Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদক বিরোধী অভিযানের আড়ালে ওসি প্রদীপ সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকার মাদক পাচার

মেজর সিনহার সহযোগী সিফাত জামিনে মুক্ত, ওসি প্রদীপসহ তিন আসামীকে ৪ দিনেও রিমান্ডে নেয়া হয়নি

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০২০, ১১:২৩ এএম | আপডেট : ৬:০২ পিএম, ১০ আগস্ট, ২০২০

টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর সিনহার সহযোগী সাহেদুল ইসলাম সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সাথে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদলী করে র‌্যাবকে ওই মামলারও তদন্তভার দেয়া হয়েছে।

সোমবার (১০ আগষ্ট) সকাল ১১টার দিকে টেকনাফ কোর্টের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারক তামান্না ফারাহ এই জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। মেজর সিনহা হত্যা মামলার আইনজীবী এড. মোঃ মোস্তফাসহ আইনজীবী সাধারণ লোকজন ও মিডিয়া কর্মীরা সে সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২.১০ টায় সিফাত কারাগার থেকে মুক্তি পান। এসময় সিফাতের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুরা তাকে গ্রহণ করেন।

মেজর সিনহা হত্যা মামলার আইনজীবি এড. মোঃ মোস্তফা জানান, মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা হত্যা ও মাদকের দুটি মামলার আসামী ছিলো সাহেদুল ইসলাম সিফাত। রবিবার তার জামিন আবেদনের শুনানী হয়। শুনানী শেষে সোমবার জামিন আদেশের দিন ধার্য্য করছিলেন আদালত। তার অংশ হিসেবে পুনঃ জামিন শুনানী হলে আদালত সিফাতের জামিন মঞ্জুর করেন। একই সাথে তদন্ত কর্মকর্তা বদলীর আবেদন করা হলে তাও মঞ্জুর করেন আদালত। অবশ্য মেজর সিনহার অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ জামিনে মুক্ত হন আগের দিন রবিবারে।

এদিকে এই মামলায় রিমান্ড মন্জুর হওয়া ওসি প্রদীপ, আইসি লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলালেদের রিমান্ডে নেয়ার সব প্রস্তুতি নিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব। গতকাল ওই তিন আসামীর মেডিকেল পরীক্ষা ও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানাগেছে একটি সূত্রে । তবে সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত তাদেরকে রিমান্ডে নেয়া হয়নি বলে জানান জেল সুপার মুকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, 'এই পর্যন্ত আসামীদের রিমান্ডে নেয়া হয়নি। সোমবারে আর নেয়ার সম্ভাবনাও নেই'। আদালত গত বৃহস্পতিবার ওসি প্রদীপ, আইসি লিয়াকত ও এসআই নন্দ দুলালসহ তিন আসামীর ৭ দিন করে রিমান্ড মন্জুর করে।

এদিকে ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করে সরকার। মাদক বিরোধী অভিযান কে পুঁজি করেই টেকনাফের বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার ও তার সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে শত শত নয় হাজার হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় ওসি প্রদীপ গড়ে তুলেছেন দেশেবিদেশে বিলাসবহুল বাড়ি, কিনেছেন ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি, করেছেন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন দেশে বহু সম্পদ।
নিরীহ লোকজনকে মাদক পাচারের অভিযোগে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হলেও বন্ধ হয়নি মাদক পাচার। অভিযোগ রয়েছে সেই বিতর্কিত ওসি প্রদীপ ও তার বাহিনী এই ইয়াবা পাচারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারাই মূলত মাদক পাচার, ইয়াবা পাচার জিয়িয়ে রেখেছে নিজেদের স্বার্থে। তাদের স্বর্থের হানি হলে সাধারণ লোকজন এবং চুনোপুঁটি ব্যবসায়ীদের কপাল জুটতো বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার।

আর এই টাকা দিয়ে ওসি প্রদীপ ম্যানেজ করত রাজনৈতিক নেতা, মিডিয়াকর্মী ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর। প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার উদ্ধার হওয়া ডায়েরি থেকে পাওয়া গেছে এরকম ২ শত কোটি টাকার হিসাব।

গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ১৬১ জন। এর মধ্যে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মাধ্যমে ঘটেছে ১৪৪টি ক্রসফায়ারের ঘটনা। এসব ক্রসফায়ারের একটি বড় অংশ সংঘটিত হয় মেরিন ড্রাইভ সড়কে। কিন্তু সীমান্তে মাদকপাচার বন্ধ হয়নি একদিনের জন্যও।

উখিয়ার মৌলভি বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী জানিয়েছেন, গত ২৪ জুলাই তাকে ধরে নেয়ার সেই রাতে ওসি প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে পুলিশি অভিযানে ৫১ লাখ নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মৌলভি বখতিয়ারের এক ছেলেকে ডেকে নিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয় আরও বিপুল অঙ্কের টাকা। ওসি প্রদীপ ও উখিয়ার ওসি মর্জিনা মিলে ওই পরিবার থেকে দুই দফায় কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়ে বখতিয়ার মেম্বারকে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার হত্যা করে।

টেকনাফের টাকাওয়ালা মানুষ দেখে তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে ধরে এনে থানার টর্চার সেলে নির্যাতন করেই আদায় করা হতো বিপুল অংকের টাকা। আর যারা টাকা দিত না বা দিতে পারত না তাদেরকে মাসের-পর-মাস সেখানে নির্যাতন করে পরে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতো।

এ ছাড়া দুই দফায় ১২৩ ইয়াবা কারবারিকে আত্মসমর্পণও করান ওসি প্রদীপ কুমার। আসলে এটিও ছিল প্রকৃত ইয়াবা কারবারীদের বাঁচিয়ে দেয়া ও মোটা অঙ্কের বাণিজ্য। কিন্তু এতকিছুর পরও থামেনি ইয়াবাপাচার। কারণ 'সরষের মাঝেই ভূত'!

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্রের মতে বর্তমানে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, দমদমিয়া, লেদা, রঙ্গিখালী, উলুচামারী, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীয়াপাড়া, শাপলাপুর, সাতঘরিয়াপাড়া, উখিয়ার আমতলি, পালংখালী, মরিচ্যা, রেজুখাল, আলীকদমের দুর্গম পাহাড় ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়ন, ধুনধুম ইউনিয়নের রেজু আমতলী ঘুনঘুম, তমব্রু, বেতবুনিয়া, আশারতলী, চাকঢালী, ফুলতলী, দোছড়ি ইউনিয়নের লেবুছড়ি, বার্মাপাড়া হয়ে অন্তত ৩১টি রুটে ইয়াবার চালান ঢুকে থাকে। আর এ পাচারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমারের কারবারিরা তাদের বাকিতেও কোটি কোটি টাকার ইয়াবা দিতে রাজি হয়। সুযোগমত তাদের বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের সর্বশেষ তালিকায়, কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে শুধু টেকনাফেই রয়েছে ৯১২ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজারের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি আছে ৭৩ জন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে তালিকাভুক্ত বড় বড় গডফাদার এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? তাহলে তাদের মাধ্যমে ইয়াবা বড়ি দেশে প্রতিদিনই ঢুকছে। আর প্রদীপ সিন্ডিকেট তাদের পাহারা দিয়েছে।

জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউএনওডিসির মতে, যত মাদক বিক্রি হয় ধরা পড়ে তার মাত্র ১০ শতাংশ। সেই হিসাবে গত বছরে শুধু ইয়াবা বড়িই বিক্রি হয়েছে ৫৩ কোটির মতো। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা (প্রতি বড়ি দেড়শ টাকা)।

 



 

Show all comments
  • Md Rejaul Karim ১০ আগস্ট, ২০২০, ২:৪৭ পিএম says : 0
    পাপ বাপকেও ছাড়ে না জুলুমকারী নির্যাতনকারীকে আল্লাহপাক পছন্দ করেন না।।। আমার প্রশ্ন ঃ মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাসেদের মত অনেকেই প্রদ্বীপ লিয়াকতের নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন তখন কি দেশে কোন প্রশাসন ছিল না??? উনারা না কি নিজ হাতেই এই রকম সিনাহার শতাধিক ক্রসফায়ার দিয়েছিলেন!! যেকোন মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুই কামনা করি।।। তার পরও একটি কথা না বললেই নয় প্রদ্বীপ লিয়াকতের সহচরদের শাস্তি বেশী হওয়া উচিত।।। কারন তাদের জন্যই এতগুলি পরিবার হাহাকার করতেছে।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেজর সিনহা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ
function like(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "clike_"+cid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_like.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function dislike(cid) { var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "cdislike_"+cid; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_comment_dislike.php?cid="+cid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rlike(rid) { //alert(rid); var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rlike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_like.php?rid="+rid; //alert(url); xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function rdislike(rid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "rdislike_"+rid; //alert(xmlhttp.responseText); document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com/api/insert_reply_dislike.php?rid="+rid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } function nclike(nid){ var xmlhttp; if (window.XMLHttpRequest) {// code for IE7+, Firefox, Chrome, Opera, Safari xmlhttp=new XMLHttpRequest(); } else {// code for IE6, IE5 xmlhttp=new ActiveXObject("Microsoft.XMLHTTP"); } xmlhttp.onreadystatechange=function() { if (xmlhttp.readyState==4 && xmlhttp.status==200) { var divname = "nlike"; document.getElementById(divname).innerHTML=xmlhttp.responseText; } } var url = "https://old.dailyinqilab.com//api/insert_news_comment_like.php?nid="+nid; xmlhttp.open("GET",url,true); xmlhttp.send(); } $("#ar_news_content img").each(function() { var imageCaption = $(this).attr("alt"); if (imageCaption != '') { var imgWidth = $(this).width(); var imgHeight = $(this).height(); var position = $(this).position(); var positionTop = (position.top + imgHeight - 26) /*$("" + imageCaption + "").css({ "position": "absolute", "top": positionTop + "px", "left": "0", "width": imgWidth + "px" }).insertAfter(this); */ $("" + imageCaption + "").css({ "margin-bottom": "10px" }).insertAfter(this); } }); -->