পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারি সারাবিশ্বের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, দ্রুততম সময়ে সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতার বিষয়টি আগামী দিনের সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও নিরাপত্তার নিয়ামক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে পিছিয়ে পড়লে আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার অনেক ক্ষেত্রই রুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। করোনাভাইরাস পেন্ডেমিকের শুরুতেই যেসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে, তার প্রতিযোগিতায় চীনের একাধিক গবেষণাগার সর্বাগ্রে সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছার ঘোষণা পেন্ডেমিক আক্রান্ত বিশ্বের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ। সম্ভাব্য চীনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির অগ্রাধিকার তালিকায় চীনা কর্তৃপক্ষই বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করেছেন। এমনকি এই করোনার দুর্যোগে চীনা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে এসে পরামর্শ দিয়ে গেছেন এবং করোনা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠিয়ে চীন শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় এগিয়ে রাখার প্রস্তাব নিয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এক ধরনের অস্বচ্ছতা, সিদ্ধান্তহীনতা এবং পিছিয়ে পড়ার বাস্তবতা দেখেছি। এ নিয়ে লেখালেখি, সমালোচনাও কম হয়নি। ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, পেরু ও ব্রাজিলের মতো দেশ সফলভাবে চীনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করলেও কাছের প্রতিবেশী বাংলাদেশ সিদ্ধান্তহীনতার কারণে চীনা ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার প্রাপ্তির সুযোগ হাতছাড়া হতে চলেছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, চীনা কর্তৃপক্ষ ৬০ হাজার করোনা রোগীর উপর সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত সফলতার দাবি করেছে। একাধিক কোম্পানির ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করে ব্রাজিলের পক্ষ থেকেও চীনের সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনকে নিরাপদ বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ভারত ইতোমধ্যে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন উৎপাদনের সাথে অংশীদারিত্ব গ্রহণ করেছে। পাকিস্তানসহ উপমহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ও প্রাপ্তিতে অগ্রগণ্য হওয়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতামূলক অবস্থানে পৌঁছে গেলেও বাংলাদেশের সিদ্ধান্তহীনতা এবং ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনো বিস্ময়কর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতাসহ চীন যখনই বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক জোরদারের কৌশলগত ভূমিকা ও প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে, তখনি ভারতের পক্ষ থেকে একটি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করতে দেখা গেছে। ভারত যেখানে ভ্যাকসিনের জন্য রাশিয়ার কাছে ধর্না দিচ্ছে, তখন তারা বারবার বাংলাদেশকে ভারতীয় ভ্যাকসিন প্রাপ্তির অগ্রাধিকারের ঘোষণা নিয়ে সামনে এসেছে। অর্থাৎ চীনা ভ্যাকসিনের উপর বাংলাদেশের নির্ভরতা থেকে বিরত রাখার কৌশলই যেন এ ক্ষেত্রে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি চক্র যেন চীনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সম্ভাবনা ঠেকিয়ে রেখে প্রকারান্তরে ভারতনির্ভর করে রাখার মাধ্যমে করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা জিঁইয়ে রাখা হচ্ছে।
একটি সফল করোনা ভ্যাকসিন প্রাপ্যতার দিক থেকে যেখানে চীনের সিনোভ্যাক সবচেয়ে এগিয়ে এবং শুরু থেকেই চীনের পক্ষ থেকে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল এবং প্রাপ্তির প্রস্তাব নিয়ে চীনা কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এসেছিল, সেখানে বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তহীনতা দেশকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়ার মত গর্হিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথম, দি¦তীয় এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা ও ট্রায়াল শেষে চীনা ভ্যাকসিন এখন চূড়ান্ত বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট আমলা ও বিশেষজ্ঞরা দেশের দু’টি এবং ভারত ও ফ্রান্সের ভ্যাকসিনের পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়ে আলোচনায় ব্যস্ত বলে জানা যায়। এ কথা এখন সকলেই স্বীকার করবেন, করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা, ট্রায়াল ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের সবচেয়ে কাছাকাছি রয়েছে চীনের সিনোভ্যাক এবং রাশিয়ার গামালিয়া ল্যাবরেটরি। এর পরের ধাপে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কথা উল্লেখ করা যায়। আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করছি, এসব ভ্যাকসিন প্রাপ্তি প্রচেষ্টা থেকেই বিরত রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষত চীনের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা ঠেকিয়ে দিতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক এজেন্ডা সক্রিয় থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনাকালীন দুযোর্গ মোকাবেলার উপর আমাদের আগামী দিনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও উন্নয়নের চালিকাশক্তি অনেকাংশে নির্ভরশীল। যারা বাংলাদেশে সবার আগে চীনা ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা ও প্রতিবন্ধকতার দেয়াল তুলে দিতে চাইছে, তাদের অভিসন্ধি বুঝতে ব্যর্থ হলে দেশের মানুষকে এবং দেশকে অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারে। ভ্যাকসিন প্রাপ্তির দৌড়ে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার যে বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের পথ এখনো হয়তো শেষ হয়ে যায়নি। বাড়তি টাকা খরচ করে হলেও চীনের সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে আসা উচিৎ। এটা নিশ্চিত যে, আগামী বছরের শুরুতে এক বা একাধিক ভ্যাকসিন বাজারে এলেও চলমান আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কারণে তা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিশ্বের সব মানুষের জন্য একযোগে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে পিছিয়ে পড়লে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং উন্নয়নের গতিধারাও পিছিয়ে পড়তে বাধ্য। সরকার ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্তে আসতেই হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।