Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যৌতুক একটি সামাজিক অপরাধ

মিনহাজুল ইসলাম বকসী | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বিবাহ মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ঈমান পূর্ণতার সহায়ক।

আর নারীর সঙ্গে পুরুষদের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ে হচ্ছে একমাত্র বৈধ, বিধিবদ্ধ, সার্বজনীন এবং পবিত্র মাধ্যম। যার ফলে অপরিচিত দুজন ব্যাক্তির মধ্যে গড়ে ওঠে অকৃত্রিম এক ভালবাসা।অজানা এক অনুভূতি একে অপরকে খুব করে কাছে টানে এবং প্রশান্তিতে ভরে উঠে মানব হৃদয়! কেননা এ সম্পর্কে আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পবিত্র কুরআনের সূরা রুমের ২১ নাম্বার আয়াতে বলেছেন -
“এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আর এক নিদর্শন (হচ্ছে): তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা ওদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতি সৃষ্টি করেছেন; নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন আছে।” কিন্তু যৌতুক প্রথার মতো এক বিষাক্ত ব্যাধি আমাদের সুশৃঙ্খল পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।আমাদের যেখানে প্রশান্তি পাওয়ার কথা সেখানে অশান্তির কালো ছায়ায় ছেয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ, নারী নির্যাতন, হত্যা এবং যৌতুকের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো মহাপাপের মধ্যেও আমরা জড়িয়ে পরতেছি। যারফলে আমাদের দুনিয়া বরবাদের সাথে আখিরাতেও নিজের অবস্থান জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছি। অথচ একটা মেয়ে বিয়ের আগে সম্পূর্ণ আলাদা একটি পরিবেশে বেড়ে উঠে। বিয়ের পরবর্তীতে সে তার হাশি-খুশি, রাগ-অভিমানসহ সকল চাহিদা উপেক্ষা করে অচেনা একটা জায়গায়, অজানা কিছু মানুষের সঙ্গে নিজের সবচেয়ে প্রিয় আপনজনদেরকে ছেড়ে এসে, জীবন পরিচালনার সংগ্রমে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়।আর সারাজীবনই সেই সংগ্রামের উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রাখে!
তবে আপনজনগুলো তাদের প্রিয়দের বিচ্ছেদ বিরহের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকে না, তাই তাদেরকে লুকোচুরি করে চোখের পানি মুছতে হয়। আমরা নিজেরাও এর ভুক্তভোগী কিন্তু অতিরিক্ত লোভ এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে যৌতুকের মতো একটি সামাজিক ব্যাধিকে উপেক্ষা করতে পারতেছি না।
আমাদের বিবেক কি একটুও নাড়া দেয় না! আমরাই যখন আমাদের মেয়েদেরকে বিয়ের বন্দবস্ত করতেছিলাম তখন আমাদের অবস্থাটা কি হয়েছিল, আমরা কতটুকু পেরেশানির মধ্যে ছিলাম, তা কি একটি বারের জন্যেও আমাদের মনে পড়ে না!
যদি মনে পড়ে থাকে তাহলে আমরা যাদেরকে আজ যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছি তাদের অবস্থা কেমন হবে একটু ভেবে দেখেছি কি?
অথচ দিন শেষে আমরাই নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবি করি।মুসলমান হিসেবে বিবাহের ক্ষেত্রে আমাদের করনীয় কি সেটাই আমাদের কাছে অজানা! ইসলামে যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধির কোন স্থান নেই।ইসলামে যেটা আছে সেটা হলো মোহর। ইসলাম নারীকে আর্থিক সামর্থ্য দানের লক্ষ্যে এবং তার সম্ভ্রমকে সম্মান জানানোর জন্য মোহর নির্ধারিত করে দিয়েছে।আর এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ৪ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, “আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করো...।”
অথচ প্রচলিত যৌতুক প্রথার ক্ষেত্রে দেখা যায়, মোহরের স্থলে উল্টা কন্যাপক্ষকে স্বামীর অবৈধ আবদারের অর্থ ও সম্পদ পরিশোধ করতে হয়। ইসলাম এ অন্যায়কে অনুমোদন করে না।যেহেতু যৌতুক একটি জুলুম তাই ইসলাম যৌতুক প্রথাকে সম্পূর্ণ হারাম করেছে।
তাই আমাদের উচিত হবে নিজেদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধিকে সমাজ থেকে নির্মূল করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা।আর তারজন্য প্রয়োজন আত্মসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় নৈতিক শিক্ষা অর্জন করা।তবে কেবলমাত্র নৈতিক শিক্ষা অর্জন করেই বসে থাকলে চলবে না বরং সেই শিক্ষার আলোকে নিজের জীবন পরিচালনা করতে হবে।আর যৌতুক প্রথা যে একটা সামাজিক অপরাধ সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।সর্বোপরি যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সরকার যে সকল আইন এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।তবেই আশা করা যায় আমাদের সমাজটা একটা যৌতুক মুক্ত সমাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যৌতুক


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ