পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবিøউ) ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরে ব্যাপকভাবে ধাতব পিলেট বা ছররাগুলি ব্যবহারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর এমন ঘাতক অস্ত্র ব্যবহরের মাধ্যমে চরমভাবে মানবাধিক লংঘন করছে ভারতীয় পুলিশ। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক এ মানবাধিকার সংস্থাটি স¤প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বাধিক বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত ধাতব পিলেট নিক্ষেপ করে ভারতীয় পুলিশ কাশ্মীরি জনগণের প্রতিবাদ থামিয়ে দেওয়া, তাদেরকে আহত করা ও হত্যা করছে। স¤প্রতি কাশ্মীরের শ্রীনগরে মহররমের শোক মিছিলে ভারতীয় পুলিশ ও প্যারামিলিটারী সিআরএফ শটগানের গুলি হিসেবে ধাতব পিলেট ছুঁড়ে অসংখ্য মুসলিম নাগরিককে আহত করার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি এ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় আইন-শৃংখলা বাহিনী নিয়মিতভাবেই জম্মু-কাশ্মীরে প্রতিবাদকারী জনতার বিরুদ্ধে এরকম পিলেট ব্যবহার করে মিছিলকারী বা পথচারীদের গুরুতর জখম করছে। ভারতের উচিত প্রতিবাদ মিছিল যতই সহিংস হোক এভাবে ধাতব পিলেট ছুঁড়ে নাগরিকদের আহত করা থেকে বিরত থাকা। কারণ এটা মানবাধিকারের সীমা লংঘন করছে। ২০১০ সালে কাশ্মীরে সপ্তাহব্যাপী চলমান বিক্ষোভ দমনকালে বন্দুকের তাজা গুলি ছুঁড়ে ১২০ জনকে নিহত করার পর পুলিশের হাতে দেওয়া হয় পিলেট নিক্ষেপযোগ্য শটগান। কাশ্মীরে বিক্ষোভ দমনে শটগান থেকে পিলেট নিক্ষেপ চালু করার পর থেকে ভারতীয় বাহিনী গত ১০ বছরে কয়েক হাজার কাশ্মীরিকে গুরুতর জখম করেছে এবং চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। পুলিশের নির্বিচারে নিক্ষিপ্ত পিলেটে মিছিলকারী ছাড়াও পথচারী বা পার্শ্ববর্তী দোকান বা বাড়ীতে অস্থানরত নারী ও শিশুরাও আহত হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ২০১৮ সালে পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, ২০১৫-১৭ সালে পিলেট নিক্ষেপে কাশ্মীরে নিহত হয়েছেন ১৭ জন নাগরিক। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর আনুযায়ী ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১৩৯ জন শটগানের পিলেটের আঘাতে চক্ষু হারিয়ে অন্ধ হয়েছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি রাজ্য সভায় জানিয়েছেন, ২০১৬ সলের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ছয় হাজার ২২১ জন নাগরিক পুলিশের নিক্ষিপ্ত পিলেটে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৭৮২ জনই চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক রায়ে নির্দেশ দিয়েছে, কাশ্মীরে বিক্ষোভকারী জনতার বিরুদ্ধে এ অস্ত্রটি নির্বিচারে ব্যবহার করা যাবে না। এ সময় পুলিশ কর্তৃপক্ষ সুপ্রীম কোর্টে জানিয়েছিল শটগানের একটি কার্তুজে ৪৫০টি করে ছোট গোলাকৃতির বল থাকে। তবে এতে কী ধাতু ব্যবহার করা হয় তা জানাতে আপারগতা প্রকাশ করেছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ। শ্রীনগর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এগুলো সীসার বল। সাধারণত চামড়া ভেদ করে শরীরে প্রবেশ করে প্রচন্ড ব্যাথা সৃষ্টি করে। তবে চোখের মত নাজুক অংশে আঘাত পেলে রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু বা অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে। অসংখ্য পিলেট একজনের শরীরে বিদ্ধ হলে তা একটা একটা করে অপারেশন করে বের করাও কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ভারতীয় পুলিশের দাবী, তারা যখন প্রয়োজন তখন কেবলমাত্র সহিংস বিক্ষোভের বেলায় এরকম পিলেট ব্যবহার করছে। তবে, আন্তর্জাতিক আইনে এমনকি সহিংস বিক্ষোভের বেলায়ও ছররাগুলি নিক্ষেপ করে নির্বিচারে এবং অন্যায়ভাবে জখম করা নিষিদ্ধ। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের অফিস জানিয়েছে, কাশ্মীরে বিক্ষাভ দমনে ধাতব পিলেট নিক্ষেপ করার মত অত্যন্ত বিপদ্জনক একটি পন্থা অবম্বন করছে ভারত। এটা আবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগকারীদের দ্বারা বল প্রয়োগ বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার সংক্রান্ত জাতিসংগের মৌলিক নীতিতে বলা হয়েছে, অনাকাঙ্খিত জখম বা ঝুঁকি সৃষ্টি করে এমন অস্ত্র বা গুলি জনতার ওপর ব্যবহার করা যাবে না। নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সিদ্ধান্ত আনুযায়ী জনসমাবেশ পাহারা দিতে বা ভন্ডুল করতে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পরবে না। জাতিসংঘের গাইড-লাইন অনুসারে মারমুখী মিছিলেও পুলিশ এমন অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে না যা দিয়ে একসাথে অনেক গুলি নিক্ষেপ করা যায়। এক্ষেত্রে শটগানে প্রচুর সংখ্যক ধাতব পিলেট ভর্তি কার্তুজ কখোনোই ব্যবহার করা যাবে না। জনসমাবেশ মোকাবেলা এবং অস্ত্র ব্যহার সংক্রান্ত এসব আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম-নীতির কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছে , তারা যেন কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার স্বার্থেই এরকম ধাতব পিলেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে চলে। এইচআরডবিøউ.ওআরজি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।