Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের পেঁয়াজ নাটক

আবারো রফতানি বন্ধ : কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ

হিলি, বেনাপোল অফিস ও সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি নিয়ে শুরু হয়েছে ভারতের নাটক। পাঁচ দিন বন্ধ রেখে গত শনিবার ভারতে আটকে পড়া পেঁয়াজ রফতানি শুরু করেন সে দেশের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর রোববার হিলি ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আবারও পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। তবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দাম কমার এ চিত্র পাওয়া গেছে।

এদিকে পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের নাটক এবং দেশের বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে কাওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের দোকান-আড়তে র‌্যাবের অভিযানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজ এমনিতেই পচনশীল পণ্য। তারপর ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আসছে তার এক তৃতীয়াংশ পচা। অথচ যখন-তখন কারওয়ান বাজারসহ পেঁয়াজের বাজারে র‌্যাবের অভিযান পরিচালনা করে। শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, তারা নিয়ম মেনেই ব্যবসা করেন। কিন্তু যখন-তখন অভিযান হলে তারা প্রতিবাদ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তারা বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই ব্যবসা করেন। চাহিদার অনুপাতে পণ্যের সরবরাহ থাকলে বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকে। সেদিকে নজর না দিয়ে অভিযানের নামে পণ্য নস্ট করে ব্যবসায়ীর সর্বনাশ তারা মেনে নিতে পারছেন না।

গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনও পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি। নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গুঞ্জন উঠেছে ২২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে প্রতি টন পেঁয়াজ ৭৫০ মার্কিন ডলারে নতুন করে এলসি দেয়া হলে ভারত পেঁয়াজ রফতানি করতে পারবে। শনিবার আমদানি হওয়ায় ভালোমানের কিছু পেঁয়াজ গতকালের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে আজ ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পর হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। প্রকার ভেদে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা প্রতি কেজি দরে। অতিরিক্ত পঁচে যাওয়া পেঁয়াজের প্রতি ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়।

তবে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও অন্যান্য মালামাল আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। আজ সোমবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১৪ ও ১৫ তারিখের রফতানি অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজ পুনরায় দেশে আমদানি হতে পারে বলে বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন। এদিকে শনিবারের আমদানি করা পঁচা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছে আমমদানিকারকরা। এতে তাদের অর্ধ কোটি টাকার লোকশান গুনতে হবে।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শাহিনুর ইসলাম জানান, গত ১৩ তারিখে রফতানির অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজ গুলো গত শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে। এদিন ভারত থেকে ১১টি ট্রাকে মোট ২৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।

হিলি বন্দরের আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, ৫ দিন ধরে পেঁয়াজ গুলো সীমান্তের ওপারে আটকা থাকায় এবং দেশে প্রবেশ করতে না পারায় অতি মাত্রার গরম ও বৃষ্টিতে ভিজে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতি ট্রাকের ৭৫ শতাংশ পেঁয়াজ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জনিয়েছে বন্দরের ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়েছে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাফিউল আলম বলছেন, হিলিতে পেয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, হিলির মতই ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল সোয়া চার পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজের ট্রাক ভারত থেকে ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেনি। এর আগে পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর গত শনিবার দুপুর থেকে ভারতে আটকে পড়া পেঁয়াজ ভর্তি ১৬৩ টি ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৩১ টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে। তবে, আমদানীকৃত এসব পেঁয়াজের ৬০ শতাংশ পঁচে গেছে। ভারতে আটকে থাকা বাকী ট্রাকের পেঁয়াজের অবস্থাও ভালো নয় বলে জানা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আটকে পড়া ট্রাকের পেঁয়াজ দ্রুত খালাস না করলে সমস্ত পেঁয়াজই পঁচে যাবে। এতে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সর্বশান্ত হবে। ইতোমধ্যেই পেঁয়াজ আমদানিকারকদের কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শনিবার পেঁয়াজের গাড়ী ঢুকলেও রহস্যজনকভাবে গতকাল রোববার কোনো ট্রাক ঘোজাডাঙ্গা থেকে ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করেনি। এ বিষয়ে একাধিকবার ঘোজাডাঙ্গা বন্দর ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা পরিষ্কারভাবে কিছু জানাচ্ছেন না। আদৌ আর কোনো পেঁয়াজেরট্রাক আসবে কি-না তা স্পষ্ট করছে না ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার আমির মোমিন জানান, এখনো কয়েক হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক ঘোজাডাঙ্গায় রয়েছে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায়। তবে, একদিন চালুর পর হঠাৎ করে পেঁয়াজের কোনো গাড়ী না আসার বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেননি।

একি অবস্থা বেনাপোল বন্দরেও। ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আটকে থাকা পেঁয়াজের কোন ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। কবে নাগাদ আসবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ওপারের রফতানিকারকরা। গত শুক্রবার রাতে ওপারে শুধুমাত্র আটকে থাকা পেয়াজের ট্রাক গুলো বাংলাদেশে রফতানির অনুমতি দেয় ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আটকে থাকা ট্রাকের পেঁয়াজ ৪০-৫০ ভাগ পঁচে যাওয়ায় পেয়াজের ট্রাকগুলো গত বৃহস্পতিবার রাতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে রফতানিকারকরা। তারা স্থানীয় বাজারে ও বিভিন্ন আড়তে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে তাদের মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

গতকাল রোববার বনগাঁও এলাকায় ১৫টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক গতরাতে ঘোজাডাংগা বন্দর থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে পেট্রোপোল বন্দর দিয়ে রফতানির জন্য। ওপারের রফতানিকারক ভজন দাস জানিয়েছেন, পেঁয়াজের পূর্বের রফতানিমূল্য ২২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে প্রতিটন ৭৫০ মার্কিন ডলারে নতুন করে এলসি দেয়া হলে তারা পেঁয়াজ রফতানি করতে পারবে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে অন্য সব ধরনের পণ্য আমদানি রফতানি চালু রয়েছে বর্তমানে। পেঁয়াজ আমদানি হলেও দ্রুত খালাসের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ##

 



 

Show all comments
  • Md. Jaber ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
    ভারতের কাছ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করলেই বাংলাদেশ পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আমাদের চাষিদের যখন পেঁয়াজ ওঠে ভারত তখন পেঁয়াজ দেয়। ফলে চাষরা দামপায় না এখন আর চাষ করে না তাই পেয়াজের ঘাটতি
    Total Reply(0) Reply
  • Kaushik Sarkar ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
    বাংলাদেশী পেঁয়াজ শুনেছি, ভারতীয় পেঁয়াজের তুলনায় বেশী দামে বাজারে বিক্রি হয় , এটার কারণ কি ? অথচ ভারতীয় পেঁয়াজ সেই সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে পরিবহন করে, শুল্ক প্রদান করার পরও, এর দাম কম হয় কেন ! বাংলাদেশ তো আগাগড়াই শস্য-শ‍্যামল, সেই দেশটা কেন এখনো পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, কেন ? যারা সত‍্যিকারেই ভারতকে ঘৃণ্য করে, ভারতের জিনিস ছুয়ে দেখে না, তাদের দিকটা কি কতৃপক্ষ একবারও ভেবে দেখেছে কি ?
    Total Reply(0) Reply
  • Sirajam Ananna ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
    সব পেশাজীবীকেই সাধ্য অনুযায়ী কৃষি কাজে জড়িত হতে হবে। অবসর সময় কাটানোর জন্য কৃষি কাজকে বেছে নেওয়া উচিত। তবেই বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Shohel Rana ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
    একটি কাজ করলেই পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব। কাজটা হলো কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। আমরা প্রায়ই দেখি,ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি করে কৃষকদের কোমর ভেঙ্গে দেয়া হয়।যার ফলে কৃষকরা পেয়াজ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।আর এই সুযোগ গ্রহণ করে ভারত। কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পেলে পেঁয়াজ আমদানি নয় বরং রপ্তানি করার জন্য বাজার খুজতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Alomgir Hossain ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    যদি কৃষক কে তাদের ন্যায্য মুল্য দেয়া হত তাহলে আমার মনে হয় পেয়াজ আমরাই রপ্তানি করতে পারবো,,,ন্যায্য মুল্য না পাওয়ার কারনে অনেক কৃষক পেয়াজ এর চাষ বন্ধ করে দিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Emran ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানী নিষিদ্ধ করলেই দেশের কৃষকরা পেঁয়াজ উৎপাদনে সাহস ও শক্তি পাবেন। যেমন গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা বন্ধ হওয়ার কারনেই আজকে আমরা গরুতে স্বয়ংসম্পূর্ন।
    Total Reply(0) Reply
  • R R Trading ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
    সরকার যদি উৎপাদন খরচ হিসাব করে কৃষককে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে দেয় তবে ছয় বছর নয় দুই বছরেই আমরা পেয়াজ রপ্তানী করতে পারি
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:৪৩ এএম says : 0
    লন্ডন থেকে বলছি ভালোভাবে মন দিয়ে পড়িবেন। বিশ্বাস করুন অথবা নাই করুন। সত্য বলা প্রত্যেক মানুষের কাজ। একটি কথা সবাই জানিবেন আর মনে রাখিবেন। বাংলাদেশের সব পন্য অত্যন্ত উৎকৃষ্ট। আমরা যাহারা লন্ডনে আছি ভারতীয় পন্য চইয়াই দেখি না কারণ ভারতীয় পন্য অত্যন্ত নিম্ন মানের। যাহা কিচু ভারত হইতে আসে ইহার মধ্যে পাইলেন স্বরনো আর এই স্বরণের ক্রেতা বাংলাদেশী। আমরা চাইলে বিশ্ব বাজার আমাদের বাংলাদেশের দখলে অতি সহজেই নিতে পারি। ইনশাআল্লাহ। সেই দিন বেশি দুরে নয় ভারত বাংলাদেশের পাওয়ে ধরিবে ভারতের পন্য বাংলাদেশে বেচার জন্য। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Nannu chowhan ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৭:০১ এএম says : 0
    Bangladesh why dying hard get onion from India?now turkey even offering in very low prices,we have business man they are only after money they have no sympathy for peoples no feelings of patreotism ....
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেঁয়াজের বাজার

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ