Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের খুব কম ক্ষেত্রই রয়েছে যেখানে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। এ থেকে বিচারাঙ্গণও মুক্ত নয়। পর্যাপ্ত অর্থ খরচ করতে না পারলে অনেক সময় আদালতের সহযোগিতা পাওয়া যায় না বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠে। উচ্চ আদালতকেও এ নিয়ে পরামর্শ ও পর্যবেক্ষণ দিতে দেখা যায়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হওয়ার জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে নোটিশ দিয়েছিল, তা চ্যালেঞ্জ করা রিটের শুনানির সময় উচ্চ আদালত বলেছেন, বিচার অঙ্গনে দুর্নীতি নির্মূলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আরো সক্রিয় হওয়া উচিত। আদালতের এ মন্তব্য থেকে বিচার অঙ্গণের স্বচ্ছতার অভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তারা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। আইন সব সময় সব জায়গায় প্রয়োগ হয় না বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা ক্ষমতার বলয়ে থাকাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রবণতা থেকে বোঝা যায়। এ পরিস্থিতিতে দরিদ্র মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে হলে প্রথমেই বিচারাঙ্গণ তথা সমগ্র বিচারব্যবস্থাকে পুরোপুরি দুর্নীতি মুক্ত করার বিকল্প নেই। অন্যথায় সমাজের কোথাও ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। যেখানে নিম্ন আদালতের পিয়ন-আর্দালি, উকিল-পেশকার, ম্যাজিস্ট্রেট থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতের বেঞ্চ অফিসার, এটর্নি-বিচারপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা যায়, সেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।

বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি নিমূর্লে দুদককে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার যে নির্দেশনা উচ্চ আদালত দিয়েছেন, তাতে বিচারাঙ্গণের দুর্নীতি হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। এর মাধ্যমে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটাও উঠে এসেছে। এটা কল্পনাও করা যায় না দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে একজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল অভিযুক্ত হবেন এবং তার বিরুদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ জারি করা হবে। আইনের লোক হয়ে যখন বেআইনি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনে লিপ্ত হয়, তখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বহুদিন ধরেই নিম্ন আদালতের বিচারব্যবস্থায় সরকারি হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণ বিচারিক নিরপেক্ষতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে অন্যতম অন্তরায় হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। কিন্তু বিচারবিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে উচ্চ আদালত বহুলাংশে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও দুর্নীতিগ্রস্ত বেঞ্চ অফিসার, এটর্নি অফিস এবং বিচারপতিদের অনিরপেক্ষতায় তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এর ফলে রাষ্ট্র ও সমাজে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায় হয়ে উঠে। বলা বাহুল্য, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে সর্বাগ্রে বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি নির্মূলের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ ও পক্ষপাতের কোনো সুযোগ নেই।

ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিচারাঙ্গণের অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট যখন দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশা দেন, তখন দুর্নীতি দমন কমিশনকেও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ আসতে পারে। একদিকে আদালতের বেঞ্চ অফিসার, সরকারি বেসরকারি এটর্নি থেকে শুরু করে বিচারপতি পর্যন্ত যখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে দুর্নীতিদমন কমিশন এবং বিচারাঙ্গণকে দুর্নীতিমুক্ত করা অপরিহার্য। সাবেক এটর্নি জেনারেল বিভিন্ন সময়ে নতুন প্রধান বিচারপতিদের নিয়োগ পরবর্তী সম্বর্ধনায় বিচারবিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রধান বিচারপতিদের কাছে রিপোর্ট করার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসানের কাছে বিচারাঙ্গণের দুর্নীতি নিয়ে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল, তাতে বিচার বিভাগের অবক্ষয় এবং বিচারবিভাগে দুর্নীতির অভিযোগের ফাইল গায়েব করা, পেশাগত অসদাচরণ, বেঞ্চ অফিসার নির্ভর বিচারপতি, জালজালিয়াতি, বেঞ্চ অফিসার ও বিচারপতিদের দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের কোনো সুরাহা এখনো হয়নি। এখন হাইকোর্ট একজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের দুর্নীতির অভিযোগ নিস্পত্তিতে দুদকের নোটিশের বৈধতা নিশ্চিত করে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও বিচারাঙ্গনের সামগ্রিক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা নির্মূলে দুদক, উচ্চ আদালত এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সামাজিক অবক্ষয়, প্রভাবশালী মহলের সর্বময় কর্তৃত্ব খর্ব করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচারাঙ্গনের দুর্নীতি নির্মূলের কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই।

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ৫ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৭ পিএম says : 0
    In Islam Justice is free, you don't need a single taka to spend. Equality and Islamic Law Islamic law considers the human rights that are due to each and every individual by virtue of his human nature obligatory necessities. Food, clothes, accommodations, security, intellectual freedom, freedom of religion and expression, science, education, participation in the formulation of the society’s public system, monitoring and taking those in authority to account, fighting weak and oppressive regimes and fighting immorality and corruption are all societal exigencies that must be granted to the inhabitants of a state. In turn, individuals must demand these rights and are deemed blameworthy if they relinquish or neglect to achieve them for each and every person. In the monotheistic creed of Islam, all are servants of One God and share the same status before Him by virtue of their common origin. This is expressed in the Qur`an by the words, “O mankind! Fear your Guardian Lord, Who created you from a single person, created out of it, his mate, and from then twain scattered (like seeds) countless men and women [4, 1]. In his Tafsir (3/565) Al-Tabari explained that God describes Himself as the sole Creator of all man from a single person. By this, He reminds His servants of their common origin since they are all the descendants of one man and one woman. The rights of some upon others is a duty that is tantamount to the right of a person upon his brother. The protection that is considered a right upon one to another due to distant kinship and affiliation is as obligatory as the protection that is considered a right upon one to another due to close kinship and affiliation. Man is thus instructed to observe justice at all times and the weak shall enjoy their right to protection from the strong in conformity to Allah’s will.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন