Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরে অগ্রগতি

বরিশাল ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৫ এএম

একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, মে মাসে আম্পান এবং গত মাসে ভাদ্রের অমাবশ্যায় সময় সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলের সাথে অবিরাম বর্ষণে মৎস্য সেক্টরে বিপর্যয় ঘটে। এর সাথে করোনাভাইরাস সঙ্কটকে আরো ঘনীভ‚ত করে। তবে প্রায় আড়াই লাখ টন মৎস্য উদ্বৃত্ত থাকলেও বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে মৎস্যজীবীদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ইলিশ উৎপাদন ও আহরণে সারা দেশের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের অবদান প্রায় ৭০%-এর কাছে। সাম্প্রতিককালে খাঁচায় মাছ চাষ এবং কাঁকড়া, কুচিয়াসহ আরো বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তিতে মৎস্য চাষ ও উৎপাদনে সাফল্য আসছে। করোনা সঙ্কটে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরেও যে স্থবিরতা ছিল, তা থেকে ইতোমধ্যে উত্তরণ ঘটতে শুরু করেছে।
তবে গত মাসে ভাদ্রের অমাবশ্যায় জোয়ার আর উজানের ঢলে মৎস্য সেক্টরে বড় বিপর্যয় ঘটে। ওই প্লাবনে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২৫ হাজার মৎস্য চাষির ২৮ হাজারের বেশি পুকুর, দিঘী ও খামারের সাড়ে ৫ হাজার টন মাছ ও ৬ শতাধিক টন পোনা ভেসে গেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মৎস্য স্থাপনার অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভাগীয় মৎস্য দফতরের মতে, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৯ কোটি টাকা। তবে বেসরকারি সূত্রে তা শত কোটিরও বেশি হবে বলে জানা গেছে।
কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্যজীবীরা থেমে নেই। সরকারি কোন প্রনোদণা বা সহায়তা না পেলেও মৎস্যজীবীরা তাদের সবকিছু দিয়ে আবার মাছ চাষে নেমেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি ফসলের চেয়ে মাছ চাষে মুনাফা বেশি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষের এ সেক্টরে আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৪২ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয়, প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর বদ্ধ জলাশয়, দেড় সহস্রাধিক বেসরকারি মৎস্য খামার, ৫০টির মত সরকারি-বেসরকারি মৎস্য হ্যাচারি, ৯২০টি নার্সারি খামার ছাড়াও প্রায় ৯ হাজার চিংড়ি খামার মৎস্য উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় মোট জলাশয়ের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরের মত। যার মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার পুুকুর-দীঘি, ৬৬৭টি বরোপীট, ৯০টি প্রবাহমান নদ-নদী, ৪৩টি বিল, একটি বাঁওড় বা মরা নদী, প্রায় দেড় হাজার খাল ও সোয়া ৬শ’ প্লাবন ভ‚মিতে সারা বছরই কমবেশি মাছ চাষ ও আহরণ হচ্ছে। এসব জলাশয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন। যার মধ্যে ইলিশের উৎপাদন ইতোমধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়াও রুই জাতীয় মাছ প্রায় ৮০ হাজার টন। পাঙ্গাস, শিং-মাগুর, কৈ, তেলাপিয়া এবং চিংড়ি ছাড়াও অন্য মাছের উৎপাদনও ছিল দেড় লাখ টনের কাছে। গতবছর দক্ষিণাঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি ৫০টি হ্যাচারি ও ৯২৩টি নার্সারিতে প্রায় ৩০ হাজার কেজি রেনু ও ৩২ লাখ মাছের পোনা উৎপাদন হয়েছে।
বর্তমানে ৬ জেলায় প্রায় দেড় হাজার খাঁচায় দুই হাজার টন বিভিন্ন ধরনের মাছ উৎপাদন হচ্ছে। প্রায় দেড় হাজার মৎস্য চাষি এর সুফল ভোগ করছেন। এছাড়াও কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষ সম্প্রসারনে সাফল্য আসতে শুরু করেছে। ৫টি জেলার ১১টি উপজেলার পুকুরে কিশোর কাঁকড়া চাষ, পেনে ও খাঁচায় কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ ও সামাজিক পর্যায়ে কুচিয়া চাষের ২৫টি প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হয়েছে। ৭৩৫টি খামারে প্রায় ১১০ হেক্টর জমিতে ৩ শতাধিক টন কাঁকড়া উৎপাদিত হচ্ছে। যা রফতানি খাতকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক হচ্ছে।
এছাড়াও ৮ উপজেলার প্রায় তিন হাজার মৎস্যজীবী সহস্রাধিক টন শুটকি উৎপাদন করছে। যার পুরোটাই কীটনাশকমুক্ত ও রোদে শুকানোর মত লাগসই প্রযুক্তির বলে মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বরিশাল

২৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ