাহ " সব শেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ । আপনার একরোখা এই সিধান্তের ফসল জাতির স্বপ্নের বাস্তবায়ন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Akhtaruzzaman ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:২৫ এএম says : 0
    সত্যের বিজয় ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Akhtaruzzaman ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:২৭ এএম says : 0
    সত্যের বিজয় ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পদ্মা

১১ জানুয়ারি, ২০২৩
৩১ অক্টোবর, ২০২২
৪ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ