Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

বিশ্ববাসী যখন জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া, করোনা ও মহামন্দায় কল্পনাতীত সংকটাপন্ন হয়ে অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত, ঠিক তখনই আশার আলো জ্বালিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তারা উচ্চ ক্ষমতার সৌরকোষ আবিষ্কার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে নবদিগন্ত উন্মোচন করেছেন। এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা নতুন অধিক কার্যক্ষমতাসম্পন্ন সোলার সেল তৈরি করেছেন। এই সোলার সেলের কার্যক্ষমতা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। আগে গড়পড়তা সোলার সেলের কার্যক্ষমতার হার ছিল সর্বোচ্চ ১৫-২০%। এখন এই ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।’ গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য বিজ্ঞানী ও গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক জন গেইজ বলেছেন, ‘নতুন আবিষ্কৃত সোলার সেল সত্যিই অসাধারণ কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করছে।’ প্রকল্পের বিজ্ঞানী ও গবেষণাপত্রের সহলেখক রায়ান ফ্রান্স বলেছেন, ‘তাঁদের আবিষ্কৃত সোলার সেলের কার্যক্ষমতা ৫০% অতিক্রম করার সম্ভাবনা আছে।’ দ্বিতীয় শুভ খবর হচ্ছে, প্রায় বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে বায়ু ও শব্দদূষণ হ্রাস পেয়েছে। গ্লােবাল কার্বন প্রজেক্টের মতে, চলতি বছর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের হার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বনিম্ন হতে পারে। উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘ সর্বপ্রথম ‘যুব জলবায়ু সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় গত বছর ২১ সেপ্টেম্বর। তাছাড়া সংস্থার সাধারণ পরিষদের ৭৪তম বার্ষিক অধিবেশনে ‘ক্লাইমেট সামিট’ অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৩-২৪ সেপ্টেম্বর। এ সম্মেলনে আইপিসিসি প্রণীত যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘বরাবরই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে জোর দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বিশ্বনেতারা সে অনুযায়ী কাজ না করায় কার্বন নিঃসরণ বেড়েই চলছে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গলে যাচ্ছে অনেক হিমবাহ। ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১.১ মিটার বাড়তে পারে, যা আগের ধারণার চেয়ে ১০ সেন্টিমিটার বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালে মধ্যেই বিশ্বের কিছু এলাকা তলিয়ে যাবে। প্রতি বছর নিয়মিত আঘাত হানবে ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমপক্ষে ৪৫% কমিয়ে আনতে হবে। নয়তো তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। এটি হলে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব হবে ভয়াবহ। মহাসাগর ও পর্বতগুলোতে জমা থাকা বরফের স্তূপ ইতোমধ্যে গলা শুরু করেছে। সেগুলো আরও দ্রæত গলে পানির উচ্চতা ধারণার চেয়ে বেশি বেড়ে যাবে। ২০৫০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অনেক অঞ্চল ডুবে যাবে।’ সম্মেলনের বক্তারা জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এটা প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান। তৎপ্রেক্ষিতে সম্মেলনে জাতিসংঘ অনুন্নত দেশগুলোর জন্য ২০০ কোটি ইউরোর তহবিল বাড়িয়ে ৪০০ কোটি ইউরো করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ৭৭টি দেশ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৬৫টি দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ সর্বোপরি বিশ্বের ১৩০টি ব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে ঋণ দেয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ব্যাংকগুলোর বাজার মূলধন প্রায় ৪৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এছাড়া, অ্যামাজনের প্রধান বেজোস ২০৪০ সালের মধ্যে তাঁর কোম্পানিকে কার্বন নিরপেক্ষ করার অঙ্গীকার করেছেন। ইতোপূর্বে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য খাদ্য, সিমেন্ট, টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রায় ৯০টি কোম্পানি ‘উই মিন বিজনেস’ গঠন করেছে ২০১৮ সালের জুনে, যাদের বাজার মূলধনের পরিমাণ ২.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এই জোটের অনেক কোম্পানি ২০৫০ সালের মধ্যে নিজেদের কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে সম্মত হয়েছে। এই জোটের অন্যতম হচ্ছে, নেসলে, সেইন্ট-গবিন, লরিয়েল ইত্যাদি। গুগল নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। মাইক্রোসফটও বৈশ্বিক জলবায়ু রক্ষায় ‘ক্লাইমেট ইনোভেশন ফান্ড’ নামে নিজেদের একটি তহবিলে শত কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে, প্রায় ৪০০ জন বিজ্ঞানীর স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা মনে করি, জলবায়ু ও পরিবেশগত সংকট নিয়ে চলমান শান্তিপূর্ণ ও অসহিংস আন্দোলন যথার্থ। এমনকি যদি তা প্রচলিত আইনের বিরোধী হয় তবুও। উপরন্তু বিশ্বজুড়ে ১৫৩ দেশের ১১ হাজার বিজ্ঞানীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রণীত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনে জরুরি অবস্থার সম্মুখীন বিশ্ব। সুদূরপ্রসারী ও স্থায়ী পরিবর্তন ছাড়া ‘অকথিত মানব নিপীড়নের’ শিকার হচ্ছে বিশ্ব।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিশ্ববাসী ব্যাপক সোচ্চার হয়েছে এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবর মতে, ২০১৯ সালের নভেম্বরের শেষে ভারতে সৌর, বায়ু, ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ, বায়োমাস, বর্জ্য থেকে জ্বালানি ও অন্যান্য পদ্ধতি থেকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮৫ গিগাওয়াট স্পর্শ করেছে। ২০২০ সালে ভারতের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা ১০০ গিগাওয়াট ছাড়ানোর পথে থাকায় ২০২২ সাল নাগাদ ১৭৫ গিগাওয়াট পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সক্ষমতা অর্জনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ। এ ক্ষেত্রে প্রথম দেশ হচ্ছে চীন। এছাড়া, অনেক দেশে আকাশ, নৌ ও স্থল পথে যানবাহন চালানো হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে। ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রও চালু করা হয়েছে রাশিয়ায়। চীনেও এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। ইউএন এনভায়রনমেন্টের ‘রিনিউঅ্যাবলস ২০১৯ গ্লােবাল স্ট্যাটাস’ শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, ২০১৮ সালে সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ১৩৯.৭ বিলিয়ন ডলার (আগের বছরের চেয়ে ২২% কম), বায়ু বিদ্যুতে বিনিয়োগ ২% বেড়ে হয়েছে ১৩৪.১ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া বায়োমাস ও বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরিতে বিনিয়োগ ৫৪% বেড়ে হয়েছে ৮.৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক বিনিয়োগের ৩২% চীন (বিনিয়োগের পরিমাণ ৯১.২ বিলিয়ন ডলার)। এর পর ক্রমান্বয়ে ইউরোপ ২১%, যুক্তরাষ্ট্র ১৭%, ভারত ৫%, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা ৫%। চীন ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ ৬% বেড়ে হয়েছে ৬১.৬ বিলিয়ন ডলার। ব্লু মবার্গএনইএফ-এর প্রধান সম্পাদক ম্যাকক্রোন বলেছেন, সার্বিক বিনিয়োগ কমায় সাধারণভাবে ধরে নেওয়া যায় আমরা পেছনের দিকে আসছি। আসলে বিষয়টি তা নয়, বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ব্যয় কমছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় সৌর ও বায়ু বিদ্যুতে ব্যাপক বিনিয়োগ কর্মকান্ড হচ্ছে। কার্বন ট্র্যাকারের প্রতিবেদন মতে, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের বিকাশে সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডেভেলপাররা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার চেয়ে নবায়নযোগ্য উৎস তুলনামূলক সস্তা হওয়ায় তারা হারাতে পারে ৫০ হাজার কোটি পাউন্ড। বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতে এ সম্ভাব্য পরিবর্তনের মূলে রয়েছে বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ কম উৎপাদন খরচ। এমনকি আগামী ১০ বছরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অনেক বেশি লাভজনক হয়ে উঠবে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার ও গ্রিনপিস সাউথইস্ট এশিয়ার যৌথ প্রণীত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট বায়ু দূষণে প্রতিদিন ৮০০ কোটি ডলার ক্ষতির শিকার হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি, যা বৈশ্বিক জিডিপির ৩.৩%। ২০১৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির লোকসান হয়েছিল ২.৯০ লাখ কোটি ডলার। এ ক্ষতির বোঝা সবচেয়ে বেশি বইতে হয় চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যু হয় ৪০ লাখের বেশি মানুষের। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ৮৬টি দেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছেন যে, সম্পদশালী শীর্ষ ১০% লোক যেখানেই বসবাস করুক না কেন, নিচের দিকে অবস্থিত ১০ শতাংশের চেয়ে তারা সামগ্রিকভাবে প্রায় ২০ গুণ বেশি জ্বালানি খরচ করে। পরিবহন ব্যবস্থায় উপসাগরীয় অঞ্চল সবচেয়ে এগিয়ে, যেখানে শীর্ষ দশে থাকা সম্পদশালীরা সবচেয়ে দরিদ্র ১০ শতাংশের চেয়ে ১৮৭ গুণ বেশি জ্বালানি খরচ করে। এর কারণ হলো, সর্বনিম্ন আয়ের লোকরা খুব কমই ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর ব্যয় বহনে সামর্থ্য হয়। অর্থাৎ ধনী লোকরা যত ধনী হয়, তত বেশি জ্বালানি ব্যবহার করেন। এই চিত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হলে গৃহস্থালির জ্বালানি খরচ ২০৫০ সালের মধ্যে ২০১১ সালের চেয়ে দ্বিগুণ হতে পারে। অপরদিকে, হার্ভার্ডের গবেষকরা জানিয়েছেন, অতিমাত্রার বায়ুদূষণের সঙ্গে কোভিড-৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে। বায়ুদূষণের প্রভাবেই এ মৃত্যুহার বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে বায়ুদূষণের উচ্চমাত্রার কারণে দেশটিতে এতো বেশি মানুষ মারা গেছে। স্মরণীয় যে, কার্বন নিঃসরণকারী প্রধান দেশ হচ্ছে আমেরিকা, চীন ও ভারত।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক (৯০%)। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার আশানুরূপ নয়। ২০১২ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। তাতে মূল উৎস হিসেবে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, হাইড্রো, বায়ো ফুয়েল, জিও থার্মাল, নদীর স্রােত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করা হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি নীতিমালায় অন্যান্য সুযোগও রাখা হয়। এই নীতিমালার আলোকে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫% ও ২০২০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদনের ১০% নবায়নযোগ্য খাত থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু গত ১০ বছরে এ খাত থেকে যোগ হয়েছে মাত্র ৩৩০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ ২৮৬ মেগাওয়াট ২০১৪ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ফান্ডেড ঋণের সর্বোচ্চ ৫% পরিবেশবান্ধব খাতে ব্যয় করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি ব্যাংক খাত ২০১৬ সালে প্রণীত জাইকার পরিকল্পনা মতে, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে মোট ৩,৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব (সৌর শক্তি-২,৬৮০,বায়ু বিদ্যুৎ-৬৩৭ ও বায়োগ্যাস থেকে ২৮৫ মেগাওয়াট)। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার হয় বাংলাদেশে, যার মোট সংখ্যা ৫০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯। আর মোট গ্রাহকসংখ্যা ৫৮ লাখ ৪ হাজার ২২৩ জন। গত ১০ বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে যোগ হয়েছে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার সিংহভাগ হচ্ছে সোলার হোম সিস্টেমের। বর্তমানে সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৩৪০ মেগাওয়াট ও বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৪ মেগাওয়াট। বিশ্বে বর্তমানে স্থাপিত সোলার সিস্টেমের মোট সংখ্যা প্রায় ৬২ লাখ। তার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রায় ৫১ লাখ। কিন্তু এ দেশে যে হারে সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে, সে হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। কারণ, সোলারের এফিশিয়েন্সি মাত্র ০.৬%, যা বিশ্বের চেয়ে ২১ ভাগ কম। অবশ্য, সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয় প্রজন্মের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সৌর প্যানেল আবিষ্কার করেছেন ২০১৮ সালের প্রথম দিকে, যার এফিশিয়েন্সি ৪.৩২%। আগামী বছর দুয়েকের মধ্যে এর এফিশিয়েন্সি ১০% এর ওপরে যাবে,যা বর্তমানের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বলে জানানো হয়েছিল, কিন্তু সেই দুই বছর শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আর কোন কিছু জানা যায়নি।

যা’হোক, আধুনিক যুগে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। তাই এর চাহিদা মাফিক উৎপাদন ও স্বল্পমূল্যে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া জরুরি। তবে মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন যতই বৃদ্ধি করা হোক না কেন, তা যেন বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও পরিবেশ বান্ধব হয়, তা না হলে ভবিষ্যতে আমাদেরই খেসারত গুণতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন