Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলমানদের এই দুর্দশা কেন?

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

কয়েক শতক ধরে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিষ্পেষণ চলছে। সা¤প্রতিককালে এসব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলগুলো ক্ষমতায় আসার পর সেখানে মুসলিম বিদ্বেষ বেড়েছে। জোর করে ধর্মান্তরকরণ করেছে অনেক মুসলমানকে। মুসলমানদের কীর্তিগুলো মুছে ফেলা হচ্ছে। ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ স্থলে রামমন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। মুসলমানদের নাগরিকত্বও বাতিল করার প্রক্রিয়া চলছে। সংবিধানভুক্ত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে সেখানে কয়েক লাখ সেনা মোতায়েন করে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। স¤প্রতি এক সাক্ষাতকারে জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘কাশ্মীরীদের সাথে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকদের মতো আচরণ করা হচ্ছে। তাই তারা ভারতের চেয়ে চীনা শাসনে থাকতে রাজি হবে’ সাউথ এশিয়ান মনিটর। করোনার চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। কলকাতায় ১০ জনকে হোটেল থেকে বের করা দেওয়া হয়েছে মুসলমান বলে! মিয়ানমারে মুসলিম নিধন চলছে অনেকদিন যাবত। প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ মুসলমান বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশেও আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে অনেক মুসলমানকে। এসব বর্বরতা এখনও চলছে সেখানে। শ্রীলংকায় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় অনেক মুসলমানের জানমালের ক্ষতি হয়েছে। চীনেও মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে। রাশিয়ার চেচনিয়া ও দাগেস্থানে মুসলিম নির্যাতন চলছে দীর্ঘকাল থেকে। আর ফিলিস্তিনরা তো নিজ আবাসভূমিতেই পরবাসী হয়ে চরম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কাল থেকেই। সা¤প্রতিক সময়ে নির্যাতন আরও বেড়েছে এবং ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকাকে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, সিলওয়ান শহরের কাক্কা বিন আমর মসজিদ ভাঙার আদেশ দিয়েছেন ইসরাইলের আদালত এবং আল-খলিল শহরের ইব্রাহিম (আ.) মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ইউরোপ ও আমেরিকায়ও ইসলাম বিদ্বেষ চলছে অনেকদিন ধরে। সেখানে অনেক দেশে মুসলিম নারীদের পর্দা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুসলমানদের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসব খবরে একজন মুসলমান হিসাবে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। অন্য মুসলমানদেরও তাই হয়। তাই এসবের বিরুদ্ধে অনেকেই লেখালেখি করছেন। আলেম-ওলামারাও এ ব্যাপারে ব্যাপক সোচ্চার হয়েছেন। তারা অনবরতই এসবের চরম নিন্দা জানিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন।

মুসলমানদের দ্বারা মুসলমানের ক্ষতির পরিমাণও কম নয়, বরং ব্যাপক। লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে কয়েক বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে। জাতিসংঘ চেষ্টা করেও তা বন্ধ করতে পারছে না। এসব যুদ্ধে এ পর্যন্ত কয়েক লাখ নিরীহ ও নিরস্ত্র মুসলমান নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বাড়ি-ঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে কয়েক কোটি নিরীহ মুসলমান। তন্মধ্যে বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়েছে প্রায় ২ কোটি। এরা সকলেই চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকার! সর্বোপরি এসব যুদ্ধ যদি এখনই বন্ধ হয়, তবুও এ পর্যন্ত দেশগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। বিষয়টি খুবই ব্যয়বহুলও। তাই তাদের একার পক্ষে এসব করা সম্ভব নয়। তথাপিও সহসাই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই। ভয়াবহ যুদ্ধ যত প্রলম্বিত হবে, ক্ষতির পরিমাণ তত বাড়বে। একনায়কত্ব অবসানোত্তর নেতৃত্বের শূন্যতার কারণে গোষ্ঠিগত, গোত্রগত ক্ষমতার দ্ব›দ্ব এবং শক্তিশালী দেশগুলোর স্বার্থের প্রচÐ দ্ব›দ্ব থেকেই যুদ্ধের সৃষ্টি। অথচ এ দেশগুলোতে যদি গণতন্ত্র থাকতো, তাহলে এই করুণ অবস্থা সৃষ্টি হতো না। চরম দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ৫৭টি মুসলিম দেশের মধ্যে বেশিরভাগেই গণতন্ত্র নেই। রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্রই এই দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক এবং তা বহুকাল যাবত বিদ্যমান। সর্বোপরি যে কয়েকটি দেশে গণতন্ত্র আছে, তারও অধিকাংশে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই, আছে মেকি গণতন্ত্র। কিন্তু গণতন্ত্র না থাকলে যা হবার তাই হচ্ছে। ক্ষমতার চরম দ্ব›দ্ব চলছে। এমনকি তা কোথাও কোথাও পারিবারিকভাবেও হচ্ছে। প্রতিদ্ব›দ্বী আপনজনদেরও হত্যা, নির্যাতন, জেল ইত্যাদি চলছে। বাক স্বাধীনতা, মিডিয়া ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই বেশিরভাগ মুসলিম দেশে। স¤প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এক সংস্থার প্রতিবেদন মতে, ‘সংবাদপত্র স্বাধীনতাহীন দেশের তালিকায় নি¤œ থেকে ২০টি দেশের মধ্যে ১৩টিই মুসলিম দেশ’!

গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা থাকে না। তাই হয়েছে বেশিরভাগ মুসলিম দেশে। ফলে সেখানে কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে না সাধারণ মানুষের কাছে। কারণ, ক্ষমতাসীনরা তাদের সমর্থনে ক্ষমতাসীন হয়নি। তারা ক্ষমতাসীন হয়েছেন কতিপয় ক্ষমতাশীল অমুসলিম দেশের সমর্থনে। তাই তাদের স্বার্থ রক্ষা করাই তাদের প্রধান কর্ম। ফলে দেশের মানুষের স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে ! দ্বিতীয়ত: উন্নয়নমূলক কর্মে জনগণের তেমন অংশগ্রহণ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই সব জান্তা, সব কিছুর কর্তা, যাকে বলে ‘দ্য অথরিটি অব এভরিথিং’। সারাক্ষণ প্রচার হয় উন্নতির কল্পকাহিনী। অনুগত ও ভাড়গুলোও কোরাস করে সার্বক্ষণিক! কিন্তু সে উন্নতির চিচিং ফাঁক হয়ে পড়েছে করোনা মহামারিতে। অনেক মুসলিম দেশে বহু মানুষ বিনা চিকিৎসা মারা গেছে !

প্রিয় নবী করিম (সা.) জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন যেতে হলেও যাওয়ার জন্য তাকিদ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন শরীফেও বলা হয়েছে, ‘মূর্খ লোকের সারারাত ইবাদতের চেয়ে জ্ঞানী লোকের ঘুম উত্তম’। তবুও চরম দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মুসলমানদের বেশিরভাগই সুদূর চীন যাওয়া তো দূরে থাক, বাড়ির কাছের স্কুলেও যায় না। তাই মুসলমানদের শিক্ষার হার সর্বনি¤œ। মুসলিমদের শিক্ষায় বিভাজনও অনেক। বর্তমান যুগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক ব্যবহৃত ভাষা ইংরেজি, সেটা তেমন জানেন না বেশিরভাগ মুসলমান। বর্তমানের প্রধান কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা, তা থেকেও দূরে রয়েছে তারা। সর্বোপরি মুসলিম দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় তেমন নেই। ‘কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংস-২০২১’ মতে, এক হাজারের মধ্যে মুসলিম দেশের মাত্র ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশের ২টি, পাকিস্তানের ৩টি, মালয়েশিয়ার ২০টি, সৌদি আরবের ১০টি, ইরানের ৫টি। তালিকায় জার্মানির ৪৫টি, চীনের ৫১টি, জাপানের ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। বিশ্বমানের গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের অবস্থা তথৈবচ। তাই করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা করোনার উৎপত্তি, জীবন রহস্য ইত্যাদি উদঘাটন এবং এর টিকা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা করছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে মুসলমান বিজ্ঞানী ও মুসলিম দেশের তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। তাদের সেই যোগ্যতা ও সামর্থ্য নেই। সর্বোপরি আজকের প্রচারণার যুগেও মুসলমানদের বিশ্বমানের তেমন মিডিয়া নেই। সবে ধন নীলমণি আল জাজিরা। তার সাথে সম্পৃক্তদের বেশিরভাগও আবার অমুসলিম। সামরিক শক্তিতেও খুবই দুর্বল মুসলিম দেশগুলো। শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিতেও একই অবস্থা। তাই বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ মুসলমান হয়েও বিশ্বে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা নেই। ইসরাইল মুসলমানদের প্রধান শত্রæ হওয়া সত্তে¡ও স¤প্রতি একের পর এক মুসলিম দেশ শান্তি চুক্তি করছে ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়াই। গত ১৩ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও আমিরাতের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শান্তির রূপকল্পের অংশ হিসেবে মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে আল-আকসায় আসেন এবং প্রার্থনা করেন। একইভাবে আল-আকসা এবং জেরুজালেমের অন্যান্য পবিত্র স্থাপনা সব ধর্মের বিশ্বাসীদের শান্তিপূর্ণ প্রার্থনার জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিৎ।’ কিন্তু ইসরাইলের সাথে কতিপয় মুসলিম দেশের সম্পর্কোন্নয়নের প্রতিবাদে ফিলিস্তিন আরব লীগের সভাপতির পদ ত্যাগ করেছে। ইরান, তুরস্ক,পাকিস্তানসহ অনেক মুসলিম দেশ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। এভাবে মুসলিম দেশগুলো বিভক্ত হয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে!

মুসলমানদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে উগ্রবাদী সংগঠন গঠন করে সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালাচ্ছে। যেমন: বোকো হারাম, আল শাবাব, আইএস ইত্যাদি। তারা মানুষ হত্যা, সম্পদ ধ্বংস, নারী নির্যাতন, জোর করে ধর্মান্তরকরণ ইত্যাদি ইসলামবিরোধী কাজ করছে। তাই তারা জঙ্গি বলে খ্যাত হয়েছে। তাদের কারণে মুসলিম জাতির ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। বেশিরভাগ মুসলমান শান্তিপ্রিয়। তাই তারা কোনরূপ উগ্রবাদিতাকে সমর্থন করে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে সরব। তবুও তারা জঙ্গি বলে খ্যাত হচ্ছে বিধর্মীদের কাছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত ব্রাসেলসের পলিটিকাল ক্রিয়েটিভ ফাউন্ডেশনের এক গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন মতে, ‘১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হামলা করার পর থেকে ২০১৯ সালের অগাস্ট পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী যে সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে-এর ৯১.২% হামলার শিকার হয়েছেন মুসলমানরা। উক্ত সময়ে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা সারাবিশ্বে অন্তত ৩৩,৭৬৯টি হামলা চালিয়েছে এবং এতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১,৬৭,০৯৬ জন মানুষ। তাছাড়া, হতাহতের সংখ্যা ১,৫১,৪৩১ জন।’ গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষণা রিপোর্ট মতে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার উপর কথিত সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে মার্কিন সরকার অন্তত আটটি যুদ্ধ শুরু করেছে অথবা অংশ নিয়েছে এবং তাতে ৩.৭০ কোটি মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। মোটামুটি ধারণা থেকে এই সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা ৪.৮০-৫.৯০ কোটি হতে পারে। ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সোমালিয়া, ফিলিপাইন, লিবিয়া ও সিরিয়ায় উদ্বাস্তু হওয়া এসব মানুষের বেশিরভাগই বেসামরিক ব্যক্তি।’ তবুও এই যুদ্ধবাজ ও গণহত্যাকারীদের দায়ী করা হচ্ছে না। সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করা হচ্ছে শুধুমাত্র মুসলমানদের। মুসলিমদের মধ্যে শিয়া-সুন্নি, দ্ব›দ্ব-সংঘাত চলছে দীর্ঘদিন যাবত। উপরন্তু বিভিন্ন মাজহাবের মধ্যেও রয়েছে বিরোধ। এভাবেও মুসলমানদের ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হচ্ছে। এভাবেও মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবুও মুসলমানদের মধ্যে সৃষ্ট এসব দ্ব›দ্ব, সংঘাত, বৈরিতা, গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ওআইসির কার্যক্রম তেমন জোরালো নয়।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটি দেশ ধনী। তারা বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ তথা গ্যাস ও তেলের কারণেই ধনী হয়েছে। সেগুলো তারা নিজেরা আবিষ্কার ও উত্তোলন করতে পারেনি। সবটাই করছে বিধর্মীরা। তাই তারা বেশিরভাগ নিয়ে সামান্য কিছু দিচ্ছে তাদেরকে। আর সেটা দিয়েই তারা ধনী হয়েছে। কিন্তু সে সম্পদ তারা উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করেনি তেমন। ব্যয় করেছে ভোগ বিলাসে! আর যেটুকু অবশিষ্ট থেকেছে তা গচ্ছিত রেখেছে ও বিনিয়োগ করেছে অমুসলিম দেশে। অথচ এসব বিনিয়োগ মুসলিম দেশে করা হলে মুসলমানদের অনেক কল্যাণ হতো। যা’হোক, সেই গ্যাস ও তেলের মূল্যের অস্বাভাবিক পতন হয়েছে। সহসাই পূর্বাবস্থায় ফিরবে বলে মনে হয় না। ফলে দেশগুলোর উন্নয়ন কর্ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু মানুষের জীবনমান নিচে নামছে।
বর্ণিত কারণসমূহের জন্য মুসলমানরা আজ সর্বাধিক দরিদ্র, অশিক্ষিত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত জাতিতে পরিণত হয়েছে। এর জন্য বিধর্মীরা যত দায়ী, তত দায়ী নিজেরাও। আর এই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করছে বিধর্মীরা। তারা ইচ্ছেমত শাসন, শোষণ ও নির্যাতন চালাচ্ছে মুসলমানদের ওপর। তাই মুসলমানদের চরম দুর্দশার জন্য বিধর্মীদের ছিদ্রান্বেষণের আগে নিজেদের দোষ-ত্রæটি খুঁজে বের করতে হবে এবং তা বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে। দ্বিতীয়ত নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে না হলে সামনে অগ্রসর হওয়া যাবে না সফলভাবে। তৃতীয়ত ঘরে বিভীষণ রেখে অন্যের সাথে যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না বিধায় বিভীষণদের নির্মূল করতে হবে।

একদা মুসলমানরা বিশ্বের প্রায় অর্ধেকটা শাসন করেছে কয়েকশ’ বছর যাবত। আজকের সভ্যতা ও বিজ্ঞানের সূচনাই ঘটিয়েছেন মুসলমানরা। তখন সৌর্যবীর্যে ও জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলমানরা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি ছিল। কিন্তু কালক্রমে তারাই আজ দুর্বল জাতিতে পরিণত হয়েছেন। তাদের সেই ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব। সে জন্য যে সম্পদ ও জনবল দরকার তা আছে। এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, বিশ্বের মোট সম্পদের ৬০% আছে মুসলিম দেশে। উপরন্তু মুসলমানদের জন্মহার সর্বাধিক। তাই ২০৭০ সালের মধ্যে মুসলমানরা সর্ববৃহৎ জাতিতে পরিণত হবে বলে এক গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ। অবশ্য, আধুনিক যুগে কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটি বেশি কার্যকর। তাই বিত্ত ও শক্তি না থাকলে মূল্যায়ন হয় না। এসব দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সে লক্ষ্যে সব সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। সে জন্য সব মুসলিম দেশেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এটা হলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে সার্বিক উন্নতি হবে। এছাড়া, সব মুসলমানকে ধর্ম ও নৈতিকতার শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি ও ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলামের পূর্ণ বিধান পালন, নিজেদের মধ্যে দ্ব›দ্ব, সংঘাত ও উগ্রবাদিতা ত্যাগ ও সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি ওআইসি ও আইডিবিকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হবে এবং নিজেদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা, বিনিয়োগ, পর্যটন ইত্যাদি বৃদ্ধি করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

 



 

Show all comments
  • Md. Amirul Islam ৮ অক্টোবর, ২০২০, ৪:১৮ পিএম says : 0
    You have written fine.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলমান


আরও
আরও পড়ুন