Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাঁধের ওপর মানবেতর জীবন

ঘাঘটের ভাঙনের শিকার শতাধিক পরিবার

আবেদুল রহমান স্বপন ও জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ঘাঘট নদীর তীরবর্তী শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি নদী গ্রাস করে ফেলেছে। সে সব পরিবারের লোকজন এখন নদী রক্ষা বাঁধ এবং বিভিন্ন রাস্তায় মানবেতরভাবে বসবাস করছে। তাদের অনেকেরই বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। বেশির ভাগ লোকজনই খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
স্থায়ী মাথা গোজার ঠাঁই এবং তাদের ঘড়বাড়ি নেই। ছেলে মেয়ে নিয়ে গাদাগাদি করে কোন রকমে একই ঘরে রাত কাটাচ্ছেন। অতিবৃষ্টি এবং উজানের পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে একাধিকবার বন্যায় নদী ভাঙন দেখা দেয়। পানি কমতে থাকলে ভাঙন আরও বেড়ে যায়। নদীর কোলঘেষা ওইসব পৈত্রিক ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে নদী পারের ওই মানুষ। এ সময় কাজ না থাকায় অনেকে বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের ঠিকমত খাবার জোগার করতে হিমশিম হয়ে পড়েছে।
এদিকে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর, নলডাঙ্গা, রসুলপুর, জামালপুর, দামোদরপুর, কামারপাড়া মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে ঘাঘট নদী। নদী বেষ্টিত পারের শতাধিক লোক গৃহহীন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের কাছে কোন সাহায্য-সহযোগিতা এখন পর্যন্ত নেই। তাদের পরিবার নিয়ে টিনের ছাপরার মধ্যে আতংকে দিন কাটছে।
নলডাঙ্গা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের নদী ভাঙনের শিকার ফুল মিয়ার সঙ্গে কথা বললে জানান, চেয়ারম্যানের কাছে একাধিবার নদী ভাঙনে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার জন্য সহযোগিতা চাই। কিন্ত তার কাছে দুইদিন গেলেও কোন সদোত্তর না পেয়ে ফিরে আসি।
দামোদরপুর ইউনিয়নের জামুডাঙ্গা গ্রামের মৃত ইব্রাহিম রিপুজির ছেলে ফুল মিয়ার ১ বিঘাা জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে পরিবারটি হতাশায় ভুগছে। যেটুকু আবাদি জমি দিয়ে পরিবারের কোন রকমে খাদ্যের যোগান হতো তা এখন ঘাঘটের পেটে। কাউকে অভাবের কথা বলতে পারছেনা তিনি। এছাড়াও কামারপাড়া ইউপির পুরানলক্ষীপুর গ্রামের মৃত গোলজার রহমানের স্ত্রী সত্তরোর্ধ্ব আমিনা বেগমের ঘর নদীতে চলে যায়। সে এখন কোথায় আশ্রয় নিবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না। এছাড়াও ওই গ্রামের হোটেল শ্রমিক আনোয়ারা, রেখার ঘর নদীতে ভেঙে য়ায়। পাশবতী অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে তারা। ভাঙনের শিকার এসব লোকজনের কাছে এখনও কোন জনপ্রতিনিধি তাদের খোঁজ-খবর পর্যন্ত নেয়নি বলে জানান তারা।
কামারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হক মাস্টার জানান, নদী ভাঙন এলাকার মানুষদের এাণ সহযোহিতা করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকৃত গৃহহীনদের নামের তালিকা তৈরি করে সরকারের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ভুলক্রমে কেউ বাদ পরলে তাদের পরবর্তীতে সহযোগিতা করা হবে।
জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মন্ডল জানান, সময় স্বল্পতার কারণে নদী ভাঙন কবলিত এলাকার লোকদের কিছু নাম বাদ পড়েছে। পরবর্তী যে কোন সময় সুযোগ এলে তাদের নাম সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার জন্য পাঠানো হবে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, সাদুল্লাপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘাঘট নদীর তিন থেকে চার জায়গায় লুপ কাটিং করলে দ্রুত ভাঙন বন্ধ হবে। এছাড়াও ভাঙনরোধে বাঁধের কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঁধ

৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৭ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ