পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
সাম্প্রতিক সময়ে ইথিওপিয়া গৃহযুদ্ধের মধ্যে জড়িয়ে নিবিড়ভাবে পড়েছে, যা দেশটিকে অন্ধকার যুগে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এই সঙ্ঘাতের মধ্যস্থতা ও সমাধানের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় নীতিনির্ধারকদের একটি জটিল সমন্বয় প্রয়োজন। গত বছর সুদানের গণবিদ্রোহ ও শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মোকাবিলায় সউদী আরববের তরিকা অনুযায়ী মিশর, সউদী এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সুদানের সামরিক বাহিনীকে সমর্থন যুগিয়েছিল। পরে অবশ্য তারা ওয়াশিংটন এবং লন্ডনের চাপের কারণে সমঝোতা চুক্তির জন্য আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রস্তাবগুলোর সাথে আপস করে।
সোমালিয়াতেও উপসাগরীয় দেশগুলো শিখে গেছে যে, শুধু অর্থ তাদের মক্কেলের যোগান দেবে না। সোমালি রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকরা রাজনীতির বাজারে অভিজ্ঞ এবং কাতারি ও তুর্কিদের বিরুদ্ধে সউদী ও আমিরাতের স্বার্থকে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারদর্শী। ক্ষুদ্র জিবুতি এ খেলায় সম্ভবত সবচেয়ে দক্ষ। দেশটি একই সাথে আমেরিকান, ফরাসি এবং চীনা সামরিক ঘাঁটিগুলোকে জায়গা দিয়েছে এবং সে কারণে যখন দুবাই পোর্টস ওয়ার্ল্ড জিবুতির কন্টেইনার বন্দর উন্নয়নের চুক্তিটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তখন দেশটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল।
সংক্ষেপে, ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে মধ্য প্রাচ্যের শক্তি এবং তাদের সমর্থনকারীদের রাজনৈতিক লেনদেনে শেষ দশকের সময় কঠোর পরিশ্রমে তৈরি প্যাকস আফ্রিকানাকে গোনায় ধরা হয় না। ওয়াশিংটনে সরকার পরিবর্তনের ফলে এ প্রবণতাটি বদলানোর সম্ভবনা নেই। অন্তত দ্রæত তো নয়ই। সউদী ও আমিরাতিদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকারগুলো হলোÑ ইয়েমেনে তাদের বিপর্যয়মূলক সামরিক অভিযানের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া, পারস্য উপসাগরে সঙ্কট সৃষ্টি হলে লোহিত সাগরকে তেল রফতানির কৌশলগত বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা এবং লোহিত সাগর অঞ্চলের যে কোনও জায়গায় ক্ষমতা থেকে ইসলামপন্থিদের দূরে রাখা।
দীর্ঘমেয়াদে তারা আফ্রিকাকে তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হলো, ভারত মহাসাগরের বন্দরগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ। ভবিষ্যৎ খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত উপসাগরীয় দেশগুলোর পূর্ব-আফ্রিকার উর্বর ভ‚মির দেশগুলোতে বিনিয়োগ করছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জড়িয়ে পড়েছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ লোহিত সাগরকে ঘিরে রেখেছে এবং আফ্রিকার দেশগুলোকে মার্কিনপন্থি অবস্থান পরিবর্তনের জন্য একতরফা চাপ এবং অনুদান ব্যবহার করছে।
হর্ন অফ আফ্রিকাতে হোয়াইট হাউসের আগ্রহের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের ‘শান্তি’ পরিকল্পনা পাস করার জন্য মরিয়া, যার মধ্যে আরব রাষ্ট্রগুলোর ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান অন্তর্ভূক্ত। এরই মধ্যে সুদান মার্কিন চাপের কাছে নতিস্বীকার করেছে। দেশটি ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা থেকে তার নাম অপসারণের বিনিময়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে এখন পঞ্চম আরব রাষ্ট্র হিসাবে সজ্জিত হয়ে গেছে।
গণতন্ত্র বাঁচাতে অর্থনৈতিক প্রান সঞ্চারে মরিয়া সঙ্কটাপন্ন এমন দেশের সাথে কঠোরভাবে দরকষাকষির এটি নির্লজ্জ উদাহরণ। আফ্রিকার নিজস্ব মহাদেশীয় সংস্থাগুলো লোহিত সাগর অঞ্চলের জন্য নীতি বিকাশে কালক্ষেপণ করেনি। এইউ একটি পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত কৌশলের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে, যা ধনী দেশগুলোর কাছে তহবিল চাওয়ার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।