Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোনো চুক্তি সুফল আনবে না

| প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাও ও বাহরাইনের সম্পর্ক স্থাপনের চুক্তি পুরো বিশ্বে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ফিলিন্তিনের স্বাধীনতা, আল-আকসার দখলমুক্তি এবং আরব-ইসরাইল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান সারাবিশ্বের শান্তিকামী, মুক্তিকামী মানুষের দাবী। কিন্তু কোনো খন্ডিত স্বার্থে ফিলিস্তিনের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে না। কোনো পক্ষের একতরফা সিদ্ধান্ত বা কোনো বৃহৎ শক্তির চাপিয়ে দেয়া সমঝোতা বা শান্তিচুক্তির কারণে বিভক্তির ক্ষত আরো গভীর ও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। আরব-ইসরাইল সংকট ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বি-রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অনেক পুরনো। এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব-ইসরাইল সংকট সমাধানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে আরবদের ভূমি দখল করে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নটিকে ধামাচাপা দিয়ে পশ্চিমারা আরবদের কাছ থেকে ইসরাইলের স্বীকৃতি আদায় করে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঘটনাক্রমে আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮ সালের এই দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় ক্যাম্প ডেভিডে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এবং ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী মেনাচিম বেগিনের মধ্যে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা এবং ১৯৭৯ সালে শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়। ১৯৯৩ সালে মার্কিন মধ্যস্থতায় পিএলও-ইসরাইলের মধ্যে অসলো অ্যাকর্ড, ১৯৯৪ সালে মার্কিন মধ্যস্থতায় জর্ডান-ইসরাইল শান্তিচুক্তি এবং ২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের মধ্যস্থতায় আবারো পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী এহুত বারাকের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার চুক্তি হয়। এসব চুক্তি ফিলিস্তিনিদের অধিকার বা আরব-ইসরাইল শান্তি এনে দিতে পারেনি। ইসরাইলের আগ্রাসন একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি।

সাম্রাজ্যবাদী তৃতীয় পক্ষ নিজেদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে শান্তি ও সমঝোতার খন্ডিত মঞ্চ সৃষ্টি করে মধ্যস্থতাকারীর অভিনয় করে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করেছে। ফিলিস্তিনীদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এবার এমন এক সময় ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্ভট সিদ্ধান্তে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং ডিল অব দ্য সেঞ্চুরির নামে ফিলিস্তিন সংকটকে শক্তি ও অর্থের বিনিময়ে দাবিয়ে রাখার মার্কিনী ও ইসরাইলী অপচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের রেজুলেশন এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের রায় উপেক্ষা করে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূ-খন্ডে নতুন নতুন ইহুদি বসতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ইসরাইল ফিলিস্তিন ও আরবদের সাথে শান্তির সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে পরিস্থিতিকে ক্রমে আরো জটিল করে তুলেছে। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখে হঠাৎ করে মার্কিন মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মত তেলসমৃদ্ধ আরব দেশ ঘোষিত কোনো শর্ত ছাড়াই ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে সমঝোতায় উপনীত হয়েছে, তা অস্বাভাবিক ও অস্বচ্ছ। এ ধরনের সমঝোতা চুক্তি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, অধিকার এবং আরব-ইসরাইল শান্তির সম্ভাবনাকে আরো দীর্ঘায়িত করার অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিছুই নয়।

আরব-ইসরাইল শান্তির প্রধান শর্ত হচ্ছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করা। ফিলিস্তিনীদের অধিকার ও নিরাপত্তা অগ্রাহ্য করে ইসরাইলের সাথে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খন্ডিতভাবে নিজ নিজ স্বার্থ হাসিল করা গেলেও এর ফলে মূল লক্ষ্য আরো দূরে সরে যাবে। মার্কিন নিরাপত্তা ও পলিসি নির্ধারনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী একজন কর্মকতা বলেছেন, আরবদের সাথে ইসরাইলের শান্তিচুক্তির মূলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রবাণিজ্য। আরবদের কাছে শক্তিশালী অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও সমরাস্ত্র বিক্রি করার ক্ষেত্রে ইসরাইলের নিরাপত্তা ও স্বার্থ লঙ্ঘনের যে কোনো আশঙ্কা এড়ানোর পন্থা হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই চুক্তির আশ্রয় গ্রহণ করেছে বলে মত দিচ্ছেন পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। এমন ধারণাও আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা দেখা দেয়ায় এ ধরণের চুক্তি নির্বাচনী প্রচারণা ও ভোটবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ফল দিতে পারে, এমন প্রত্যাশা থেকে এ সময়ে আরব-ইসরাইলকে একটি চুক্তিতে উপনীত করতে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে নিজ দেশে নেতানিয়াহুর অবস্থাও খুব নাজুক। দুর্নীতির দায়ে বিচার এবং জনসমর্থনের পারদ ঠেকাতে এই চুক্তির ইমেজ তারা কাজে লাগাতে চায়। ইসরাইলের সাধারণ জনগন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে একতরফা চুক্তিতে এর কোনো সমাধান নেই। সেই সাথে, মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তি ইরান. তুরস্ক, সউদি আরবের স্বীকৃতি ও সমর্থন ছাড়া আরব-ইসরাইল সংকটের সমাধান অসম্ভব। তবে ফিলিস্তিনিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে খন্ডিতভাবে কিছু আরব রাষ্ট্রের শাসকদের প্রলুব্ধ করে ইসরাইলের সাথে সমঝোতা চুক্তির বিপরীতে ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ-বিসম্বাদ ভুলে গিয়ে একটি ঐক্যপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইরান, তুরস্কসহ অধিকাংশ আরব দেশ এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের সমর্থন ফির্লিস্তিনের পক্ষে। এই বাস্তবতা অগ্রাহ্য করে আরব-ইসরাইল সংকটের সমাধান অসম্ভব। ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ওআইসি, আরবলীগসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমর্থন নিয়েই কেবল প্রত্যাশিত আরব-ইসরাইল শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিলিস্তিন


আরও
আরও পড়ুন