পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুরান ঢাকার নিমতলী, চুড়িহাট্টার আগুনে দুই শতাধিক প্রাণহানি হয়েছিল। ছোট বড় সব আগুনেই প্রাণহানির আশঙ্কায় থাকেন পুরান ঢাকার বাসিন্দারা। এখান থেকে রাসায়নিক গুদাম ও পলিথিন কারখানা সরিয়ে নিতে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলছে আলোচনা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব গুদাম বা কারখানা স্থানান্তর প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। ফলে আবাসিক ভবনে রাসায়নিক দোকান এবং গুদাম বা কারখানা থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে মানুষের প্রাণহানি ঘটেই চলছে। তবে সবশেষ গত শনিবার দিবাগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে পুরান ঢাকায় পলিথিনের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার দেওয়ান আজাদ বলেন, রাত সাড়ে ১১টায় পুরান ঢাকার মাহুতটুলীর চারতলা ভবনের নিচতলায় পলিথিনের কারখানায় আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে চার ইউনিট ও পরবর্তীতে আরো আট ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। কারখানাটি পলিথিনের গোডাউন থাকায় আগুন দ্রুত ছড়ানোর সম্ভবনা ছিল এবং আশেপাশে বসতবাড়ি থাকার কারণে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে ইউনিট বাড়ানো হয়। তবে রাত ১২টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে, আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে একজন ভলান্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবক) আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী করিমুল্লাহ ও আকবর আলীসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী ও ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়েছেন ১৯৫ জন। পুড়ে অঙ্গার হওয়া মানুষের হৃদয়বিদারক ছবি তখন পুরো দেশকেই কাঁদিয়েছিল। এতে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম নিয়ে। প্রথম ঘটনার পরই সরকার দ্রুত এসব রাসায়নিক গুদাম সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয় ঘটনার পর সরানোর কাজে তাগাদা দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রথম দফায় ঘোষণার প্রায় এক যুগ হতে চললেও তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
সরেজমিনে পুরান ঢাকায় গিয়ে দেখা যায়, বহাল তবিয়তে রয়েছে ছোট-বড় এসব রাসায়নিক গুদাম। বেশ কিছু বাড়িতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে পলিথিন কারখানা। নামে-বেনামে বা সাইনবোর্ড সরিয়ে রেখে আগের মতোই চলছে রাসায়নিকের ব্যবসা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানকার কারখানা সরিয়ে নিতে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে রাসায়নিক শিল্পপার্ক স্থাপনের কাজ চলছে, যা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হতে পারে। শিল্পপার্কটি হলে গুদামগুলো স্থায়ীভাবে পুরান ঢাকা থেকে সরানো যাবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলী দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই রাসায়নিক গুদাম-কারখানা স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দেয়। গুদামগুলোর পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। এতে বন্ধ ছিল গুদামগুলোর কাজ। কিন্তু কিছুদিন পরই আগের অবস্থায় ফিরে যায় এসব রাসায়নিক গুদাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, পুরান ঢাকায় দেড় হাজারেরও বেশি রাসায়নিকের দোকান এবং গুদাম রয়েছে। বেশ কিছু পলিথিনের অবৈধ কারখানাও রয়েছে। ২০১০ সালে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের ব্যবসা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে সরিয়ে নিতে রাসায়নিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই প্রকল্প চূড়ান্ত করতে লেগে যায় এগার বছর। এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর দ্রুত রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তরে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তখন অস্থায়ীভাবে রাজধানীর শ্যামপুরে উজালা ম্যাচ কারখানা ও গাজীপুরের টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এসব রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু এখনো স্থানান্তর হয়নি।
আরমানিটোলার আরমানিয়ান স্ট্রিটের বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, আরমানিটোলায় এমন আরো অনেক আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে রাসায়নিক পদার্থের দোকান এবং গুদাম রয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন কিংবা অন্যান্য সরকারি সংস্থার এসবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান করে না। ফলে কিছু দিন পরপরই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে পুরান ঢাকা থেকে এসব রাসায়নিক পদার্থের গুদাম সরিয়ে নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার স্থানীয় এক ফার্মেসি দোকানদার বলেন, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গুদামে পাউডারজাতীয় রাসায়নিক রয়েছে। বস্তায় করে রাখা আছে এসব রাসায়নিক পদার্থ। যখন মালামাল আনা-নেয়া করা হয় তখন ঝড় হলে যেমন ধুলা হয়, তেমন অবস্থা দেখা যায় পুরো গলিতে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি কখন অ্যাকসিডেন্ট হয়। যখন ধুলার মতো ওড়ে তখন মনে হয়, হালকা আগুনের স্পর্শ পেলেই দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। শত শত রাসায়নিকের বস্তা ও ড্রাম সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা রাসায়নিকের ড্রাম তুলছেন। কেউ গুদাম থেকে পাউডারজাতীয় রাসায়নিকের বস্তা মাথায় নিয়ে ট্রাক, পিকআপ বা ঠেলাগাড়িতে রাখছেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া ২০১০ সালে নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে দেয়া বিশেষজ্ঞ মতামতে দ্রুত অতিদাহ্য রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা সরানোর সুপারিশ করেছিলেন। সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমে যাবে উল্লেখ করে তিনি তখন বলেছিলেন, মূল বিষয় গুদাম ও কারখানা সরানো। সেটি হয়নি। নিমতলীর পর রাসায়নিক সরিয়ে নিলে চুড়িহাট্টার আগুনে এত প্রাণহানি হতো না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।