মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য চীন যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা মোকাবিলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে একসাথে কাজ করতে হবে। গতকাল ভারতীয় নেতাদের সাথে বৈঠকের পরে এই মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
ভারত-চীন তীব্র উত্তেজনার মধ্যেই পম্পেও সোমবার প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপারের সাথে বার্ষিক কৌশলগত সংলাপের জন্য নয়াদিল্লিতে গিয়েছেন। প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা বাড়াতে এই ভারত-আমেরিকা ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের আয়োজন। ভারতের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে পম্পেও বলেন, ‘সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষায় আমেরিকা সব সময় ভারতের পাশে থাকবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের পারস্পারিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসারিত করতে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব।’ এ দিন দিল্লিতে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে গিয়ে গালওয়ানে চীন-ভারত সঙ্ঘাতে নিহত ২০ ভারতীয়ে সেনা জওয়ানকে শ্রদ্ধাও জানান পম্পেও-এসপার।
জয়শঙ্কর-রাজনাথের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও এ দিন বৈঠক করেছেন পম্পেও। সূত্রের খবর, প্রায় ৪০ মিনিটের ওই বৈঠকেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল পূর্ব লাদাখে চীনের সাথে চলমান উত্তেজনা। পম্পেও বলেন, ‘আমাদের নেতা ও জনসাধারণ জানে যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা, উন্নয়ন— এ সবের বন্ধু নয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)। আমি আনন্দিত যে, সিসিপি থেকে সমস্ত রকম বিপদের বিরুদ্ধে আমরা একযোগে কাজ করছি।’ পম্পেও ভারতীয় প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, লাদাখ পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছে আমেরিকা। সীমান্তে সামরিক উত্তাপ মোকাবিলায় ভারতকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। মার্কিন বিদেশ সচিব বলেছেন, চীন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তাই বৈঠকে চীনের মোকাবিলা করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ভারতে আসার আগেই মাইক এসপার বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ বারের বৈঠকে ফোকাস থাকবে চীন। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন আগ্রাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন এসপার। জানিয়েছিলেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে চীনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর রাস্তা তৈরি করা হবে। বস্তুত, এ দিন অজিত ডোভাল এবং দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সে বিষয়েই আলোচনা করেছেন দুই মার্কিন প্রতিনিধি। ভারতের সঙ্গে সামরিক স্যাটেলাইট শেয়ারের চুক্তি করা হয়েছে। যার অর্থ, মার্কিন সামরিক স্যাটেলাইটের ছবি এবং তথ্য ভারতকে জানাবে আমেরিকা। আমেরিকার সঙ্গে যে এই বিশেষ সামরিক চুক্তি ভারতের হতে পারে, সে কথা অনেক আগেই জানিয়েছিল ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের সূত্র। মঙ্গলবার সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। পৃথিবীর খুব কম দেশের সঙ্গেই সামরিক স্যাটেলাইট ইমেজ শেয়ার করে আমেরিকা। এ ছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, অস্ত্র এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম সংক্রান্ত চুক্তিও হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ভারতের সঙ্গে অ্যামেরিকার এই চুক্তিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই নিয়ে তৃতীয়বার টু প্লাস টু বৈঠকে মিলিত হলো ভারত এবং আমেরিকা। ফলে বৈঠকের নিরিখে এটি খুব তাৎপর্যপূর্ণ নয়। বহু আগেই এই বৈঠকের সময় নির্দিষ্ট হয়ে ছিল। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে চীনের সঙ্গে আমেরিকার বিস্তর দূরত্ব তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে এশিয়ায় সীমান্ত নিয়ে ভারতের সঙ্গে চীনের সরাসরি সংঘাত শুরু হয়েছে। চীন এবং পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনকে দিয়ে পাকিস্তান কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়েছে। ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে চীন ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এই পরিস্থিতিতে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে এবং সেই ক‚টনীতিতে খানিকটা সফলও হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে টু প্লাস টু বৈঠক অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। নিয়মমাফিক বৈঠক হলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছে। যে ভাবে চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকা সরব হয়েছে এবং ভারতকে সামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে চীনের ওপরেই পরোক্ষে চাপ তৈরি করা হলো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘এই বৈঠকের ফলে এশিয়া প্যাসিফিকে সামরিক এবং কূটনৈতিক ভাবে ভারত এবং মার্কিন সমঝোতা অনেকটা বৃদ্ধি পেল। এশিয়া প্যাসিফিকে নৌ শক্তিতে চীন অত্যন্ত শক্তিশালী। পিএলএ স্থল সেনার চেয়ে পিএলএ নেভি কয়েক গুণ শক্তিশালী। দক্ষিণ চীন সমুদ্রে সে কারণেই এত আগ্রাসী হতে পারে চীন। জোট বা বøক তৈরি করে অ্যামেরিকা সেখানেই চীনকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করছে।’ সূত্র : ডন, ডয়চে বেলে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।