Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কার বিজয় চায় চীন ও রাশিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ২০২০

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৬ এএম

ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিখ্যাত সেই সেøাগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ অনুসারে ক্রেমলিন কি এবারও চেষ্টা করবে আমেরিকাকে একটি ‘অসাধারণ রাষ্ট্র’ হিসেবে ধরে রাখতে? বেইজিং কি চায় যে এবারের নির্বাচনে জো বাইডেন জয়ী হোক? যুক্তরাষ্ট্রে তেসরা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা, দুই প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের মাথায়। শীর্ষস্থানীয় একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, রাশিয়া, চীন এবং ইরান ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ এমনকি গোপনেও তৎপরতা চালাবে। তবে তারা এই তিনটি দেশের ইচ্ছা ও ক্ষমতাকে একসাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, এসব দেশের নিজস্ব উদ্দেশ্য ও সক্ষমতা রয়েছে। গোয়েন্দাদের এসব সন্দেহ ও পর্যালোচনা এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা অবশ্য স¤প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন: নির্বাচনে রাশিয়ার দিক থেকে যেসব ঝুঁকি রয়েছে সেগুলোকে খুব বেশি গুরুত্ব না দেয়ার জন্য তাকে বলা হয়েছে। নির্বাচনের আর তিন সপ্তাহের মতো বাকি। এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে রাশিয়া ও চীনের ভ‚মিকা সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনা বলেছেন, ‘জো বাইডেনের মানহানি করার জন্য রাশিয়া নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে’। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ও পরে রাশিয়ার ভ‚মিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর কথাবার্তা হয়েছে। এ নিয়ে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে অভিযোগও উঠেছে বিস্তর। মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন গত নির্বাচনে ভোটারদেরকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে নিয়ে যেতে চেষ্টা চালিয়েছে রাশিয়া। এর প্রমাণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন মি. ট্রাম্পের নির্বাচনী টিমের সাথে রুশ কর্মকর্তাদের বৈঠক, হিলারি ক্লিনটন ও ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনী প্রচারণায় সাইবার হামলা, বিভিন্ন রাজ্যের ভোটারদের তথ্যভাÐারে প্রবেশ এবং অনলাইনে এমন সব ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেয়ার কথা যেগুলো নাকি শেষ পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে গেছে। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সিনেটে রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন একটি প্যানেলও এমন মতামত দিয়েছে। রাশিয়া যে গতবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছিল তাদের মতামত এ ধারণাকেই আরো বেশি সমর্থন দিয়েছে। এ প্যানেল বলেছে, মি. ট্রাম্পের প্রচারণায় বিদেশিদের হস্তক্ষেপ খুব সহজ ছিল। তবে এ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় তারা কোন অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র দেখতে পাননি। এবার ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্ব›দ্বী হিলারি ক্লিনটনের জায়গায় জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টারের (এনসিএসসি) পরিচালক উইলিয়াম ইভানিনা তার পর্যালোচনায় বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মানহানি করার জন্য রাশিয়া নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে’। আরো এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর পরিচালক ক্রিস্টোফার রে-এর অভিমত হচ্ছে রাশিয়া কখনোই এই তৎপরতা বন্ধ করেনি। তিনি মনে করেন, ২০১৮ সালের কংগ্রেস নির্বাচনেও রাশিয়া প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছে এবং সেটাকে তারা নিয়েছে ‘২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি মহড়া’ হিসেবে। বিদেশি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ শুরু থেকেই বারবার অস্বীকার করেছে রাশিয়া। এ বছরের আগের দিকে ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আনা মানসিক বৈকল্য এবং এর সাথে সত্যের কোন সম্পর্ক নেই’। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে রাশিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে দেখতে চায় কিনা সেটি একটি প্রশ্ন। কিন্তু তাদের আরেকটি বড় উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা। যেমন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভুয়া খবর ছড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া এ জোটকে মহামারি মোকাবেলার বিষয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। রাশিয়া অবশ্য এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, রাশিয়া যদি হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখে তাহলে ‘এর মূল্য দিতে হবে’। শুধু তাই নয়, রাশিয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিপক্ষ’ বলেও উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, রাশিয়ার হস্তক্ষেপের বিষয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবসময়ই তাকে খাটো করে দেখেছেন। তবে এ বিষয়ে তার নিজের গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞদের সাথেও মাঝে মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকের পর মি. ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি কি মার্কিন গোয়েন্দাদের নাকি মি. পুতিনের দাবি বিশ্বাস করেন? জবাবে মি. ট্রাম্পের উত্তর ছিল: ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন বলছেন রাশিয়া কিছু করেনি। তারা কেন সেটা করবে আমি তার কোন কারণ দেখি না’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য পরে বলেছেন যে তিনি ভুল বলেছিলেন।ট্রাম্প প্রশাসনের প্রখ্যাত ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে রাশিয়া নয় বরং চীনই হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আসল হুমকি। ‘আমি গোয়েন্দা তথ্য দেখেছি। এটাই আমার উপসংহার’, বলেন এটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার। হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভে ইন্টেলিজেন্স কমিটির প্রধান ডেমোক্র্যাট রাজনীতিক অ্যাডাম শিফ অবশ্য এটা মানতে রাজি নন। মি. বারের বিরুদ্ধে তিনি ‘মিথ্যা বলার’ অভিযোগ এনেছেন। মি. ইভানিনা তার পর্যালোচনায় বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দারা বিশ্বাস করেন যে চীন চায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যাতে পুনরায় নির্বাচিত না হন। কারণ বেইজিং-এর কাছে মি. ট্রাম্প ‘নির্ভরযোগ্য’ নন। ‘যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ব্যাপারে চীন তার প্রভাব আরো বিস্তৃত করছে। বেইজিং যাদেরকে চীনা স্বার্থ-বিরোধী বলে মনে করে তাদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে, একই সাথে চীনের সমালোচনারও জবাব দিচ্ছে’, বলেন তিনি। ‘প্রভাব’ শব্দটির ব্যবহার উল্লেখ করার মতো। যদিও অনেকে মনে করেন মতামতকে প্রভাবিত করতে চীনের অনেক সূ² কৌশল রয়েছে। মি. ইভানিনা নিশ্চিত নন যে, চীন এবারের নির্বাচনে ঠিক কতদূর অগ্রসর হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ‘আগ্রাসী তৎপরতা থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য চীন এ ঝুঁকি নেয়া অব্যাহত রাখবে’। সূত্র : বিবিসি বাংলা।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ