পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গত ২১ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় অটোমেশন প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। এতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮.৫ কোটি মানুষের চাকরি যেতে পারে। এমনকি অটোমেশনের কারণে সব কিছুতে এত বেশি পরিবর্তন আসবে যে, কিছু পেশা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজ হারানো শ্রমিকদের নতুন পেশায় প্রবেশের জন্য পুনরায় প্রশিক্ষণ দেওয়া না হলে বৈষম্য বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনা মহামারি বিশ্বজুড়ে বেকারত্বের তীব্র গতি বাড়িয়ে তুলেছে। অবশ্য একই সময়ে রোবটিকস্ ও যন্ত্র তৈরির শিল্পে ৯.৭০ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।’ এর আগে সংস্থাটি বলেছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ কোটি মানুষ বেকার হবে। হ্যাঁ, করোনা মোকাবেলার লক্ষ্যে সৃষ্ট লকডাউনের কারণে প্রায় সব কর্ম বন্ধ হয়ে কোটি কোটি মানুষ বেকার ও দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এছাড়া, বৈশ্বিক মহামন্দা সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য জরুরি কাজসমূহ ঘরে বসে করার কারণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ব্যাপক। অফিস, মিটিং, ব্যাংকিং, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন, তথ্য, ই-কমার্স, সামরিক, সাংবাদিকতা, ইত্যাদি তথা প্রায় সব কর্মেই প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে এখন। অবশ্য প্রযুক্তির ব্যবহার আরও অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বর্তমানে তার ছোঁয়া লেগেছে প্রায় সর্বত্রই। এমনকি প্রার্থনালয়েও রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে। চাঁদেও ৪জি স্থাপন করার জন্য অর্থ দিয়েছে নাসা। এ ব্যাপারে গত ১৮ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশ, ‘নাসা চাঁদে সেলফোনে কথা বলতে ফোর জি নেটওয়ার্ক তৈরিতে ১৪.১১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে নোকিয়াকে। নাসা ২০২৪ সালে চাঁদে অভিযান শুরু করার আগেই সেখানে ফোর জি যোগাযোগ ব্যবস্থা পেতে চায়। সংস্থাটি চাঁদে যে ব্যাপক গবেষণা শুরু করতে যাচ্ছে সে কাজে এধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক দারুণ কাজ দেবে। চাঁদে ২০২৮ সালের মধ্যে ঘাঁটি তৈরি করে নভোচারীরা বাস করতে শুরু করলে বা গবেষণার তথ্য জানিয়ে দিতে ওই মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন বলে জানান নাসার প্রশাসক জিম ব্রাইডেনস্টাইন।’ মোট কথা, জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং তা বিশ্বে ও মহাবিশ্বেও। ফলে মানুষের কর্ম সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। তবুও প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। তাই সংশ্লিষ্ট শিল্পও স¤প্রসারিত হচ্ছে। গত অক্টোবরে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক রোবট ফেডারেশনের বার্ষিক রিপোর্ট মতে, ‘স্মার্ট রোবট উৎপাদন ও অটোমেশনের সাহায্যে বিশ্বের বিভিন্ন কারখানায় রোবটের সংখ্যা ২৭ লাখ ছাড়িয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, বিশ্বে রোবট ইনস্টলেশনের পরিমাণ ৮৫% ছাড়িয়েছে। বিশ্বে ২০১৯ সালে রোবট ইন্সটলেশনের দিক থেকে প্রথম পাঁচটি দেশ হচ্ছে চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানি। প্রযুক্তির অন্যান্য ক্ষেত্রের বৃদ্ধির হারও প্রায় অনুরূপ। উপরন্তু এখন চলছে ৫জির কার্যক্রম। রিসার্চ অ্যানালিস্ট রবার্ট হর্টনের ভাষায়, ‘ফাইভজি এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি, রোবোটিকস ও ইন্টারনেট অব থিংসের মতো বিষয়গুলোকে বাস্তবে রূপ দেয়ার প্রতিশ্রæতি নিয়ে।বর্তমানে বিশ্বে ৫জি-সংক্রান্ত যত পেটেন্ট আছে, তার এক-তৃতীয়াংশই চীনের দখলে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। বর্তমানে ৫জি প্রযুক্তির পেছনে চীনের বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া ও জাপানের সম্মিলিত ব্যয়ের প্রায় সমান। ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০ কোটি ৫জি সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে চীনের। দেশটির প্রাক্কলন অনুযায়ী, ওই সময়ে গোটা বিশ্বে ৫জির মোট সংযোগ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮০ কোটিতে।’ চীনের প্রযুক্তি উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক গত ২২ সেপ্টেম্বর জানান, ‘এ পর্যন্ত চীনে নির্মিত ও চালু হওয়া ৫জি বেসস্টেশনের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। ৫জি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। টার্মিনাল সংযোগের সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়েছে। ৫জি ব্যবহার ইতোমধ্যে শিল্প, চিকিৎসা, মিডিয়া ও পরিবহন ক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়েছে।’ এই অবস্থায় ৫জির মোবাইল সেট তৈরির হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন দেশে। স্টারলিংক স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক কানাডার কিছু অঞ্চলসহ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলে পাওয়া শুরু হয়েছে। সংস্থাটি আরও কয়েক হাজার স্যাটেলাইট পাঠাবে বলে গত ২২ অক্টোবর এক দৈনিকে প্রকাশ। তাই অনুমেয় ভবিষ্যতের ইন্টারনেট হবে স্যাটেলাইট ভিত্তিক।অপরদিকে, চীনে চালু করা হয়েছে ডিসিইপি বা ডিজিটাল কারেন্সি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট। এটা হচ্ছে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের একটি ডিজিটাল সংস্করণ। বিট কয়েনের উদ্ভাবক মি. গুও বলছেন, এই ডিসিইপি একদিন পৃথিবীর সর্বপ্রধান মুদ্রা হয়ে উঠবে। এরূপ আরও অসংখ্য চমকপ্রদ তথ্য আছে প্রযুক্তি নিয়ে। তাই করোনা পরবর্তী মন্দা কেটে গেলেও প্রযুক্তির ব্যবহার কমবে না, বরং বাড়তেই থাকবে। কারণ, যন্ত্রের উৎপাদনশীলতা মানুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি। যেমন: প্রেসে একশ কম্পোজিটর যে কাজ করে, তা একটি কম্পিউটার করতে পারে আরও কম সময়ে। আলাদা প্রুফ দেখার লোকেরও দরকার হয় না। এরূপ ফলাফল প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই। তাই বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ভবিষ্যৎবাণী কম-বেশি সঠিক। অর্থাৎ ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র হচ্ছে, রোবটিক্স ও অটোমেশন তথা আধুনিক প্রযুক্তি। আর এর অগ্রযাত্রা বহাল থাকবে এর চেয়ে বেশি কল্যাণকর নতুন কিছু আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু সেটা সহসাই হবে বলে মনে হয় না। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিই হতে পারে একবিংশ শতকের ‘গ্রেট’। তাই আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন, তৈরি ও ব্যবহারের ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপীই। এতে যে সফল হবে সে উন্নতির শিখরে উঠবে, আর যে ব্যর্থ হবে সে তলিয়ে যাবে অতল গহŸরে। তাই আধুনিক প্রযুক্তিই হচ্ছে বর্তমানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক এই নবতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত?
বাংলাদেশ এই নবতর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য তেমন প্রস্তুত নয়। যেমন: আধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও এ সংক্রান্ত শিল্প এ দেশে নেই। ব্যবহারও নেই একেবারেই।বিশেষ করে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।তবে, অটোমেশনের কিছু ব্যবহার আছে।তাও শুধুমাত্র গার্মেন্টে। এছাড়া, আইটিতে কিছু উন্নতি হয়েছে। দেশে অনেকগুলো আইটি পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে, তার নির্মাণ কাজ সময়মত শেষ হবে কি-না এবং হলেও সেখানে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হবে কি-না তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। দেশে আইটি খাতের উন্নতির প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট। এই ইন্টারনেটের সুবিধা শুধুমাত্র শহর কেন্দ্রিক। আর মোবাইল ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটেছে ব্যাপক। তবে মূল্য অত্যধিক। তাই সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে না। ফলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারছে না। অবশ্য এ জন্য কিছু শিক্ষকও দায়ী। কারণ, তারা আইটিতে দক্ষ নয়। অন্য বিভাগেও প্রায় একই অবস্থা। যার জ্বলন্ত প্রমাণ আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা বন্ধ হয়ে যাওয়া। কারণ, এ কাজটি করতো একটি বিদেশী কোম্পানি। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই কোম্পানি চলে গেছে। রাজস্ব বিভাগের লোকজন এ কাজটি করতে পারছে না। দেশের অন্য কাউকেও এ কাজে সংশ্লিষ্ট করা হয়নি। তাই বন্ধ হয়ে গেছে। একই অবস্থা হয়েছে ব্যবসায়ীদের ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রেও। ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল গত অর্থবছরে।কিন্তু ১১ ডিজিট না ১৩ ডিজিটের নিয়ে ঠেলাঠেলিতে সেটা সফল হয়নি। ১৩ ডিজিট দিয়ে চলতি অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা হয়েছে সীমিত আকারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা সফল হতে পারবে কি-না এবং সফল হলেও সব ব্যবসায়ী এটা ব্যবহার করতে পারবে কি-না তা এখনই বলা দূরহ। এ ক্ষেত্রে সফল হলে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হয়ে রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে অনেক। আউট সোর্সিংয়ের অবস্থাও খুব ভালো নয়। তবে আইটি পণ্য রফতানি কিছু বেড়েছে। উপরন্তু আইটি খাতে দক্ষ লোক তৈরির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাও তেমন নেই। আর আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা তো দূরে থাক, কর্মমুখী শিক্ষা তথা কারিগরি শিক্ষার হার নগণ্য। সরকারের দাবি ১৪%, আর বেসরকারি হিসাবে ৮-১০%। অবশ্য সরকার এ শিক্ষা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ২০৫০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বিশ্বের তৃতীয় ও চতুর্থ অর্থনীতির দেশ জাপান ও জার্মানিতে কারিগরির শিক্ষার হার ৭১% ও ৭৩% এবং তা অনেকদিন থেকেই। তাই দেশ দু’টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংস হওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা এখন অর্থনৈতিক পরাশক্তি। যা’হোক, দেশে যে সামান্য কারিগরি শিক্ষা আছে, তারও মান অত্যন্ত খারাপ। কারণ, বেশিরভাগ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি ও দক্ষ শিক্ষক নেই। বিশেষ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষক ও জনবলের অনেক ঘাটতি আছে। তাই সরকারি ৪৯টি পলিটেকনিক ও ৬৪টি টেকনিক্যাল কলেজের জনবলের ঘাটতি পূরণের জন্য স¤প্রতি ১২,৬০০ জনবলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা ৩ অর্থবছরে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে পত্রিকায় প্রকাশ। এই অবস্থায় সরকার ২০২২ সাল থেকে নবম ও দশম শ্রেণীতে কারিগরির ২টি বিষয় বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কিন্তু সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। কারণ, কারিগরিতে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাবরেটরির অভাব রয়েছে। তাই মাধ্যমিকে আইটি শিক্ষা কার্যক্রম সফল হচ্ছে না। মোট কথা, দেশে প্রযুক্তিতে দক্ষ লোক তেমন নেই। যে যৎসামান্য তৈরি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশে। অর্থাৎ ডিজিটাল কান্ট্রি বলে ঘোষিত দেশে ডিজিটাল রূপান্তরে তেমন অগ্রগতি হয়নি। স¤প্রতি প্রকাশিত ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিটাল কম্পিটিটিভনেসের ডিজিটাল রাইজার রিপোর্ট মতে, ‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ডিজিটাল রূপান্তরে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এখনো পেছনের সারিতেই বাংলাদেশের অবস্থান। ডিজিটাল উত্থানে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। অর্জিত পয়েন্ট মাইনাস ৪৯। এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইএসসিপি বিজনেস স্কুল। প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৪০ দেশের অবস্থান তুলনা করা হয়েছে আঞ্চলিক ভিত্তিতে। এই অবস্থায় দেশে রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন শিল্প চালু করা কি সম্ভব? মোটেও নয়।
কিন্তু নতুন চ্যালেঞ্জ যত কঠিনই হোক, তাতে সফল হতেই হবে। নচেৎ উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখা তো দূরে থাক, টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আধুনিক প্রযুক্তির শিক্ষা দেশে চালু করতেই হবে। সে জন্য দরকার প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ শিক্ষক। বিশেষ ব্যবস্থায় প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষকদের সর্বাধিক বেতন-ভাতা ও সুবিধাদির ব্যবস্থা করা হলেই প্রযুক্তিতে শিক্ষকতা করার লোকের অভাব হবে না। প্রয়োজনে প্রবাসীদের মধ্যে যারা প্রযুক্তিবিদ আছেন, তাদের দেশে এনে শিক্ষকতায় নিয়োগ করতে হবে। তবুও যদি পর্যাপ্ত শিক্ষক পাওয়া না যায়, তাহলে বিদেশিদের নিয়োগ করতে হবে। চট্টগ্রামস্থ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দেশি শিক্ষক পাওয়া না যাওয়ায় বিদেশিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব করতে অর্থের যদি সংকুলান না হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষা হ্রাস করে সে সাশ্রয়ী অর্থ প্রযুক্তির শিক্ষায় ব্যয় করতে হবে। কারণ, সাধারণ শিক্ষায় দেশের তেমন কোন লাভ হচ্ছে না। যা’হোক, প্রযুক্তির শিক্ষায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেই কয়েক বছরের মধ্যেই লাখ লাখ দক্ষ লোক তৈরি হবে প্রযুক্তিতে। তখন প্রযুক্তি সংক্রান্ত শিল্প তৈরি ও কাজে প্রয়োজনীয় লোকের অভাব থাকবে না। অপরদিকে, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নের জন্যও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই স্বল্প সময়ের মধ্যই কয়েক কোটি প্রযুক্তি ও কারিগরিতে দক্ষ লোক তৈরি হবে।তারা কেউ বেকার থাকবে না। কারণ, দেশ-বিদেশের সর্বত্রই এদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সরকার, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বুঝতে হবে, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কর্মমুখী শিক্ষা ছাড়া বর্তমানে দেশ-বিদেশের কোথাও কাজ নেই। তাই সাধারণ শিক্ষার উচ্চতর ডিগ্রীর চেয়ে কর্মমুখি স্বল্প ডিগ্রীর শিক্ষাই মূল্যবান। আর উচ্চতর ডিগ্রী নিতে পারলে সোনায় সোহাগা। এতে চাকরির অভাব নেই। উপরন্তু চাকরি না পেলেও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা হয়ে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করতে পারবে নিঃসন্দেহে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক/কর্তৃপক্ষের বুঝা উচিৎ যে, যুগের সাথে তাল মিলে চলতে না পারলে টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে ডিজিটাল একাডেমি অ্যান্ড সেন্টার অব এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’ সরকারের এ উদ্যোগ কল্যাণকর। তাই সফল হওয়া দরকার। সর্বোপরি কর্মরত ও বেকারদের আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাহলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং বেকারত্ব কিছুটা কমবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।