Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সিনহাকে খুনের পর সদর থানায়ও মামলা করতে চেয়েছিলেন প্রদীপ

এবার সাবেক এসপির সাথে ফোনালাপ ফাঁস

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২০, ১১:০৬ এএম

সেনা বাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে নৃশংসভাবে খুনের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে সব ধরনের চেষ্টা করেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ভবিষ্যতে সিনহার পরিবার মামলা করেও যাতে তেমন সুবিধা করতে না পারে সে জন্য নিজেই এই ঘটনায় আরো একটি মামলা করতে চেয়েছিলেন। আর তাকে এই মামলা রুজু করার পরামর্শ দেন তারই সুবিধাভোগী সাবেক এক পুলিশ সুপার। সিনহাকে খুনের পরে ঈদের দিন সকালে এ বিষয়ে সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে ফোন করে সাহায্য চান প্রদীপ। তাদের সেই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে গেছে।
সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তাকে খুন কর তার দায় থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তার কাছ থেকে আইনি পরামর্শ নেন ওসি প্রদীপ কুমার । পরামর্শদাতা এই ব্যাক্তি কে তার প্রকাশ না পেলেও কন্ঠস্বর শুনে গোয়েন্দা সংস্থা এবং প্রশাসনের অনেকে এ অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে পুলিশের এক সাবেক এসপি বলে চিহ্নিত করে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়ায় বলেও জানা গেছে।

এই কথোপকথনে সুস্পষ্ট, ভ্রমণ ভিত্তিক ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরি করতে গেলে ঠাণ্ডা মাথায় সিনহাকে হত্যা করা হয় এবং পুলিশের দায়েরকৃত মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল
ওসি প্রদীপ ও আইনি পরামর্শদাতার কথোকথন :
পরামর্শদাতা: হ্যালো
ওসি প্রদীপ: স্যার আদাব স্যার
পরামর্শদাতা: হ্যা
ওসি প্রদীপ: স্যার আমি ওসি টেকনাফ প্রদীপ, স্যার
পরামর্শদাতা: হ্যা কি খবর প্রদীপ কোরবানির গরুর মধ্যে কি
ওসি প্রদীপ: স্যার একটা মহাবিপদে পড়ছি, আপনার সাহায্য দরকার
পরামর্শদাতা: বলো বলো
ওসি প্রদীপ: এখন আমরা স্যার একটা ১৫৩, ১৮৬ ও ৩০৭ এ মামলা নিছি স্যার
পরামর্শদাতা: ওয়ান ফিফটি থ্রি
ওসি প্রদীপ: স্যার থ্রি ফিফটি থ্রি
পরামর্শদাতা: থ্রি ফিফটি থ্রি সরকারি কর্মচারি আরেকটা হচ্ছে
ওসি প্রদীপ: আরেকটা হচ্ছে ১৮৬ পুলিশের কাজে বাধা
পরামর্শদাতা: আর্মিদেরকে ইন্টিমেশন দিছ কিনা?
ওসি প্রদীপ: এরপরে স্যার জানাইছি, আর্মি থেকে লোকজন আসছে
পরামর্শদাতা: এ কি আর্মির নাকি?
ওসি প্রদীপ: স্যার অবসরপ্রাপ্ত
পরামর্শদাতা: ও তাইলে এতো ডরের কি আছে?
ওসি প্রদীপ: এখন স্যার ও মারা গেছে, ইনজিওরড অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছে
পরামর্শদাতা: এর সঙ্গে যে লোকটা ছিল ওইটা কি?
ওসি প্রদীপ: ওইটা স্যার একটা ছাত্র, ইউনিভার্সিটির। সে বলছে যে তারা রাতের বেলা পাহাড়ের সিন নেয়ার জন্য আসছে।
ওসি প্রদীপ: ওরা নাকি ইউটিউবের একটা চ্যানেল করার জন্য আসছে ভ্রমণের উপরে।
পরামর্শদাতা: গাড়িওয়ালারে এরেস্ট করছ কিনা?
ওসি প্রদীপ: স্যার গাড়িচালক তো ও নিজেই
পরামর্শদাতা: ও আচ্ছা আচ্ছা, গাড়ি জব্দ করছ কিনা?
ওসি প্রদীপ: জি স্যার করছি
পরামর্শদাতা: আচ্ছা তোমরা যে বাধা দিছ, ওভারটেক করে গেছে, এটার সাক্ষী আছে কিনা?
ওসি প্রদীপ: সাক্ষী আছে স্যার
পরামর্শদাতা: সাক্ষী থাকলে মামলা নিতে বলো
ওসি প্রদীপ: মামলা নিছি স্যার ১৮৬, ৩৫৩, ৩০৭
পরামর্শদাতা: প্রেয়ার দিয়া দিবা যে মার্ডার হইয়া গেছে
ওসি প্রদীপ: আরেকটা কেস দিতে হবে না স্যার?
পরামর্শদাতা: আরেকটা কেস নিবা?
ওসি প্রদীপ: আরেকটা কেস আমরা কি নিবো? ওসি প্রদীপ: ও যে সদর হাসপাতালে মারা গেছে তাদের একটা কেস নিয়ে নিবো স্যার?
পরামর্শদাতা: আমার তো মনে হয় সদর থানার একটা কেস নিলে ভালো হয়
ওসি প্রদীপ: ভালো হবে না স্যার?
পরামর্শদাতা: আমার মনে হয় ভালো হয়। আর্মির লোক তো পরে টানাটানি করে কিনা!
ওসি প্রদীপ: নাহলে তো স্যার ওরা স্যার লাশ নিয়ে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। ওসি প্রদীপ: আমরা একটা মামলা করে ফেললে ওই মামলাটা ট্যাগ করা যাবে।
পরামর্শদাতা: তাহলে তোমরা একটা কাজ করো না, ৩০৪ এও একটা মামলা নিয়া নিতে পারো।
ওসি প্রদীপ: ৩০৪ এ আমরা কি লিখবো স্যার?
পরামর্শদাতা: লেখবা যে হাউএভার মারা গেছিলো। এ কারণে মামলা করা হলো। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
ওসি প্রদীপ: স্যার ৩০৭ এ আসামীর কলামে কি লিখবো?
পরামর্শদাতা: না আরেকটা সেপারেট মামলার জন্য বলছি। যেহেতু মারা গেছে তাই এ মামলা করা হলো
ওসি প্রদীপ: স্যার মামলা নিবো যে আসামীর কলামে নাম লিখতে হবে না?
পরামর্শদাতা: পুলিশে গুলি করছিলো, বুজছি তো। এই এজাহারটা পুরা লিখবা, যে এই এই কারণে তাকে অবস্ট্রাকশন করে আটকানো হইছিলো। আটকানো হওয়ার পরে এই মামলা রজু হইছে। হাসপাতালে পাঠানোর পরে সেখানে সে মারা গেছে। যেহেতু মানুষ মারা গেছে তাই তদন্ত সাপেক্ষে মামলা রজু করা হলো, ৩০৪ এ
ওসি প্রদীপ: আসামী অজ্ঞাত
পরামর্শদাতা: এইটা করলে কোটে এইটা ট্যাগ হয়ে যাবে
ওসি প্রদীপ: স্যার ৩০৪ আমরা নিবো নাকি সেখানে ডিউটি থেকে নিয়ে নিবো?
পরামর্শদাতা: সদর থানায় হইবো নাকি মামলা?
ওসি প্রদীপ: সবকিছু লেখার পরে লেখবো যে মারা গেছে স্যার
পরামর্শদাতা: তোমার এজাহারটা হুবহু লেইখা যাইবা, যে এই এই মামলার আসামীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। যেহেতু মারা গেছে মামলা রজু করা হলো। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক
ওসি প্রদীপ: সবকিছু লিখে লাস্টে এটা লিখবো
পরামর্শদাতা: যেহেতু মারা গেছে মামলা রজু করা হলো। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক।



 

Show all comments
  • A H M Babar Siddiqui ৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:৫৯ পিএম says : 0
    পাপ একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই, আল্লাহ জালামকে নিশ্চিন্ন করুক
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafa Ahsan ৯ আগস্ট, ২০২০, ১:০৮ পিএম says : 0
    আমি ঢাকা থেকে করোনায় আটকে পড়ে চার মাস পরে আমেরিকায় ফিরে আসি ঢাকায় বসবাসকালিন খুব একান্ত ভাবে এবার বাংলাদেশকে গভির ভাবে অনুধাবনের চেষ্টা করেছি তাতে করে গভির উদ্দেগ আর উৎকন্ঠায় দেশকে নিয়ে পিরিয় মাতরিভূমির ভবিষ্যত নিয়ে একান্তে দিন এর পর দিন চিন্তার সুযোগ করোনা ভাইরাস করে দিয়েছিল তখনই অনুভব করেছিলাম যে যে ............................... আমেরিকা থেকে —হতাশ মাত্রিভকত বাংলাদেশী ।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরানুল করিম ৯ আগস্ট, ২০২০, ১:৫১ পিএম says : 0
    এই পরামর্শদাতা কে গ্রেফতার করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • রাহুল ৯ আগস্ট, ২০২০, ১:৫২ পিএম says : 0
    ওসিকে পরামর্শ দেয় এবং শেল্টার দেওয়ার সকলকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ খান ৯ আগস্ট, ২০২০, ১:৫৪ পিএম says : 0
    এ পর্যন্ত যে তথ্য এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, সেনা বাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafa Ahsan ৯ আগস্ট, ২০২০, ২:০০ পিএম says : 0
    এসপি মাসুদকে এক্ষুনি গ্রেফতার করা হোক সেই সব নাটের গুরু তার মতো মিরজাফর এর কারনেই ........... প্রদিপ এত বড় সাহস পায় একজন সেনা অফিসারকে গুলির পরও পা দিয় লাথি মারে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেজর সিনহা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ