পবিত্র লাইলাতুল বরাত
![img_img-1720083316](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678112525_editorial-inq.jpg)
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিদ্যুতের ঘাটতি মিটিয়ে শিল্প ও আবাসনখাতে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার যোগান নিশ্চিত করা মহাজোট সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারভিত্তিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক লক্ষ্য ছিল। দ্রুততম সময়ে বিদ্যুতের জরুরী চাহিদা পুরণের পাশাপাশি আগামী দিনের সম্ভাব্য চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ফলও মিলেছে হাতে হাতে। তবে বিদ্যুতের জরুরি চাহিদা পুরণে রেন্টাল-কুইক-রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের মত বিশেষ উদ্যোগগুলো এখন সরকারের জন্য বড় ধরণের অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন অবস্থা এতটা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, উৎপাদিনের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় জাতীয় গ্রীডে বেশ কিছু চুক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েও চলতি অর্থবছরে তাদেরকে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। গত বুধাবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ(সিপিডি)’র এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে বক্তারা বিদ্যুৎখাতের নানাবিধ সংকট, সম্ভাবনা ও চলমান জটিলতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচের হার কমে আসলেও একদিকে সাধারণ ভোক্তারা তার কোনো সুফল পাচ্ছেনা অন্যদিকে চাহিদা কম থাকায় বসিয়ে রাখা বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে কোনো জ্বালানি খরচ না হলেও চুক্তি অনুসারে তাদেরকে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে সরকার। যতই দিন গড়াচ্ছে এ খাতের বেহুদা ব্যয়ের অঙ্ক ততই স্ফীত হয়ে চলেছে। সিপিডির দেয়া তথ্য অনুসারে চুক্তিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সার্ভিস চার্জ বাবদ খরচ ২০১০ সালে যেখানে ১ হাজার ৭৯০কোটি টাকা ছিল, সেখানে ২০১৯ সালে এসে তা প্রায় ৯ হাজার কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। গত ৯ বছরে জাতীয় বাজেটে এ খাতের ব্যয় ৪০০ভাগের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুতের সহজলভ্যতা বিনিয়োগ,শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও জনজীবনে স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ নিশ্চিত করতেও বিদ্যুতের কাঙ্খিত চাহিদা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কার্যকর উদ্যোগ না নিয়েই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোসহ সঞ্চালন লাইনে টাকা খরচের বিষয়টি অন্যতম রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয়ে পরিনত হয়েছিল। বিদ্যুত উৎপাদনে মহাজোট সরকারের নানামুখী উদ্যোগগুলো দেশের বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। তবে পুরনো বিদ্যুত প্রকল্পগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের সময়টুকুতে তাৎক্ষণিক ও স্বল্পসময়ের জন্য কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ ক্রয়ে সরকারের চুক্তি সমর্থন করা গেলেও অহেতুক বার বার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে সার্ভিস চার্জের নামে জনগণের রাজস্বের হাজার হাজার কোটি টাকার গচ্চা মেনে নেয়া যায় না। সিপিডির গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫০(৪৯.৮)শতাংশ বেশি। করোনার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় তা এখন প্রায় ৬৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গত বছর ১৭জুন যেখানে ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ছিল, চলতি জুন মাসের ১৭ তারিখে সেখানে ৪৯টি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকার তথ্য জানিয়েছে সিপিডি। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও সার্ভিস চার্জের নামে খরচের বহর বৃদ্ধি পেয়ে তা এখন অর্থনৈতিকভাবে জাতীয় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ কমে গিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিত করা শেখ হাসিনা সরকারের একটি বড় অর্জন। সেই সাথে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় শিল্প ও কৃষিখাতের সুফলও অকিঞ্চিৎকর নয়।
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপবৃদ্ধির পেছনে এ খাতে চাহিদা, উৎপাদন ব্যয় ও বাজার মূল্যের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছে সিপিডি। বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনায় এ ধরনের অর্থনৈতিক গ্যাড়াকল থেকে বেরিয়ে আসার কিছু দিক নির্দেশনাও বেরিয়ে আসে। উৎপাদন, পরিচালন, সঞ্চালন ও সরবরাহ পুনপর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ধীরে চলো নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাকালীন বাস্তবতায় বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় সার্ভিস চার্জ পুর্ননির্ধারণ ও রেন্টাল ও কুইক-রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি থেকে সরে আসতে একটি এক্সিট প্ল্যান প্রণয়নের কথা বলা হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা অনুপাতে উৎপাদনবৃদ্ধির ধারবাহিক বাস্তবতায় বেশ কয়েক বছর ধরেই অস্বাভাবিক বেশি দামের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি নবায়ণের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সারাবিশ্বে পেট্টোলিয়ামের মূল্য অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার সুফল থেকে আমাদের সাধারণ ভোক্তারা বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছে। যদি এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিনিয়োগের কথা চিন্তা করে তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ অব্যাহত রাখার কথা বিবেচনা করা হয়, তাহলেও পরিবর্তিত বাস্তবতায় সার্ভিস চার্জের হার পুননির্ধারনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি বিনিয়োগকারিদের কথা যেমন ভাবতে হবে তেমনি অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্ভিস চার্জের বোঝা বহন করতে গিয়ে বছরে কয়েক দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিসহ এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে আমলে নিতে হবে। পরিবর্তিত বর্তমান বাস্তবতা, আগামীর সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও চাহিদার নিরিখে নিজস্ব বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। রেন্টাল, কুইকরেন্টাল ও ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের বাড়তি খরচ বন্ধ করে নিজেদের সক্ষমতার সমন্বয় এবং ভবিষ্যতের জন্য পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।