Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারী বর্ষণে দুর্ভোগে কক্সবাজারের মানুষ

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধসের শঙ্কা

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ২:৫৬ পিএম

সাগর উত্তাল থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে কক্সবাজারে। টানা বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে হাজারো মানুষের। প্লাবিত এলাকার গবাদি পশু, ধান, পানের বরজ, বর্ষাকালীন শাকসবজি ও বিভিন্ন জাতের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। টানা বৃষ্টিপাতে শঙ্কা রয়েছে পাহাড় ধসেরও। এতে উদ্বিগ্ন পাহাড়ে বসবাসরত লাখো মানুষ।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে কক্সবাজারে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারী করা হয়েছে। গত ৫ দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার। তাঁর মতে আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি আরো ৪-৫ দিন অব্যাহত থাকতে পারে ।’

বৈরী আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার উপকূলে ফিরেছে ৬ হাজারের বেশি মাছ ধরার ট্রলার। তাই এখন মাছশূন্য কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। জেলেরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করে সাগর উত্তাল হওয়া ও বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় সাগরে মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন তারা। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মাছশূন্য হওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকর।

প্রবল বর্ষণে শহরের হোটেল মোটেল জোনের অধিকাংশ এলাকা পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া আলির জাহাল, বিজিবি ক্যাম্প, সদর উপজেলা গেইট এলাকা, বাস-টার্মিনাল, টেকপাড়া, বড় বাজার, বাজার ঘাটা, বার্মিজ মার্কেট, নুর পাড়া, রুমালিয়ার ছড়া, তারাবনিয়ারছড়া, এন্ডারসন রোড, সার্কিট হাউজ রোড, বাহারছড়া, নতুন বাহারছড়া ও সমিতি পাড়ার নিচু এলাকা পানির নিচে রয়েছে।

নর্দমার ময়লা আর্বজনা উঠে এসেছে এসব এলাকার রাস্তায়। বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। রাস্তার বেহালদশায় বৃষ্টিপাতে জন ও যান চলাচলে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে।
এদিকে পাহাড় কাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনের আপ্রাণ প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছে কিছু পাহাড় খেকোরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে শহরের লাইট হাউজ এলাকার ফাতের ঘোনা, সৈকত পাড়ার ৫১ একর সংলগ্ন বাঘঘোনা, ঘোনার পাড়া, বৈদ্য ঘোনা, পাহাড়তলী, ইসলামাবাদ, বাদশাঘোনা, ইউছুফের ঘোনা, সাহিত্যিকা পল্লী, বিজিবি ক্যাম্প এলাকা, বাস টার্মিনাল, আদর্শগ্রাম, উত্তরণের আশপাশ ও জেলগেইট এলাকায় এখনও নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটা।

গত ৫ দিনের টানা বৃষ্টিপাতে এসব এলাকায় পাহাড় ধসের শঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এতে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। তাই পাহাড় কাটার স্থান চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

কক্সবাজার সোস্যাল এক্টিভিটিস ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিতভাবে ড্রেইন-রাস্তা নির্মাণ, সংস্কার না করা, নালা-রাস্তা ও বাকঁখালীর পাড়া দখলসহ নির্বিচারে পাহাড় কাটার ফলে বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয় সর্বত্র। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা চলে আসলেও প্রতিকারে যেন মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। যার ফলে বার বার সাধারণ মানুষেরই কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়ছে।

ভারী বর্ষণের কারণে মহেশখালী নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে রয়েছে। আউশ ও আমন ধানের জমিতে জমে গেছে পানি। এতে হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। চকরিয়ায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। বর্ষকালীন সবজি চাষ নিয়ে রামু - চকরিয়ার কৃষকরা হতাশ। তাছাড়া ধান ক্ষেতে পানি জমে থাকায় নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে প্রচুর।
কুতুবদিয়া ও পেকুয়া উপকূলীয় এলাকা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। এতে নিচু এলাকাগুলো পানির নিচে রয়েছে কয়েকদিন ধরে। চিংড়ি ঘেরে পানি প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান চাষীরা।
টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও সদর উপজেলার কৃষকদের মন ভাল নেই। এসব উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখন পানিতে ভরপুর। আউশ ও আমন ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় এখানকার কৃষকেরা। কষ্টে রোপিত ধান নষ্ট হলে সব স্বপ্ন ভেস্তে যাবে তাদের।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান এপ্রসঙ্গে বলেন,
বিশ্বব্যাংকের অনুদানে কক্সবাজার পৌরসভার সকল ড্রেইন নতুনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে। রাস্তায় আর পানি জমে থাকবে না। অচিরেই সড়ক সংস্কার কাজ শুরু হবে। রাস্তা ও নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনী ব্যবস্থা।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ভারী বর্ষণে কোথায় কি ক্ষতি হচ্ছে খবর নেয়া হচ্ছে। এ জন্য স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে। তাছাড়া পাহাড় কাটা রোধে জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলছে। খোঁজ নিয়ে পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। পাহাড় ধস নিয়ে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ