Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পুরান ঢাকায় এখনো বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম

| প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

এক দশক আগে পুরান ঢাকার নিমতলিতে রাসায়নিকের গুদামে অগ্নিকান্ডে শতাধিক মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। লেলিহান আগুনে প্রিয়জনের দেহগুলো অঙ্গার হয়ে যেতে দেখেছেন পুরান ঢাকার মানুষ। সেই ভয়াবহ স্মৃতি এখনো অনেককে তাড়িয়ে বেড়ায়। নিমতলি অগ্নিকান্ডের উৎস ও কারণ খুঁজে বের করতে সময় লাগেনি। সিটি কর্পোরেশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবেই শহরের ঘিঞ্জি এলাকা থেকে দাহ্য কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাদের সে সময়ের কঠোর অবস্থান ও প্রত্যয় থেকে মনে হয়েছিল, হয়তো শীঘ্রই পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদামগুলো সরিয়ে কেরানিগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী ১০ বছরেও এ ব্যাপারে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা নির্দেশনা জারি করেই খালাস। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও তদারকিতে যেন তাদের কোনো দায় নেই। গত বছর ফেব্রæয়ারিতে চুড়িহাট্টায় আবারো ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৭৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১০ সালের অগ্নি দুর্ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু এবং কেমিক্যাল গুদাম কেরানিগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টা যেন ধামাচাপাই পড়ে যাচ্ছিল। চুড়িহাট্টা দুর্ঘটনার পর সরকারের সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ে। এরপর সবকিছু আবার হিমঘরে ঢুকে যায়। এভাবেই চলছে সবকিছু। জনপ্রত্যাশা ও জননিরাপত্তার ইস্যুগুলো উপেক্ষিত হওয়ায় বার বার ঘটছে দুর্ঘটনা ও অপমৃত্যুর ঘটনা।

নিমতলি দুর্ঘটনার পর ঢকিা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন পুরান ঢাকার কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রাখলেও ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল ব্যবসা এবং এ এলাকায় গুদামজাতকরণ কখনো বন্ধ হয়নি। নিমতলি ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকান্ডের পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি যেসব নির্দেশনা জারি করেছিলেন তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এখন লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলছে কেমিক্যাল ব্যবসায়। গতকাল একটি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, পুরান ঢাকায় চার হাজারের বেশি রাসায়নিক গুদাম, কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থাকলেও এদের অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানেরই কোনো ট্রেড লাইসেন্স ছিল না। সরকারি নির্দেশনায় ডিএসসিসি ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রাখায় এখন পুরো বাণিজ্যিক ও বিপণন প্রক্রিয়াটি চলছে অবৈধভাবে। আগে কারখানা ও গুদামের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলানো থাকলেও এখন লাইসেন্স বিহীন গুদাম ও কারখানাগুলোর সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা যায়। এর মানে হচ্ছে, কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেয়ার সরকারি নির্দেশনা বলবৎ থাকলেও তা বাস্তবায়ন ও তদারকির কোনো উদ্যোগ নেই।

গত এক দশকে দুটি বড় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দুই শতাতিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া প্রায়শ ছোটখাট দুর্ঘটনা ও অগ্নিকান্ডে বছরে আরো কত সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটে তার সঠিক হিসাব আমাদের জানা নেই। সেই সাথে অপরিকল্পিত এবং অনিরাপদ প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার কেমিক্যাল গুদাম ও কারখানাগুলো পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব সৃষ্টি করছে তার সঠিক তথ্য-উপাত্ত নেই। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য নদীর পানি, বাতাস, মাটি ও জনস্বাস্থ্যের উপর যেসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বিশাল। বুড়িগঙ্গা নদীর পানিকে ভয়াবহ দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে দুই দশকেরও বেশি আগে হাজারীবাগের টেনারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দুই দশক ধরে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে হাজারীবাগ থেকে টেনারিশিল্প সরানো গেলেও এখন নতুন টেনারিশিল্প এলাকার আশপাশে নদী ও জলাভূমিতে চামড়াশিল্প বর্জ্যরে ভয়াবহ দূষণের শিকার হওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক পয়োশোধনাগার নির্মাণ করেও দূষণ ঠেকাতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এখন পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানাগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে হবে। কেরানিগঞ্জের নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তর করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সাথে সাথে দাহ্য, ঝুঁকিপূর্ণ, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় অপচয়ের শামিল হতে পারে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গুদাম

১৭ জুলাই, ২০২১
১ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন