পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক চাপ তথা মন্ত্রী-এমপি এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের চাপে নিরপক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না ডিসি- এসপি-ইউএনওসহ মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তারা। নিয়ম বহিভূত সুবিধা না দিলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হচ্ছেন মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তারা। গত কয়েক বছরে এমন অসংখ্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনোটিই প্রতিকার বা বিচার হয়নি।
স্থানীয় পর্যায়ে যেখানে উন্নয়ন কর্মকান্ডের টেন্ডার সেখানেই ‘চাহিবা মাত্র বাহককে দিতে হবে’ টাকায় লেখা বাক্যের মতো ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের সুবিধা দিতে হবে। কোনো কিছু প্রাপ্তির সুযোগ থাকলেই সেখানেই চাহিদামতো অনৈতিক সুবিধা না দিলে নেতাকর্মীরা সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। কর্মকর্তারা সমঝোতা করে সেখানে অবস্থান করেন অথবা বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। যারা নিয়মের বাইরে যেতে চান না তারাই পড়েন রাজনৈতিক চাপে। এদের কারো কারো জীবনে হুমকি আসছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মহকুমার প্রশাসকদের (এসডিও) সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। ইউএনওদের এদিকে গানম্যান বাসা হাউজ গার্ডের ব্যবস্থা নিতে জননিরাপত্তা সচিবকে দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সারা দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাসায় চারজন করে সশস্ত্র আনসার সদস্য মোতায়েন করেছে সরকার। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা বিষয়টি জননিরাপত্তা বিভাগ। এদিকে মান প্রকশে অনিচ্ছুক এক জেলা প্রশাসক ইনকিলাবকে বলেন,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সুবিধা না দিলেই ডিসি-এসপি-ইউএনও’র বিপদে পড়তে হয়। তারপরও সব কিছু মেনে নিয়ে সরকারে নীতিবাস্তবায়ন করতে হচ্ছে।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেছেন, শুধু ওয়াহিদা খানম নয়, প্রায়ই দিনেই দেশের কোথাও না কোথাও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হামলার ঘটনা ঘটছে। ব্যবস্থা নেয়াও হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটছে। মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বহুঝুকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। প্রায়শ তাদের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে হয়। অথচ আগে উপজেলা নিবার্হী অফিসারদের পূর্বসুরি মহকুমার প্রশাসকদের (সাব ডিবিশনাল অফিসার) গানম্যান বাসা হাউজ গার্ডের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু এসডিও শব্দটি বিলুপ্তির পর এ সুবিধাটি ইউএনওদের জন্য কার্যকার করা হয়নি। এখন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য সেই আইন কার্যকর করার ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানাগেছে, বর্তমান সরকারের আমলে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ডিসি, ইউএনও এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তাদের ওপর অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মামলা হলেও তার কোন বিচার হয়নি কখনো। আবার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালেও তার কোনো সমাধান হতো না। সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি রক্ষা করতে অনেক সময় সমঝোতা করতে বাধ্য হন।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার অভিযোগে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। সরকারি এই কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনায় দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
চলতি মাসের ১ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাকির হোসেন বাচ্চু, শিবচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রফিকুল ইসলাম, পাঁচ্চর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইউসুফ হোসেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখার সার্ভেয়ার মো. রাসেল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সরকারি দলের নেতা ও দুই ঠিকাদার।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে যুবলীগের নেতা হামলা চালিয়েছে। ওই ঘটনার সময় সন্ত্রাসীরা ওই কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ সময় মৎস্য কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফ ও তার অফিস সহকারী গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে নেতারা লাঠি দিয়ে চেয়ার- টেবিল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর ও মৎস্য কর্মকর্তার ওপর হামলা চালায়। এতে তার মাথা ফেটে যায়। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তাকে রক্ষা করতে গেলে অফিস সহকারী দেলদার হোসেনও আহত হন।
গত ১১ মে সিলেট জেলা ছাগল উন্নয়ন খামার থেকে খাওয়ার জন্য ছাগল না পেয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলামের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এসে খামারে প্রজননের জন্য রাখা একটি ছাগল খাওয়ার জন্য নিতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। প্রজননের উদ্দেশ্যে খামারিদের দেওয়া হয়, খাওয়ার জন্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।এ কথা জানানোর পরই হামলার ঘটনা ঘটে।
গত বছরের ১৯ জানুয়ারি বাঘা উপজেলার হরিরামপুর পদ্মা নদীর বালু মহালে পরিদর্শনে গেলে এসিল্যান্ড ইমরুল কায়েস তার নিরাপত্তা প্রহরী পলিন ও গাড়িচালক রাজু বালুদস্যুদের হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পক্ষে সার্ভেয়ার শামসুল হক বাদী হয়ে ১৫ জনের নামে মামলা করেন। ৩০ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে মাধাইনগর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ভূমি কর্মকর্তা আখতার হোসেন, অফিস সহকারী এসএম মনিরুল হক, অফিস সহায়ক শ্রী মঙ্গলা ও ঝাড়–দার শফিকুল ইসলাম আহত হন।
গত ৪ মে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাবনাবাদ নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালে হামলা চালানো হয়। পরে পুুলিশ হামলাকারী লিটন গাজী ও রানা হোসেনকে আটক করে পুলিশ। গত ৫ জুন নীলফামারীর ডিমলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হামলা চালানো হয়। গত ১৯ মে রাজশাহীর তানোর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগ নেতাদের হামলায় গুরুতর আহত হন মাহবুর রহমান নামে উপসহকারী এক কৃষি কর্মকর্তা। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পরে পুুলিশ তানোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীন মোল্লাকে আটক করেছে।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনার ভাগুড়া থানা পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় থানার এসআই ইব্রাহিম খলিল বাদী হয়ে ২০ জনের নামে মামলা করেছেন। মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা সবাই শাসক দলের নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।