পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরোধিতা সত্তে¡ও সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক আবস্থায় ছয় শতাধিক পরিবারের ২ হাজার ৭০০ জন এবং গতকাল আরও তিন হাজার জনকে ভাসানচরে নেয়া হয়েছে। তাদের জন্য এক মাসের খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমুদ্রতীর থেকে ৩৭ মাইল দূরে ভাসানচরের অবস্থান। এটি নোয়াখালির হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। রোহিঙ্গাদের এখানে স্থানান্তর করার জন্য সরকার দ্বীপটিকে অত্যাধুনিক বাসস্থান নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এক নান্দনিক স্থানে পরিণত করেছে। বসবাসের জন্য এমন আকর্ষণীয় স্থান দেশে খুব কমই রয়েছে। সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পরও রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বিরোধিতা করে আসছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ জাতিসংঘ ও এসব সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে কোনো ভূমিকাই পালন করেনি এবং করছে না। তারা চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে তার আপত্তি অযৌক্তিক। বিশ্লেষকরাও জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তির সমালোচনা করে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টিকে প্রশংসা করেছেন।
আমরা দেখেছি, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও উগ্রবাদী বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ও বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে কীভাবে দেশছাড়া করেছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। বিতাড়িত প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গার বাসস্থান এবং ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ একবেলা কম খেয়ে হলেও অসহায় রোহিঙ্গাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন অসাধারণ মানবিকতা সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার পর থেকে তাদের নিরাপদে দেশে ফেরা নিয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে সমঝোতার উদ্যোগ নেয় এবং তা এখনও বলবৎ রয়েছে। জাতিসংঘসহ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, ওআইসি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তখন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণের তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি তাদের ফিরিয়ে নেয়ার আহবান জানায়। মাঝে মাঝে মিয়ানমারকে হুমকি-ধমকিও দেয়। তাতে মিয়ানমার মোটেও বিচলিত হয়নি। বরং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিতে নানা টালবাহানা করে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণের জন্য আর্থিক ও ত্রাণ সহযোগিতা দেয়। দশ লাখের উপর রোহিঙ্গাদের দেখতে ও সমবেদনা জানাতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও প্রতিনিধিসহ বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র তারাকারাও ছুটে আসেন। এ যেন এক দর্শনীয় বিষয়ে পরিণত হয়। জাতিসংঘসহ এনজিওভিত্তিক বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা যেন তাদের কাজ করার নতুন এক প্রকল্প পেয়ে বসে। এসব সংস্থার অফিস স্থাপন থেকে শুরু করে তাদের লোকজনের থাকা, আসা-যাওয়া থাকা শুরু হয়। এখনও তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি এখন যেন তাদের জন্য রোহিঙ্গা দেখা এবং কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি অনেকটা বিনোদিত হওয়ার উপলক্ষে পরিণত হয়েছে। ভাসানচরে স্থানান্তরের কারণে তাদের এই বিনোদনের ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে তারা এর বিরোধিতা করছে বলে অনেকে মনে করেন। অথচ রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশের জন্য অসহনীয় এক বোঝায় পরিণত হয়েছে এবং তাদের ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ভূমিকা ‘লিপ সার্ভিস’-এরই নামান্তর। তাদের পক্ষে রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা হিসেবে ভাসানচরে স্থানান্তরে বিরোধিতা মানায় না।
জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোর আচরণে এটা এখন স্পষ্ট রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করুক, তা তারা আন্তরিকতার সাথে চায় না। তারা কেবল মুখে মুখে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছে। এর আশু সুরাহা হওয়ার পথটিও ক্ষীণ হয়ে আসছে। এ প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশকে নিজ উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চীন, ভারত, রাশিয়া ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, ওআইসিসহ অন্যান্য দেশের সাথে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা জোরালো করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, চীন, ভারত ও রাশিয়া যদি আন্তরিকভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করে, তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি কার্যকর রূপ লাভ করবে। চীন ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে মধ্যস্থতা করার আশ্বাস দিয়েছে। এ কথা বহুবার বলা হয়েছে, চীন আন্তরিকতার সাথে উদ্যোগ নিলে এ সমস্যার সমাধান দ্রুত সম্পন্ন হবে। কাজেই চীনকে সঙ্গী করে অন্যান্য দেশের সাথে কূটনৈতিক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। কূটনৈতিক এ প্রক্রিয়া যতক্ষণ না সফল হচ্ছে, ততক্ষণ দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ, নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশকে নিজ উদ্যোগেই রোহিঙ্গাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে যেতে হবে। এতে কে কি বলল বা আপত্তি জানাল, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া সমীচীন হবে না। ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের অলস বসিয়ে রাখা ঠিক হবে না। তাদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিসহ কর্মজীবী করে তুলতে হবে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।