Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চীনের সাথে দ্বন্দ্বের ভারতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনা মহামারির কারণে ভারতের অর্থনীতি এমনিতেই বেহাল, এর মধ্যেই সীমান্তে চীনের সাথে বিরোধের জেরে বিভিন্ন চীনা পণ্য ও প্রযুক্তি সেবার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে ভারতের নতুন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
চীন থেকে বেশ কিছু পণ্য ভারতে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুশ’রও বেশি চীনা সফটওয়ার অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং সেই সাথে চীনা বিনিয়োগের ওপর নানা বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, মহাসড়ক নির্মাণ এবং ছোট এবং মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চীনা বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে চীনা পণ্য বর্জনের প্রচারণা। আর এই সব বিধিনিষেধের বলি হচ্ছে ভারতের অনেকগুলো উঠতি প্রযুক্তি কোম্পানি যাদের ব্যবসা তরতর করে বাড়ছিল। ভারতে ৩০ টি নতুন ‘ইউনিকর্ন’ প্রযুক্তি কোম্পানির (যেগুলোর প্রতিটির বাজার মূল্য কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার) ১৮টিতেই চীন বিনিয়োগ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়ার বেশ কটি অ্যাপ-ভিত্তিক কোম্পানি, অ্যাপ-ভিত্তিক ট্যাক্সি কোম্পানি, একটি হোটেল চেইন এবং একটি ই-লার্নিং অর্থাৎ অনলাইন-ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব কোম্পানির ব্যবসার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আরো যেসব উঠতি কোম্পানি চীনা পুঁজির অপেক্ষায় ছিল, তারা এখন হতাশ।

এক দশক আগেও ভারতে চীনা পুঁজি ছিলনা বললেই চলে। কিন্তু চিত্র আমূল বদলে গেছে। ট্রাক্সন নামে যে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ভারতে স্টার্ট-আপ বা উঠতি কোম্পানির ওপর গবেষণা করে তাদের সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ৩৫টি চীনা কোম্পানি এবং চীনের ৮৫টি পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের অনেকগুলো উঠতি ব্যবসায় ৪০০ কোটির ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পেটিএম, স্ন্যাপডিল এবং সুইগির মত প্রযুক্তি কোম্পানি। ২০১০ সাল থেকে গত দশ বছরে ভারতে মোট বিদেশী বিনিয়োগে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, আলিবাবা ভারতে তাদের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ সব পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। ‘তারা (আলিবাবা) ভারতের সিদ্ধান্তে বিস্মিত, কিন্তু তাদের করার তেমন কিছু নেই’, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলছিলেন ভারতীয় একটি স্টার্ট-আপ কোম্পানির মালিক যিনি আলিবাবার কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছেন। পেটিএম এবং স্ন্যাপডিলের মত স্টার্ট-আপ কোম্পানির সাথে বিবিসি যোগাযোগ করলেও বিষয়টির রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার বিবেচনায় তারা কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হয়নি।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, কোভিড সংকট কেটে গেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকেও বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি ভারতে আসবে, কারণ ইন্টারনেট ব্যবসার জন্য চীনের পর ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার। সে কারণেই, করোনাভাইরাস লক-ডাউনের মধ্যেই গুগল, ফেসবুকের মত সিলিকন ভ্যালি জায়ান্ট এবং এআইডিএ বা জেনারেল আটলান্টিকের মত আন্তর্জাতিক পুঁজি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভারতে ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব বিনিয়োগের সিংহভাগই গেছে বিলিওনেয়ার ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানির টেলিকম প্রতিষ্ঠান জিও-তে। অচেনা-অজানা বা নতুন কোম্পানি তার কোনো হিস্যা পায়নি। অনেকে তাই বলছেন, উঠতি কোম্পানিতে চীনা পুঁজি আটকে দিলে এসব উঠতি কোম্পানির জন্য ভারতের ভেতর থেকে বিকল্প পুঁজির ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারতে যেসব পুঁজি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আছে, তারা নিজেরাই বিদেশী পুঁজির ওপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল।

একটি বেসরকারি ইকুইটি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার গোপাল জৈন সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, তারা যে বিনিয়োগ করেন তার মাত্র পাঁচ শতাংশের মত যোগান আসে ভারতের ভেতর থেকে। তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে পুঁজির প্রাপ্যতা কঠিন হবে, ফলে দেশের ভেতর থেকে জোগান আসতে হবে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। এবং তার ওপরই নির্ভর করবে, ভবিষ্যতে ভারতে চীনা বিনিয়োগ ছাড়াই আরো ৩০টি উঠতি নতুন কোম্পানি জন্ম নেবে কিনা। সূত্র : বিবিসি।



 

Show all comments
  • Jahangir Alam ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৩ এএম says : 0
    চীনের ব্যবসায়ীদের লাভ হয়েছে কি?
    Total Reply(0) Reply
  • মরিয়ম বিবি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৪ এএম says : 0
    ভারত যা কিছু করুক তাহাতেই তাদের ক্ষতি রয়েছে। চীনের সাথে লড়া ঠিক হয়নি।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ওসমান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
    ভারতের সাধ্য নেই কিন্তু সাধ আছে। যার কারনে চীনকে বয়কট করতে গিয়ে ব্যবাসায়ীরাস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • বাতি ঘর ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৬ এএম says : 0
    ভারত নামক রাষ্ট্রটা মানচিত্র থেকে তুলে দিয়ে ছোট ছোট কয়েকটা রাশ্ট্র ভাগ করে দিলো কেমন হতো।
    Total Reply(1) Reply
    • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:৪৪ এএম says : 0
  • গাজী মোহাম্মদ শাহপরান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৭ এএম says : 0
    চীনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে ভারতের ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৪:০৮ এএম says : 0
    খুবই ভালো খবর।
    Total Reply(0) Reply
  • Morshed Hridoy ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৩৮ এএম says : 0
    ভারতের কপালে সামনে আরও অনেক দুঃখ আছে বলে মনে হচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৩৯ এএম says : 0
    প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে খারাপ ব্যবহার ও দাদাগিরি করলে তার ফল তো তাদেরকে ভোগ করতেই হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪১ এএম says : 0
    এই সময় ভারতের পাশে কেউ দাঁড়াবে না। কারণ সুযোগ পেলে ভারত সবার ক্ষতি করে।
    Total Reply(0) Reply
  • খালেদ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:৪২ এএম says : 0
    ভারত নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। এবার প্রতিবেশি দেশগুলোও সেটাই করবে, যেটা ভারত এতদিন করে আসছে
    Total Reply(0) Reply
  • NITTANANDA ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:০১ পিএম says : 0
    কিছু পেতে গেলে সাময়িক ক্ষতি তো মেনে নিতেইহব,,
    Total Reply(0) Reply
  • NITTANANDA ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১১:০৩ পিএম says : 0
    কিছু পেতে গেলে সাময়িক ক্ষতি তো মেনে নিতেইহব,,
    Total Reply(0) Reply
  • Biswajit kundu ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৯:১৩ পিএম says : 0
    চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় 14 লক্ষ কোটি টাকার পন্য কিন্তু বাংলাদেশ থেকে 1 লক্ষ কোটি টাকার পন্য balence trade এ ঘাটতি 13লক্ষ কোটি টাকা তাহলে ক্ষতি কার হচ্ছে ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ