পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মসজিদের শহর ঢাকাকে ভাস্কর্যের নামে মূর্তির শহর বানাতে দেয়া হবে না। রক্ত দেবো তবু ঈমান বিক্রি করতে দেবো না। আমরা সবাই রসুল সেনা ভয় করি না বুলেট বোমা। জীবন থাকতে মুসলমানরা ভাস্কর্যের নামে মূর্তি বানাতে দেবে না। মূর্তি বানাতে হলে মন্দিরে গিয়ে বানান। জনগণ চিকিৎসা পাচ্ছে না, গরীব মানুষ খাবার পাচ্ছে না। আর জনগণের টাকায় মসজিদের নগরীতে মূর্তি নির্মাণ কোনো ভাবেই মেনে নেয়া হবে না। আল্লাহ আপনাকে অনেক সময় দিয়েছে মুসলমানের পাশে থাকুন। বিজাতীয় সংস্কৃতি পরিহার করে বঙ্গবন্ধুর রূহের শান্তি কামনায় আন্তরিক হোন। মা-বাবা এবং নিজের নামের ইজ্জত রক্ষায় সজাগ থাকুন।
রাজধানীর দোলাইপাড় চত্বরে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের পরিবর্তে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর রূহের মাগফিরাত কামনায় আল্লাহর ৯৯ নাম অঙ্কিত স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের দাবিতে গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা নগরীর গোন্ডারিয়াস্থ ধূপখোলা মাঠে তৌহিদী জনতা ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম এসব কথা বলেন। ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মাণ করা হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা’ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
এদিকে, দোলাইরপাড় চত্বরে টিনের বেড়া দিয়ে নির্মাণস্থল ঘিরে রাখার আশাপাশে সকাল ৯টা থেকেই দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রায়েট কার তলব করা হয়। দোলাইরপাড় চত্বরে গণ সমাবেশের ডাক দেয়া হলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গেন্ডারিয়ার ধূপখোলা মাঠে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ভ্রাম্যমান ট্রাকের ওপর থেকেই শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম বক্তব্য রাখেন। জুমার নামাজের পর পরই আশপাশের মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ধূপখোলা মাঠে গণসমাবেশে অবস্থান নিতে শুরু করে। পোস্তগোলার ওপারে গণসমাবেশে অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের পুশিল বাধা দেয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে গণসমাবেশে আসার মুসল্লিদের ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের সাইনবোর্ডে পুলিশ বাধার সৃষ্টি করে। বাদ জুমা মধুপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ পূর্ব দোলাইরপাড় জামে মসজিদে জুমা আদায় শেষে ধূপখোলা মাঠে গণসমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে দোলাইরপাড় চত্বরে পুলিশ তাকে আটকে দেয়। পরে স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। হাফেজ ফজলে রাব্বির কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে গণসমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূমের পরিচালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন নায়েবে আমীরুল মুজাহিদীন মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই। ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি জামে মসজিদের খতীব মাওলানা শাহ আব্দুল আউয়াল, মেরাজনগর বড় মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রশিদ আহমদ, মুফতি মনিরুজ্জামান, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বিক্রমপুরের পীর সাহেব মুফতি নূর হোসাইন নূরানী, মুফতি আব্দুল আজিজ, মুফতি মাসুম বিল্লাহ, মুফতি আশরাফ আলী নূরী, মাওলানা মুফতি সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মো. ইমতিয়াজ আলম, মুফতি আফজাল হোসেন রব্বানী, মুফতি গোলাম সরওয়ার ফরিদী, হাফেজ মাওলানা হাসান বিন বাশার, মুফতী হাবিবুর রহমান মিসবাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, আবু আব্দুল্লাহ মাহমুদী, প্রকৌশলী আশরাফুল আলম, কে এম আতিকুর রহমান, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, শাহাদাৎ হোসেন, মাওলানা মুনসুর রহমান সাকী ও মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন বেলালী।
সভাপতির বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, যে দেশের গরীব মানুষ খেতে পায় না, চিকিৎসা পাচ্ছে না সেখাবে জনগণের টাকা ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মাণ করতে দেয়া হবে না। মূর্তি নির্মাণের চক্রান্ত রুখে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, মনে রাখবেন এদেশ কারো বাপ দাদার দেশ নয়। যদি মূর্তি নির্মাণ করতে চান মন্দিরে গিয়ে মূর্তি নির্মাণ করুন। মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, শরীয়ত বিরোধী কাজের জন্য আমরা রক্ত দিতে চাই না, তবে রক্ত দেয়া শুরু হলে রক্ত বন্ধ হবে না। আমরা মাঠ ছাড়ার প্লেয়ার নই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দোলাইরপাড়ে মূর্তি নির্মাণ করা হলে মহাবিপদ সঙ্কেট দেখবেনা। ভাস্কর্যের নামে দোলাইরপাড়ে মূর্তি স্তাপন করতে দেয়া হবে না এটা পরিস্কার। মূর্তি নির্মাণ করা হলে তা’ বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে।
মধুপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লাহ ্আপনাকে অনেক সময় দিয়েছেন মুসলানের পক্ষে থাকুন। আপনার পিতা-মাতার নামের ইজ্জত রক্ষা করুন। মধুপুর পীর সাহেব বলেন, দু’বছর আগে আল্লামা শফীর উপস্থিতিতে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলাম ১৮ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করুন আমরা আপনাকে নৌকায় চড়ে ভোট দেবো। কিন্ত এখনো এ দাবি পূরণ করা হয়নি। প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন মুসলমান। তিনি পবিত্র কুরআন পড়েন। কিন্ত কোনো মুসলমান মূর্তি বানাতে পারে না এটা কী তিনি জানেন না। তিনি বলেন, আমরা সবাই রসুল সেনা ভয় করিনা বুলেট বোমা। আমাদের হাতিয়া দু’টি একটি হচ্ছে পবিত্র কুরআন আরেকটি হাদিস। তিনি বলেন, ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করতে দেবো না; দেবো না। আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ভুল পথে হাঁটছেন। ফেরাউন নমরূদের পথ ছেড়ে ইসলামের পথে ফিরে আসুন। তিনি বলেন, সকল মূর্তি অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত মুসলমানরা ঘরে ফিরে যাবে না। আল্লামা রশিদ আহমদ বলেন, মসজিদের নগরীতে মূর্তির নগরী জনগণ মেনে নিবে না। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, জাতির আমানত ্আপনার হাতে। এমন কিছু করে বিতর্কিত হবে না। এদেশের মুসলমানরা শিরক মুক্ত এবং বিদআত মুক্ত পরিবেশে বাঁচতে চায়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোলাইরপাড়ে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি না বানিয়ে আল্লাহর ৯৯ নাম সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করুন। মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, বঙ্গবন্ধুর করবে আযাব হোক এটা আমরা চাই না। তিনি বলেন, জেদ্দা- মক্কা সড়কে পবিত্র কুরআন রেহাল সম্বলিত সম্মানজনক গেইটের আলোকে দোলাইরপাড়ে কুরআনের গেইট করুন। মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে মদিনার সনদের আদলে দেশ চালাবেন। কিন্ত মদিনার সনদে কোনো মূর্তি ভাস্কর্য নেই। তিনি বলেন, কোন মদিনার সনদ অনুসরণ করে মসজিদের শহরে মূর্তি বানাতে চাইছেন জনগণ জানতে চায়। তিনি সকল মূর্তি অপসারণের জোর দাবি জানান। মুফতি নূর হোসাইন নূরানী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, মূর্তি কীভাবে ভাঙ্গতে হয় নবীপ্রেমিক মুসলমানরা জানেন। মূর্তির সাথে বাংলাদেশের মুসলমানরা কোনো দিন আপোস করবে না। তিনি বলেন, দোলাইপাড়ে মূর্তি বানানো হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভেঙ্গে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়া হবে। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, মূর্তি পৌত্তলিক সংস্কৃতি। জনগণ ঈমানের দাবিতে মাঠে নেমে এসেছে। এটা কোনো সরকার বিরোধী আন্দোলন নয়। তিনি বলেন, লেলিনের মূর্তি রাশিয়ার জনগণ টেনে নামিয়েছে। মূর্তি নির্মাণ করে ঈমানদারদের হৃদয়ে আঘাত দিয়ে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি করবেন না। মুফতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, মসজিদের শহর ঢাকাকে মূর্তির শহর বানাতে দেয়া হবে না। শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ময়মনসিংহে উলঙ্গ মহিলার মূর্তি স্থাপন করে সরকারের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে। যেখানেই মূর্তি তৈরি করা হবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে ইনশাআল্লাহ। বীর মুক্তিযোদ্দা আলহাজ আবুল কাশেম বলেন, মূর্তি নির্মাণের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তিনি বলেন, এদেশে হয় মূর্তি থাকবে না হয় মুসলমানরা থাকবে। মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী বলেন, মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু আওয়ামী লীগের সম্পদ নয়; শেখ মুজিবুর রহমান গোটা জাতির সম্পদ। তাঁর নাম ব্যবহার করে মূর্তি নির্মাণ মুসলমানরা মেনে নিবে না। মূর্তি বানাতে হলে মন্দিরে গিয়ে বানান। মুফতি আশরাফ আলী নূরী বলেন, ওলামায়ে কেরাম ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা প্রধানমন্ত্রীকে সুপরামর্শ দেয়ার জন্য রাজপথে নামছেন। বঙ্গবন্ধুর রূহ কষ্ট পাক এটা কেউ চায় না। মূর্তি নির্মিত হলে গুণায় জারিয়া হবে। এ থেকে আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।