পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ফ্রান্সে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবেলার অজুহাতে সেদেশে মুসলমানদের ওপর চাপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ফ্রান্সের মসজিদ ও ইসলামিক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের গোড়ার দিক থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৩টি মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। ফ্রান্স সরকার উগ্রপন্থী তৎপরতার অভিযোগ এনে ২৩১ জন বিদেশি নাগরিককে দেশ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদের মধ্যে ১৮০ কারাবন্দি রয়েছেন। ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিম স¤প্রদায় ও দেশটির সরকারের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই পদক্ষেপের ঘোষণা এসেছে। ফ্রান্সজুড়ে চলছে মুসলিম সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ও বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের হামলা ও কঠোর সব পদক্ষেপ।
২০১৫ সালে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র ছাপানোর পর ফ্রান্সের বিতর্কিত ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদোতে হামলার ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সেই ব্যঙ্গচিত্র ক্লাসে প্রদর্শনের পর এক শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজধানী প্যারিসের বাইরে একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফরাসি সরকার অভিযান শুরু করেছে এবং ফ্রান্সের একাধিক মসজিদে প্রতিক্রিয়াশীলরা হামলা চালিয়েছে। প্যারিসে হিজাব পরিহিত দুই মুসলিম নারী ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ ইসলাম ধর্মের প্রতি চরম অপমানজনক বক্তব্য দিয়েছেন। মহানবী (সা.) এর ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শনকে তিনি এমন সময় বাকস্বাধীনতা বলে দাবি করলেন যখন আন্তর্জাতিক আইন ও বাকস্বাধীনতার ব্যাখ্যায় কোনো ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ও ফরাসি সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে মহানবী (সা.) এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার পরিবর্তে উল্টো বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে অপরাধীদের সমর্থন দেয়ায় ইসলামবিদ্বেষীরা আরো বেশি উৎসাহী হচ্ছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের ‘ইসলামপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদ’ বিরোধী লড়াইয়ের ঘোষণার পরে ফ্রান্সজুড়ে অভিযান চলছে।
ফ্রান্সে ২০১১ সালে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় চলাফেরা করার সময় নারীদের ওড়না বা মুখোশ পরা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় নিন্দা জানিয়েছিল সারা বিশ্বের মুসলমানরা। কে জানতো ফ্রান্সের জন্য প্রকৃতির নিদারুণ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছিলো! করোনাকালে সে ফ্রান্সেই এবার মুখোশ না পরে বা মুখ না ঢেকে চলাফেরা করলেই ১৫০ ইউরো জরিমানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে নিজেদের জাহির করলেও দেশটির বিভিন্ন কর্মকান্ড মুসলিমদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে শার্লি এবদোর বিতর্কিত ব্যঙ্গচিত্র বন্ধের ব্যবস্থা না করে বরং তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এবার ফ্রান্সের সরকারি বহুতল ভবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে শার্লি এবদোর সেই বিতর্কিত ১২টি কার্টুন প্রদর্শন করা হয়েছে। বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে এই ধৃষ্টতা বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। বাকস্বাধীনতার মুখোশের আড়ালে ফ্রান্সের চরম ইসলাম বিদ্বেষের ফলে মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে বিশ্বমুসলিম। ফ্রান্সের সব ধরনের পণ্য বর্জন শুরু করেছে বিভিন্ন মুসলিম দেশ।
ফ্রান্সসহ বিশ্বের যেসব দেশ ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে এ জাতীয় ধৃষ্টতা প্রদর্শন করছে, এতে তাদের দীনতা, অজ্ঞতা ও অসহায়ত্বই প্রকাশ পায়। যুগে যুগে এসব দেশ ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলছে। ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো মুসলিম উম্মাহকে বিপথগামী করতে, তাদের মনোবলকে ভেঙে দিতে অব্যাহত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসলাম, কুরআন ও বিশ্বনবীর আদর্শ চিরন্তন সত্য। ইসলামের উদ্দেশ্য ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি। ইসলামের লক্ষ্য হলো সমাজে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। ইসলামি বিধিবিধানের মূল লক্ষ্য মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা এবং যাবতীয় অকল্যাণ ও ক্ষতিকর দিক থেকে মানবসমাজকে রক্ষা করা। যে কোনো সংকটের শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানকে গুরুত্ব দেয় ইসলাম। ইসলাম শত্রæর সঙ্গেও ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে আল-কোরআনে বলা হয়েছে: ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে; কোনো স¤প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদিগকে যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। সুবিচার করবে, ইহা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে। তোমরা যা করো, নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।’ (সূরা-৫ মায়িদাহ, আয়াত: ৮) । রাসুলুল্লাহ (সা.) পরম শত্রুর সঙ্গেও ভালো আচরণ করেছেন। ফ্রান্স ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ালেও মুসলিম বিশ্ব ইসলাম ও নবীর আদর্শবলে এখনো ধৈর্য ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। ফ্রান্সকে এমন নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। মুসলমানদের এমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে ফ্রান্স যদি দুর্বলতা ভাবে তাহলে তা হবে চরম ভুল। তাঁদের জানা উচিত, আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবিব মুহাম্মদ (সা.) এর জন্য বিশ্বমুসলিম যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ফ্রান্স যদি নিজেদের ভুল শুধরাতে না পারে, যদি ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকান্ড লাগামহীনভাবে চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে চূড়ান্ত পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে ফ্রান্স। তার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন পরিণতি। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আত তাওবা: ৬১)।
লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।