মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি বেইজিংয়ের পক্ষে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ২০২০ সালের মে থেকে চীন অরুণাচলের লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) লাইন ধরে প্রায় ১ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করে রেখেছে যা, ভারত নিজেদের বলে দাবি করে।
নেপাল ও পাকিস্তানের পর চীন তার মানচিত্র পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভারতের দখলে থাকা অরুণাচলকে দক্ষিণ তিব্বত দাবি করে মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করে। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ৩টি নতুন রানওয়েও তৈরি করছে চীন। গত ৩ মাস ধরে লাদাখ সীমান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী। সামরিক ও ক‚টনৈতিক পর্যায়ে বেশ কয়েকটি আলোচনা চীনকে তার সেনা প্রত্যাহার করতে এবং স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব আলোচনার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করে চলেছে, চীন বারবার আরও সামরিক পদক্ষেপের হুমকি ব্যবহার করে আসছে।
গত সপ্তায় মস্কোয় চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে রাজনাথ সিং বৈঠকে বসতে রাজি হওয়ায়, অনেকেই আশা করেছিলেন লাদাখের চরম উত্তেজনাময় পরিস্থিতি কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে। কিন্তু, বৈঠকের পর বেইজিংয়ে ফিরে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যেভাবে হুমকির সুরে বলেছেন যে, ভারতকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না চীন, তাতে সঙ্ঘাত যে আরও বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কার্যত ঘটছেও তাই। গেল সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে লাদাখের পূর্বাঞ্চলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-চীন দু’তরফ থেকেই গুলি চালানো হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে গুলি করা হয়েছে বলে চীন দাবি করলেও, ভারতীয় সেনা মুখপাত্রের দাবি, চীনের গুলির জবাবেই গুলি ছোড়া হয়। যদিও, কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে, ১৯৭৫ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারত-চীন সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় অচিরেই সহিংসতার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাশিয়ার মস্কোয় সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন-এসসিও’র বার্ষিক সম্মেলনে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় আবারো মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন দু’দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও ওয়াং ই। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) কী ভাবে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে দু’জনের মধ্যে। মস্কো সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার বলেছেন, ‘এপ্রিল মাস থেকে একে অপরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে ভারত ও চীনের সেনাবাহিনী। পরিস্থিতি খুবই সিরিয়াস।’ দুই পক্ষের রাজনৈতিক স্তরে গভীর আলোচনার প্রয়োজনও বোধ করছেন তিনি।
২০২০ সালের ১৫ জুন সালের চীন-ভারত সীমান্ত বিরোধে কমপক্ষে ৭৬ ভারতীয় সেনা সদস্য আহত হয় এবং ৩ কর্মকর্তাসহ ১০ ভারতীয় সেনাকে আটক করে চীন। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ভারত চীন কর্তৃক এই ধরণের আগ্রাসন দেখছে। পরিস্থিতি নাজুক হওয়া সত্তে¡ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দেয়ার কোনও সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করেন না, তার সুরক্ষা নীতি এতোটাই রক্ষণশীল হয়ে পড়েছে যে, চীনকে নিশানা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
গত জুলাইয়ে মোদির সরকার টিকটক এবং উইচ্যাট সহ ৫৯ টি চীনা অ্যাপস সহ আরও ১ শ’ ১৮ টি মোবাইল নিষিদ্ধ করে কিছু লোক দেখানো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে এই বাণিজ্য স্থবিরতা দিয়ে মোদি সরকার চীনের অর্থনীতিতে কোনও অর্থবহ প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং চীনের অর্থনীতি ভারতের চেয়ে ৬ থেকে ৭ গুণ বেশি সমৃদ্ধি লাভ করেছে। তদুপরি, চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কও অসম। চীনের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার এবং তারা চীন থেকেই বেশিরভাগ পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মোদির প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপগুলি চীনের চেয়ে ভারতের অর্থনীতিকে আরও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে দিয়েছে।
চীন বরাবরই ভারতকে হুমকি দিয়ে আসছে যে, ভারত একটি শক্তিশালী চীনের মুখোমুখি দাড়িয়ে রয়েছে এবং সঙ্ঘাতে প্রতিযোগিতায় জড়াতে চাইলে অতীতের তুলনায় ভারতকে আরও ‘মারাত্মক’ সামরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এদিকে, পেন্টাগন বলেছে যে, চীন তার স্থল, জল এবং বায়ূসীমায় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মহাকাশ শক্তিকেও জোরদার করে চলেছে এবং সংকট বা সংঘাতের সময় শত্রুদের মহাকাশ ভিত্তিক আক্রমণ প্রতিহত বা পরাস্ত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে মহাকাশ সংক্রান্ত ক্ষমতার সম্প্রসারণ করে চলেছে। দেশটি কাইনেটিক কিল মিসাইল, স্থল লেজার এবং মহাকাশ কক্ষপথে রোবট স্থাপন সহ একই সাথে বহু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অর্জন এবং বিকাশ অব্যাহত রেখেছে। সেইসাথে, ভূরাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ের পাশাপাশি মহাকাশে, সাইবার ও স্নায়ূ যুদ্ধে সক্ষমতা বাড়িয়েই চলেছে।
পরাক্রমশালী চীন কেন এখন ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, সে প্রশ্নেরই উত্তর পেতে নরেন্দ্র মোদির কিছু পদক্ষেপে দৃষ্টিপাত করতে হবে। ২০১৬ সালে আমেরিকার সাথে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট-এলইএমওএ মোদির স্বাক্ষর করা এবং ২০১৭ সাল থেকে চারু হওয়া শি জিন পিং’র বেল্ট রোড ইনিশিটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে তার অংশগ্রহন না করার সিদ্ধান্ত, চীনকে নাখোশ করে তোলে। ২০১৯ সালের অগাস্টে মোদি যখন কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে বিভক্ত করেছিলেন এবং লাদাখকে একটি পৃথক প্রশাসনিক ইউনিট হিসাবে পরিণত করেছিলেন, চীন ভারতের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ হয়ে ওঠে। এরমধ্যে আকসাই চীনকে দখল করতে নিজের প্রাণবিসর্জন দিতে চেয়ে ভারতের সংসদে বজ্রপাত ঘটান মোদির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তারপর, ২০২০ সালের গোড়ার দিকে চীন কোভিড-১৯ সংকটের পড়লে, মোদি সরকার চীনকে কেবল প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেনি, বরং চীন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবং তাদের কার্যক্রম ভারতে পরিচালিত করতে প্রকাশ্যে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে প্রলোভিত করে। এতে মোদির হিন্দুত্ববাদী সমর্থকরা উচ্ছসিত হলেও চীনকে তা ক্ষিপ্ত করে তোলে।
চীনের পক্ষে যে বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে ইতিবাচক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, তা হ’ল দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত ভ‚-রাজনীতি। পাকিস্তানের সাথে চীনের সম্পর্ক সর্বদা দৃঢ় ছিল। মোদি কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার পর তা আরো বলিষ্ঠ হয়। নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক তার সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে দূরে সরে চীনের ঘনিষ্ঠ, শ্রীলঙ্কা এখন একটি চীনপন্থী সরকার নির্বাচিত করেছে। এমনকি ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিকীকরণকারী ভুটানও ভারতের সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। ভারত মস্কোতে ইরানের কাছ থেকে সমর্থনের আশা করলেও ইরান বর্তমানে চীনের মিত্র এবয় বিআরআই’র অন্তর্ভূক্ত। পাশাপাশি, ভারতের সঙ্কুচিত হতে থাকা অর্থনীতির কারণে মোদিকে খুব একটা গূরুত্ব দেয় না অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি দিয়ে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তি কাঠামো পুনর্গঠন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ চীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।