পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের আশাবাদী করে তুলেছে। বহুদিন যাবৎ শেয়ারবাজার একটা হতাশার জায়গা হয়ে ছিল। বিগত তিন সপ্তাহ ধরে সূচক ও শেয়ারের ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত আছে। সূচক ও শেয়ারের লাগাতার অবনমনের কারণে শেয়ারবাজারের প্রতি অনেকেই বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন। তারা আবার ফিরে আসতে শুরু করেছেন। এটা অবশ্যই ইতিবাচক লক্ষণ। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত পরশু ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএস ১৫৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪৮৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। শরীয়াহ সূচক ডিএসইএস ২১ পয়েন্ট বেড়ে ১১১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ব্লু চিপ সূচক ডিএস-৩০ ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ১৬৪০ পয়েন্ট। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত ১৭ দিনের হিসাবে দেখা গেছে, লেনদেনের পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা থেকে ১২০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে মূলধনের পরিমাণ হয়েছে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা। এর সঙ্গে সংগতি রেখে সূচকও বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে এই উল্লম্ফমের পেছনে রয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানসহ নতুন নেতৃত্বের তরফে নেয়া কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ ও পদক্ষেপ। চেয়ারম্যান দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ ও উদ্যমী মানুষ হিসাবে পরিচিত। তিনি এবং কমিশনের অন্য সদস্যরা মিলে বিনিয়োগে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য ফটকাবাজি ও ম্যানিপুলেশন বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া ছাড়াও আরো কিছু নিয়মকানুন কার্যকর করেছেন। জাংক স্টক সংস্কারের একটা পরিকল্পনাও কমিশনের আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রসারণমুখী মুদ্রনীতিও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
পুঁজি সংগঠন ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারের উপযোগিতা ও অবদান অনস্বীকার্য। শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থার চিত্রই তুলে ধরে। উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই। বিনিয়োগের জন্য অর্থ বা পুঁজির প্রয়োজন। শেয়ারবাজার এই পুঁজির একটি নির্ভরযোগ্য উৎস। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় যদি শেয়ারবাজার পরিচালিত হয় তবে এই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কোনো কারণ নেই। অত্যন্ত দুঃখজনক বলতে হচ্ছে, শেয়ারবাজারকে কখনো কখনো ফটকাবাজারে পরিণত হতেও দেখা যায়। এতে বিনিয়োগকারীরা বিশেষত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেন। আমাদের দেশে একাধিকবার শেয়ারবাজারে এ দুর্ঘট দেখা দিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শেয়ারবাজারে বিপর্যয় ঘটে। কী কারণে বিপর্যয়, তা তদন্ত করে বের করা হয়। আমাদের শেয়ারবাজার দুর্ঘটের প্রকৃত কারণ দেশের মানুষ এখনো ভালোভাবে জানে না। তবে এটুকু অনুমান করতে পারে , একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ জন্য দায়ী। শেয়ারবাজারের ওপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নিঃশেষিত হওয়ার পেছনে পুঁজি হারানোর শংকা ও ভয়ই মূলত দায়ী। উপযুক্ত পরিচালন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বিএসইসির নতুন নেতৃত্ব তার প্রমাণ দিয়েছে। শেয়ারবাজারে কিছু লোক সংশ্লিষ্ট থাকতেই পারে, যাদের লক্ষ্য ফটকাবাজি, জালিয়াতি, প্রতারণা ইত্যাদির মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করা। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং তাদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করা উচিৎ। বলা বাহুল্য, কঠোর আইনী ব্যবস্থা প্রয়োগে তাদের নিবৃত করা সম্ভব। আমাদের দেশে এটা লক্ষ করা গেছে, কিছু মানুষের দ্রুত অর্থের মালিক হওয়ার খায়েশ ও লোভ শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। তারা না বুঝে বিপুল দামে শেয়ার কিনে নিজেরা তো সর্বস্বান্ত হনই, বাজারকেও ধ্বংস করতে সহায়তা করেন।
শেয়ারবাজারে সবসময় শেয়ারের মূল্য একই রকম বা একই পর্যায়ে থাকবে, তা আশা করা যায় না। এটা যেহেতু ব্যবসা, সুতরাং এর উত্থান-পতন থাকবেই। দুনিয়ার সেরা শেয়ার বাজারগুলোতেও শেয়ারের দামের উত্থান-পতন ঘটে থাকে এবং সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের দেশে ব্যতিক্রম হবে, এটা কীভাবে ভাবা যায়? এ্রদেশে এমন লোকের অভাব নেই, যারা শেয়ারবাজারের ধরন, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও আচরণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অথচ শেয়ারে বিনিয়োগ করতে চান বা করেন। আসলে তারা বিনিয়োগ করেন না, বিনিয়োগকৃত অর্থ হারানোর ঝুঁকি গ্রহণ করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পরিণতি হয় করুণ। শেয়ারবাজার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না হয়ে কারো বিনিয়োগ করা ঠিক নয়। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি জায়গা। কথাটা সকলেরই মনে রাখা উচিৎ। বিএসইসি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের কর্র্তৃপক্ষকে এব্যাপারে জনসচেনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগী হতে হবে। কেউ যদি বিনিয়োগ করে না ঠকে অথবা তার অর্থ লুণ্ঠিত না হয় তবে বিনিয়োগে আস্থা ফিরে আসবে। শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার ব্যাপারে বিএসইসির ভূমিকার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থমন্ত্রীর আ হ ম মোস্তফা কামালের ভূমিকাও রয়েছে। আমরা আশা করি, এই সম্মিলিত ভূমিকা আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে। শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এবং অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত অবদান রাখবে, এটাই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।