মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
কুয়েতের নতুন আমির হিসেবে শপথ নিয়েছেন ৮৩ বছরের শায়খ নাওয়াফ আল-আহমেদ। গতকাল শপথ গ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। এদিন পার্লামেন্টে দেয়া বক্তৃতায় নাওয়াফ আল-আহমেদ বলেন, জাতি আজ এক কঠিন পরিস্থিতি ও বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে সবার কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই কেবল এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। নতুন আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমেদ বলেন, শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ যেভাবে জাতিকে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন সেজন্য দেশের জনগণ তাকে মনে রাখবে।
আল-সাবাহ পূর্ববর্তী নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘শেখ সাবাহের নীতি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে’। কুয়েত জাতীয় পরিষদের স্পিকার মারজৌক আল-গানিমও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে, শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-সাবাহ কুয়েতকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবেন’।
সউদী আরবের বাদশাহ সালমান কুয়েতের নতুন আমির শেখ নওয়াফ আল-আহমদ আল-সাবাহকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তার দেশ এবং কুয়েত বরাবরই সবসময় শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং ইরাকের বাহরাম সালিহ, বাহরাইনের রাজা হামাদ বিন ইসা এবং ওমানের সুলতান হাইসাম বিন তারিকসহ অন্য আরব নেতারাও শেখ নওয়াফকে তার নতুন ভ‚মিকার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পূর্বসূরি মরহুম আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ’র সৎ ভাই নাওয়াফ আগের প্রশাসনে যুবরাজের দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ সাবাহও এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করেছেন। সউদী জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ প্রত্যাহারে মধ্যস্থতা করেছেন তিনি। ২০২০ সালের জুলাইয়ে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন শেখ সাবাহ। মঙ্গলবার কুয়েতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে শেখ সাবাহ’র ইন্তেকালের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরই তার সৎভাই ও যুবরাজ শেখ নাওয়াফ আল-আহমেদ নতুন আমির হিসেবে বেছে নেয় দেশটির মন্ত্রিসভা।
এদিকে কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল আহমাদ আল জাবের আল সাবাহর (৯১) ইন্তেকালে দেশটিতে ৪০ দিনে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। মরহুমের লাশ গতকাল যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তার ইন্তেকালে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জর্ডানের বাদশা আবদুল্লাহ, ও আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের মতো নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন।
আমিরের ইন্তেকালে কুয়েত সরকার ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণার পাশাপাশি তিন দিনের জন্য সব অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করেছে। শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ ২০০৬ সাল থেকে কুয়েতের আমির ছিলেন এবং তার আগে ৫০ বছর ধরে দেশটির পররাষ্ট্রনীতির তত্বাবধান করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের ক‚টনীতির ক্ষেত্রে তার সক্রিয় ভ‚মিকার কারণে তাকে ‘ডীন অব আরব ডিপ্লোম্যাসি’ বলা হতো।
বিবিসির বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, কুয়েত দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের একটি মিত্র দেশ। তেলসমৃদ্ধ এ দেশটি নিরাপত্তার জন্য পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীল এবং বড় প্রতিবেশী ইরাকের হাত থেকে দেশটিকে রক্ষার জন্য ব্রিটেন ১৯৬১ সালে সৈন্য পাঠিয়েছিল। এরপর ১৯৯১ সালে ইরাক কুয়েত দখল করে নেবার পর মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনী ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ নামে সেনা অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনের বাহিনীকে হটিয়ে দেয়।
যদিও দেশটি দীর্ঘদিন ধরেই আল-সাবাহ পরিবারের বয়স্ক শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে, কিন্তু আরব বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় কুয়েতে রাজনীতি অনেক প্রাণবন্ত। এখানে নির্বাচিত এমপিরা অবাধে সাবাহ পরিবারের সমালোচনা করতে পারেন, সরকারের মন্ত্রীদের জবাবদিহি চাইতে পারেন এবং এ কারণে কখনো কখনো রাজনীতিতে অচলাবস্থাও সৃষ্টি হয়েছে। তবে সাবাহ পরিবার সরকার ও নির্বাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং রাজনৈতিক বিষয়ে আমিরের মতই শেষ কথা। তাছাড়া পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া ও নির্বাচন দেবার ক্ষমতাও রয়েছে আমিরের হাতে। কুয়েতের শাসকরা নারীদের ভোটাধিকার এবং রাজনৈতিক পদে আসীন হবার পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন। কুয়েতকে স¤প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের এমন একটি শক্তি হিসেবে দেখা হয় - যারা মধ্যস্থতার মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করতে ভ‚মিকা রেখেছে। আর এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভ‚মিকা রেখেছে মরহুম আমিরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।
উল্লেখ্য, বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ তেল মজুতকারী দেশ কুয়েত। দেশটির ৪১ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৩৪ লাখই বিদেশি। বিগত ২৬০ বছর ধরে দেশটি শাসন করছে সাবাহ পরিবার। উপসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কুয়েত। দেশটির রাজনৈতিক বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা থাকে আমিরের। পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়া কিংবা পাল্টে দিয়ে নির্বাচনের ডাক দেয়ার ক্ষমতাও আমিরের হাতে। সূত্র : রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।