Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টেকনাফে ওসি প্রদীপ সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়!

থামেনি দাপট, মামলায় ঢুকানো ও বাদদেয়া নিয়ে চলছে ঘুষ বাণিজ্য

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২০, ৪:৩২ পিএম

২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। ওই মাদক বিরোধী অভিযানকে পুঁজি করেই টেকনাফের বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার ও তার সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে শত শত নয় হাজার হাজার কোটি টাকা।
নিরীহ লোকজনকে মাদক পাচারের অভিযোগে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলেও এখনো বন্ধ হয়নি মাদক পাচার। অভিযোগ রয়েছে সেই বিতর্কিত ওসি প্রদীপ ও তার সিন্ডিকেট বাহিনীর দাপটে এবং নিরবে ঘুষ বাণিজ্যে এখনো তটস্থ টেকনাফের মানুষ।

গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন মানুষ। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের সহযোগী ছিল বর্তমানে টেকনাফ থানায় কর্মরত পুলিশ অফিসার ও সদস্যরা। ওই কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে মামলা হয়েছে শত শত। আর ওসব মামলায় আসামী করা হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ।

গত ৩১ জুলাই টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে ওসি প্রদীপের নির্দেশে নির্মমভাবে হত্যা করে ওই পুলিশ চেকপয়েন্টের আইসি লিয়াকত আলী।

মেজর সিনহা হত্যা মামলায় বরখাস্ত করা হয় ওসি প্রদীপ ও আইসি লিয়াকতসহ অভিযুক্ত ৯পুলিশ সদস্যকে। এই হত্যা মামলায় প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ এখন কারাগারে। কিন্তু থামেনি প্রদীপ বাহিনীর দাপট!

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত শহর টেকনাফের লামার বাজার এলাকার আলোচিত ইয়াবা কারবারি ইয়াছিন আরাফাত ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হওয়ার পর পুলিশের দায়ের করা মামলা নিয়েও বাণিজ্য করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, অস্বাভাবিক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই মামলার চার্জশিট থেকে চারজন আলোচিত ইয়াবা কারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীর নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলোর দাবি, টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম দোহা ও পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে একটি পুলিশী সিন্ডিকেট পুরো মামলাটি নিয়ে বাণিজ্য করেছেন।

এখন অভিযোগ উঠেছে, টেকনাফ থানার সদ্য বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের বিদায়ের পর ওই চক্রটিই এখন টেকনাফ থানার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার প্রশ্রয় পেয়ে এই চক্রটি টেকনাফ থানায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে প্রকাশ্য দু’টি গ্রুপের সৃষ্টি করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পক্ষের দাবি, এই মুহুর্তে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আমলে দায়িত্ব পালনকারি সবাইকেই বদলি করে নতুন পুলিশ নিয়োগ দিতে হবে। তা নাহলে এই থানার কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফিরে আসবেনা। প্রদীপের প্রেত্মারাই আবারো টেকনাফের মানুসকে শোষণ করবে।

থানা সুত্রে জানা গেছে, টেকনাফের লামার বাজার এলাকার ইয়াবা কারবারি ইয়াছিন আরাফাতকে ধরা হয় ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ। পরদিন ১৯ মার্চ ওই ইয়াবা কারবারি পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ওই ঘটনায় পুলিশ ২২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করাহয়। ওই মামলার বাদী ছিলেন উপপরিদর্শক (এসআই) বোরহান। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসান। আর পুরো মামলাটি দেখভাল করেছেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম দোহা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রের অভিযোগ, এই মামলা থেকে চারজন আলোচিত ইয়াবা কারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়িকে বাদ দিয়ে ১৮ জনের নামে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

সুত্র মতে, ‘অস্বাভাবিক’ অংকের টাকার বিনিময়ে টেকনাফের কুলাল পাড়ার কাদেরের ছেলে সাইফুল (২৪), টেকনাফের শীলবুনিয়া পাড়ার সোলেমানের ছেলে শফিক (৪১), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার মোঃ ওসমান (৪০) ও বার্মাইয়া সৈয়দ করিমকে (৫৫) মামলার চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চার্জশিটে নাম বাদ দেয়া চারজনের মধ্যে মোঃ ওসমান শীর্ষ হুন্ডি ব্যবসায়ী এবং অন্য তিনজন তালিকাভূক্ত আলোচিত ইয়াবা কারবারি।

থানা ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রের অভিযোগ, টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম দোহা ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ওই মামলাটি নিয়ে এখনো বাণিজ্য করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাময়িক বহিস্কার হওয়ার পর থানার বর্তমান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম দোহা, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) রাকিবুল হাসান, উপপরিদর্শক (এসআই) রাসেল, উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বিরের নেতৃত্বে একটি পুলিশী সিন্ডিকেট টেকনাফ থানার কর্তৃত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন।

তাদের এই সিন্ডিকেটে আরও রয়েছেন উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান, সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) নাজিম উদ্দিন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ ও কনস্টেবল রুমান দাশ। এদের মধ্যে এসআই সাব্বির নিজেকে গোপালগঞ্জের পরিচয় দিয়ে কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করছেন। আর কনস্টেবল আবদুল্লাহ হলেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম দোহা’র পোষ্যপুত্রের মতো। তার যখন যা ইচ্ছা তাই করেন! ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে জব্দ করা মোটরসাইকেলের যেটি ইচ্ছা সেটিই ব্যবহার করেন।

অভিযোগ মতে, এই পুলিশী সিন্ডিকেটটি টেকনাফ থানায় কর্মরত কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দৃশ্যত দু’টি ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টদের দাবী, এভাবে চললে টেকনাফ থানায় পুলিশী কার্যক্রমে বিশৃংখলা তৈরি হতে পারে। থানায় শৃংখলা ফেরাতে হলে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আমলে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে বদলি করে নতুন নিয়োগ দিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেজর সিনহা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ