পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সন্ত্রাসের সাথে ইসলামকে যুক্ত করা এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে মুসলিম দেশগুলোতে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের ডাকে সংহতি প্রকাশ করা হয় মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র। আর একে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে তুরস্ক ও ফ্রান্সের মধ্যে। মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র অনুমোদনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের নিন্দা জানিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। ওদিকে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পরবর্তী সামিটে তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন ও ‘ইসলাম সঙ্কটময় অবস্থায় আছে’- ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মুসল্লি। সউদী আরবেও এর ঢেউ লেগেছে। ইসলাম ইস্যুতে তেহরানে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে ইরান। আল জাজিরার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তারা ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছেন। এ সময় তারা প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর কুশপুতুল পোড়ান। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেন কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ। ফরাসি দূতাবাসমুখী তাদের বিক্ষোভ এক পর্যায়ে পুলিশি বাধায় থেমে যায়।
উল্লেখ্য, ফরাসি একটি স্কুলে বাক-স্বাধীনতা বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে শিক্ষা দিচ্ছিল ইতিহাসের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি। এ জন্য ১৬ অক্টোবর স্কুলের কাছে দিনের বেলায় তার শিরñেদ করে চেচনিয়া বংশোদ্ভ‚ত এক ফরাসী যুবক। পরে পুলিশ তাকে হত্যা করে। ওই সময় থেকেই এটাকে ইসলামপন্থী সন্ত্রাস আখ্যা দিচ্ছেন ফরাসি কর্মকর্তারা। তারা ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছেন সন্ত্রাস।
এর বিরুদ্ধে প্রথমে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। তারপর নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ইসলাম ইস্যুতে ইমানুয়েল ম্যাখোঁর অবস্থানের জন্য তার মানসিক রোগ চিকিৎসার তাগিদ দেন এরদোগান। সউদী আরব ও ইরানসহ মুসলিম বিশ্বের নেতারা ফ্রান্স এবং ম্যাখোঁর নিন্দা জানিয়ে আসছেন। দেশে দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন ডাক দিয়েছেন মুসল্লিরা।
মালয়েশিয়ার নিন্দা : স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যার পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান শত্রুতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হোসেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য ও প্ররোচণামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ধর্ম হিসেবে ইসলামকে অবমাননা করা হচ্ছে। নীতিগতভাবে আমরা কঠোরভাবে এর নিন্দা জানাই। উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় শতকরা ৬০ ভাগের বেশি মানুষ মুসলিম। এছাড়া এখানে বসবাস করেন বিভিন্ন ধর্ম, জাতির মানুষ। হিশামুদ্দিন বলেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাবে মালয়েশিয়া।
উদ্ভূত সঙ্ঘাত নিরসনের আশা করে যুক্তরাষ্ট্র : যুক্তরাষ্ট্র আশা প্রকাশ করেছে যে, ন্যাটোর মিত্র ফ্রান্স ও তুরস্ক উত্তেজনা নিরসন করবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, মিত্রদের মধ্যে অপ্রয়োজনে সঙ্ঘাত শুধু আমাদের প্রতিপক্ষকেই সুবিধা দেবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র।
আপনি সন্ত্রাসে যুক্ত হতে বাধ্য করছেন মানুষকে : চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ কড়া সমালোচনা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর। বলেছেন, এর মাধ্যমে ম্যাখোঁ মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করে মানুষকে উগ্রবাদী হতে অবদান রাখছেন। কারিদভ তার ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, আপনি মানুষকে সন্ত্রাসে যুক্ত হতে বাধ্য করছেন। মানুষকে এদিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কারণ, তাদের সামনে কোনো বিকল্প রাখেননি। এর মধ্য দিয়ে যুব সমাজের মাথায় আপনি উগ্রবাদ প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন। আপনার নিজের দেশে আপনি নিজেকে জোরালোভাবে সন্ত্রাসের নেতা এবং সন্ত্রাসে উৎসাহকারী হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন।
ফরাসি পণ্য বর্জন, সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র : কাতারের দোকানিরা বলছেন, ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাককে তারা সমর্থন করেন। দেশের একটি সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেট চেইনের উল্লেখ করে জসিম ইব্রাহিম শাহবিক বলেছেন, আল মিরার সিদ্ধান্ত আমি সমর্থন করি। আশাকরি দেশের অন্য কোম্পানিগুলোও এ উদাহরণ অনুসরণ করবে। কারণ, এটাই হলো আমাদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। দোহা’র বাসিন্দা ওমর মোবারক আল আলি বলেন, এ সিদ্ধান্তে জনগণের দৃষ্টি প্রতিফলিত হয়েছে। আশাকরি এ বর্জনের ডাক ফরাসি নেতাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবেন।
ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ : বিক্ষোভ হয়েছে ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের আল-রাম শহরে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর ইসলাম নিয়ে সমালোচনা এবং মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে মুসলিমদের অবমাননার নিন্দা জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে। বিক্ষুব্ধ জনতা হাতে ব্যানার নিয়ে মহানবী (স.)-এর পক্ষ অবলম্বন করে স্লোগান দেন।
ওদিকে ম্যাখোঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে ইরানে নিযুক্ত ফরাসি চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। ‘ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক আছে’- ম্যাখোঁর এমন বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে সউদী আরব। নিন্দা জানিয়েছে মহানবী (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্রের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা জানায় সউদী আরব, তা যেই ঘটাক না কেন। সূত্র : আল-জাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।