পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১১০ টাকা ছাড়িয়েছে। মতিঝিল ও খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারে এবং মহল্লার দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। অধিকাংশ খুচরা দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রাখছে। আবার কোনো কোনো দোকানে আরও দাম বাড়ার আশায় পেঁয়াজের বস্তা ঢেকে রাখছে কিংবা দোকান বন্ধ রাখছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পেঁয়াজ কিনছে।
গত সোমবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণার খবরে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। ওই দিন সকালে বিভিন্ন দোকানে পেঁয়াজের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর তা ৬৫ থেকো ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। অন্যদিকে এদিন সকালে বিভিন্ন আড়তে প্রতি কেজি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিলো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আড়তে পাইকারি পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে বেলা ১১টায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এতে গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে খুঁচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, আর পাইকারি বাজারে বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
গত সোমবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মহল্লার দোকানগুলোতে এবং বিভিন্ন কাঁচা বাজারে পেঁয়াজ অনেকটা আগের কয়েকদিনের দামেই বিক্রি হচ্ছিল। কারণ তখনো বেশিরভাগ দোকান ও আড়তে ভারত থেকে পেঁয়াজ বফতানি বন্ধের খবর পৌঁছেনি। ফলে সোমবার রাতেও কোনো কোনো দোকানে প্রতি কেজি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় এলাকাভেদে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ রসুন আড়তদার সমিতির প্রচার সম্পাদক ও মেসার্স আলহাজ্ব ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। আজ (মঙ্গলবার) প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, দেশি পেয়াঁজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি করেছি। সরকার পেঁয়াজ আমদানির বিকল্প উদ্যোগ না নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন।
অন্যদিকে মতিঝিল এজিবি কলোনি কাঁচা বাজারের আল্লাহর দান দোকানের মালিক পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. আলমগীর বলেন, আজ (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। ভারতীয় বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি। দাম বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি পেঁয়াজ কেনার স্লিপ দেখিয়ে বলেন, রাজধানীর শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৮৫ টাকা করে। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ ধরা হলে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা পড়ছে। ফলে বাধ্য হেয়ে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে কফিল উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, কমলাপুর কাঁচাবাজারে সকালে ৯০ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম চাইলেও এক ঘণ্টা পর তা বাড়িয়ে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছে। ফলে সেখান থেকে আর পেঁয়াজ না কিনে, মতিঝিল কলোনি বাজার থেকে ১০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনলাম।
এর আগে, ভারতের মহারাষ্ট্রে বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাতে গত বছর ভারত সরকার প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইজ (এমইপি) নির্ধারন করে দেয়। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ৩০০ মার্কিন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ মার্কিন ডলার পূর্ণনির্ধারণ করে। পরবর্তীতে একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পুরোপুরি পেয়াঁজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। যার প্রভাবে ২০১৯ সালে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকায় উঠে যায়। এবছরও সেপ্টেম্বর মাসে (১৪ সেপ্টেম্বর) ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ টাকায় উন্নীত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতি বছর পেয়াঁজের চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন হচ্ছে ২৩ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এতে বছরে ঘাটতি থাকে ৮ থেকে ৯ লাখ মেট্রিক টন। এই ঘাটতি মোকাবিলায় বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।
দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের যত উদ্যোগ:
এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে গত রোববার থেকে ৩০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এছাড়া পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। উদ্যোগগুলো হচ্ছে- মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের বাজার মনিটরিং জোরদারে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরকে) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী ও নাটোরকে পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য বাণিজ্য সচিবের পক্ষ থেকে ডিও পাঠানো হয়েছে। পেঁয়াজের বিষয়ে দ্রুত সংনিরোধ সনদ ইস্যুর জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে পত্র। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারকদের এলসি খোলাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে জানানো হয়েছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ স্থল বন্দর (বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ ও হিলি) হতে দ্রুত সময়ে ছাড়ের জন্য আমদানিকারকদের সহযোগিতা প্রদানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনজন যুগ্ম সচিবকে পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুত ও মূল্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য পেঁয়াজ অধ্যুষিত জেলা (পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর) পরিদর্শনে পাঠানো হয়েছে। স্থল ও নদীবন্দরে পেঁয়াজের আমদানি পরিস্থিতি, কনটেইনার জট ও কৃত্রিম সঙ্কট আছে কিনা তা দেখে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ভারতের রফতানি বন্ধ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুচরা এবং পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর বাজারগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০-৭৫ এবং দেশি পেঁয়াজ ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খাতুনগঞ্জের আড়তদারেরাও দাম বাড়িয়েছেন ইচ্ছেমতো। কমদামে কেনা পেঁয়াজ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
দেশের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে সোমবার প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৭-৪০ টাকায়। অথচ গতকাল একই পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫৫-৬৫ টাকায়। যা খুচরা বাজারে এসে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। সকাল থেকে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ও আশপাশের পেঁয়াজের আড়তগুলোতে ব্যবসায়ীদের ভিড় ছিল। পেঁয়াজ নেই এমন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেন আড়তদারেরা।
বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে এনে ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করেন। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধ হবে এটি আগে থেকেই জানা ছিল। আর তাই বিকল্প হিসেবে মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসছে। কয়েকদিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি আরও বাড়বে। গত বছরের মতো এবারও মিশর, তুরস্ক এবং চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহাবুবুল আলম। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। যার কোন যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। তিনি আগামী দিনের চাহিদা পূরণে চীন, মিশর, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে অতি শীঘ্রই পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া সড়ক পথেও মিয়ানমার হতে পেঁয়াজ আমদানি করে বর্তমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।