Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আশা ছাড়ছে না বার্সেলোনা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

এবার বিদায় দাও! যেন ১৯ বছরের রঙিন এক দাম্পত্য জীবনে তিক্ত বিচ্ছেদের আবেদন। শুরুর গল্পটা সবারই জানা। কিন্তু এখনো বিশেষ। দাম্পত্যের ‘কাবিননামা’ যে ছোট্ট এক ন্যাপকিনে! ১৪ ডিসেম্বর ২০০০ ছিল তারিখটা। লিওনেল মেসির পরিবারকে নিশ্চয়তা দেওয়ার তাড়া ছিল, তড়িঘড়ি সই করাতে হতো মেসিকে। হাতের কাছে পাওয়া ন্যাপকিনই সই! ‘আমি, চার্লি রেক্সাস, এফসি বার্সেলোনার টেকনিক্যাল সেক্রেটারির ক্ষমতাবলে- এবং অনেকের মতের ভিন্নতা থাকা সত্তে¡ও- লিওনেল মেসিকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে কথা দিচ্ছি, যদি সব শর্ত প‚রণ হয়’- তড়িঘড়ি করে ন্যাপকিনে লিখেছিলেন বার্সেলোনার সে সময়ের টেকনিক্যাল সেক্রেটারি চার্লস রেক্সাস। ফুটবল ইতিহাস রাঙানো এক সম্পর্কের শুরু।

নিজেকে প্রমাণের দায় তখন মেসির ছিল, তার দায়িত্ব ছিল বার্সেলোনার। তার গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি ছিল, চিকিৎসার খরচ বইতে কোনো আর্জেন্টাইন ক্লাব রাজি ছিল না। সুযোগটা বার্সেলোনা নিয়েছিল। মেসির ইনজেকশনের জন্য মাসে ১ হাজার পাউন্ড লাগত, খরচটা বার্সা দিয়ে গেছে। ১৩ বছর বয়সে বাড়ি তো বটেই, দেশ-মহাদেশ ছেড়ে আসা মেসির দেখভালের জন্য সঙ্গেও তো কেউ থাকতে হবে, তাই না? মেসির বাবা হোর্হে মেসি বার্সেলোনায় থেকে গিয়েছিলেন। তাঁকে বছরে ৪০ হাজার পাউন্ড দিয়ে গেছে বার্সেলোনা। অনেক টাকা! বার্সার বিনিয়োগ সেটি। এর চেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ হয়তো হয় না আর।
বার্সার ঋণ কী দারুণভাবেই না শোধ করেছেন মেসি! ‘ছেলেটা নতুন ম্যারাডোনা হবে’ ভেবে তাঁকে এনেছিল বার্সা, তিনি বার্সার মেসিই হয়েছেন। ক্লাবটার পাঁচ চ্যাম্পিয়নস লিগের চারটিই তার সময়ে। মূল দলে ১৬ বছরে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ছোঁয়া পেয়েছে বার্সার ইতিহাসের ২৬ লিগ শিরোপার ১০টি। সব মিলিয়ে ৩৪ শিরোপা। বার্সার ইতিহাস রাঙানো ৬৩৪টি গোল। ৫১৩ জয়। দুই মৌসুমে ত্রিমুকুট, এক মৌসুমে সম্ভাব্য ছয় শিরোপার ছয়টিই জিতে শিরোপাষষ্ঠক। ২০১২ সালে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৭৩ গোল, বছরটাতে ৯১ গোলের রেকর্ড। ছয়টি ব্যালন ডি’অর। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে এল ক্লাসিকোতে রেকর্ড ২৬ গোল। মেসি-জাদু ১৬টি বছর মুগ্ধ করে রেখেছে বার্সেলোনাকে।
এমন এক সম্পর্কের তিক্ততায় ভরা বিচ্ছেদ চায় না বার্সেলোনাও। তাইতো তকে ঘিরে এখনও পরবর্তি মৌসুমের ছক কষে চলেছে কাতালান জায়ান্টরা। মেসির বার্সেলোনা ছাড়তে চাওয়ার পরও ক্লাবটির নতুন স্পোর্টিং ডিরেক্টর রোমান প্লানেস জানিয়েছেন, আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে রেখেই সামনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তারা। পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড ফের্নান্দেস ত্রিনকাওকে মেসির ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনের দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সামনে আনে বার্সেলোনা। এতে ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোজেপ মারিয়া বার্তোমেউ থাকলেও সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। সেখানে ত্রিনকাওয়ের সঙ্গে প্লানেস সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর সিংহভাগই ছিল মেসিকে নিয়ে। যেখানে ছয় বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী আর্জেন্টাইন সুপার স্টারকে সঙ্গে নিয়েই বার্সেলোনার নতুন করে দল সাজানোর কথা জানান প্লানেস, ‘সত্যি হচ্ছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ খবর কিন্তু আমরা মনে করি এবং কোচ, সভাপতি ও আমি-আমরা সবাই সবসময় বলেছি, বার্সেলোনার বিনির্মাণে মেসিই ভবিষ্যৎ। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে নিয়েই আমরা আরেকটি জয়ী দল সাজাতে চাই। যা কিছু হচ্ছে, এর সবকিছুর উপসংহার দেখতে হবে, আমাদের ভাবনা হচ্ছে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে একটি জয়ী দল নির্মাণের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’
ফ্যাক্সের মাধ্যমে চুক্তির একটি ধারা কার্যকর করে বার্সেলোনা ছাড়ার ইচ্ছা জানান মেসি। কিন্তু প্লানেস মনে করেন না আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড শেষ পর্যন্ত সেটা করবেন, ‘আমরা ভাবছি না মেসি চলে যাবে। আমরা চাই সে থাকুক। তার প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা আছে। সে বিশ্বসেরা, ইতিহাসের সেরা। ভবিষ্যৎ খুবই ইতিবাচক; তার সঙ্গে আমাদেরকে বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে হবে। যে বার্সেলোনা আমরা তৈরি করতে চাই, সেটাই করতে হবে, এটাই আমাদের পরিকল্পনা। মেসি বার্সাকে অনেক দিয়েছে। এটা একটা বন্ধন, যেটা আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়েছে। নতুন একটা বার্সা সাজাতে আমরা কাজ করছি। সব উদ্যোগ একটি জয়ী, তারুণ্যনির্ভর দল গড়ার জন্য। যারা আমাদেরকে অনেক দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তাদের নিয়ে আমরা নতুন করে জেগে উঠছি। বার্সেলোনা ও লিওর মধ্যে আমরা কোনো বিরোধ চাই না; কোনো পক্ষের এটার কাম্যও নয়। আমরা নতুন একটি জয়ী বার্সেলোনা দল তৈরিতে কাজ করব।’
মেসিকে রাখা না রাখা নিয়ে বার্সেলোনার পরিচালকদের মধ্যে মতভেদের কথাও বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে। প্লানেস অস্বীকার করেছেন সে খবর, ‘মেসির ভবিষ্যৎ নিয়ে বোর্ডের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমরা সবাই মেসিকে উপভোগ করতে চাই। কেউ আমাদের বলেনি আগামী সপ্তাহে মেসি অনুশীলনে আসবে না। যা বলা হবে, তা নিজেদের ভেতরেই বলা হবে। মেসির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে এবং সমঝোতার কিছুই আমরা প্রকাশ করব না।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বার্সেলোনা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ