পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
‘বল, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে লও, যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর আর যাকে ইচ্ছা তুমি হীন কর, কল্যাণ তোমার হাতেই, নিশ্চয়ই তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ২৬) আয়াতটি মুসলমানগণ দোয়া-মোনাজাতের সময়ও পাঠ করে থাকেন, অনেকের মুখস্থও আছে। আয়াতের শানে নুজুল ‘খন্দক’ বা পরিখা যুদ্ধ সংক্রান্ত বলে তফসীর গ্রন্থগুলোতে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আয়াতের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে না গিয়ে এখানে এতটুকু বলে রাখা যথেষ্ট যে, চলমান বৈশি^ক করোনা মহামারি অব্যাহতভাবে প্রমাণ করে চলেছে; কে অধিক ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী- আল্লাহ না তারই সৃষ্ট মানুষ? আল্লাহর গজব-আজাব রূপে আবিভর্‚ত অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাসের নিকট ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত তথা অভিজাত-অনভিজাত নির্বিশেষ সকলেই শোচনীয়ভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশ^ ইতিহাসে এটি একটি নির্মম ঘটনা।
একটি হাদীসের মর্মানুযায়ী, মৃত্যু ব্যতীত প্রত্যেক রোগের ওষুধ আছে। কিন্তু সে ওষুধ ও তার ব্যবহার বিধিও জানা থাকতে হবে, তা না হলে ‘নিমে হাকীম খাতরায়ে জান’ (অর্ধ চিকিৎসকের হাতে প্রাণহানীর আশঙ্কা) বাক্যটি চিকিৎসকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। প্রাণ বিসর্জন কেবল আল্লাহর পথেই দেয়া যায়, প্রাণ রক্ষার জন্য যথা সম্ভব করার অনুমতি ইসলামে রয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী করোনা মহামারি হতে রক্ষা পাওয়ার ধর্মীয় অনুশাসন হতে বিরত থাকার প্রয়োজন দেখা দেয়ায় মানবতা রক্ষার স্বার্থে এবার বিশ^বাসীকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে সেই নীতিই গ্রহণ করতে হয়েছে। ইসলামে রোগের চিকিৎসা করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সুতরাং করোনা মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে যা প্রয়োজন ছিল, মুসলমানগণও তা মেনে চলতে বাধ্য হয়েছেন।
খোদায়ী গজবের কাছে ধর্মীয় বিধান বলতে যেমন কিছু নেই, তেমনি পাপাচারের শাস্তি হিসেবে আগত ছোঁয়াছে (ভাইরাস) কেবল পাপীদেরকেই গ্রাস করে না, ভালো লোকেরাও তাতে আক্রান্ত হয়। যেমন, চলমান করোনা ভাইরাসের কথাই বলা যায়, যা বিশে^র সমগ্র মানবকুলকেই গ্রাস করে চলেছে। এ পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই, সামাজিকভাবে ইসলামের কিছু কিছু সৌন্দর্য (সুন্নত রীতি) এবং মৌলিক বিষয় (এবাদত) করোনা কবলিত হয়ে পড়েছে, যাতে আন্তর্জাতিক সংস্থারও করণীয় কিছু নেই। অর্থাৎ মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্যগুলোকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ না থাকায় মানব নির্বিশেষে বিশে^র সকল মানুষের জন্য করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একই স্বাস্থ্যবিধান আরোপ করা হয়েছে। তাই মানব জীবনের সুরক্ষা তথা করোনার কবল হতে মুক্ত থাকার জন্য বর্ণিত স্বাস্থ্যবিধি বিধান মেনে চলার বিকল্প নেই।
দুনিয়ার চিরাচরিত নিয়ম অনুাযায়ী, কোনো প্রাকৃতিক বড় ধরনের দুর্যোগ, দুর্বিপাক কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় জগতে নানা প্রকারের পট পরিবর্তন দেখা দিয়ে থাকে, ইসলামের ক্ষেত্রেও যুগে যুগে তা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে, যার অসংখ্য বাস্তব উদাহরণ বিশ^ ইতিহাসে রয়েছে, ইসলামের ইতিহাসেও তা বিদ্যমান। ইসলামের চিরন্তন বাণী, ‘আল ইসলামু ইয়ালু ওয়ালা ইউলা’ (অর্থাৎ ইসলাম এমন একটি স্বভাব ধর্ম, যা সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী, জোর করে ঊর্ধ্বমুখী করার প্রয়োজন হয় না) মুসলমানদের সর্বদাই উজ্জীবিত করে আসছে। তাই তারা যে কোনো কঠিন সময়েও বিচলিত ও মনক্ষুণœ হন না। আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ^াস ও আস্থার সাথে ধৈর্য ধারণ করে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে অভ্যস্থ এবং শেষ পর্যন্ত বিজয় তাদেরই পদচুম্বন করে। এ খোদায়ী করোনা পরীক্ষায়ও ইনশাআল্লাহ তারা উত্তীর্ণ হবেন।
কথাটি বলার প্রয়োজন এ কারণেই দেখা দিয়েছে যে, করোনা আত্মপ্রকাশের আগে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রæদের বহুমুখী ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত তুঙ্গে উঠেছিল, যার বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা এখানে আমাদের মোটেই উদ্দেশ্য নয়। ইসলাম ও মুসলমানদেরই সেই বৈরী ও প্রতিক‚ল পরিবেশেও বিশে^র নানা স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে হলেও ইসলামের পুনর্জাগরণের বহু নিদর্শন দেখা গিয়েছে। বলা যায়, বিভিন্ন অমুসলিম দেশে বহু মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বহু বন্ধ মসজিদ খুলে দেয়া হয়েছে, যেসব মসজিদে আজান ও জামাত বন্ধ ছিল পুনরায় আবার চালু হয়েছে, বহু উচ্চ বংশের প্রভাবশালী পরিবার, বহু নারী-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন, এমনকি বিভিন্ন স্থানে মুসলিম রমণীদের বোরকা-নেকাব নিষিদ্ধ করার বিধান প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনুরূপাবেভাবে ভাবে আরো নানা ক্ষেত্রে ইসলামী পুনর্জাগরণের বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে। প্রচারণার ক্ষেত্রে মুসলমানদের পরিচালনাধীন নানা ভাষার চ্যানেল, মিডিয়া রীতিমত বিস্ময়কর বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে, যা পূর্বে কখনো চিন্তা করা যায়নি। বিশ^বাসী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এটা ইসলামের পুনর্জাগরণের একটা ঝাপসা চিত্র। বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশেও ইসলাম বিরোধী তৎপরতা এসময় ছিল না এরূপ বলা যাবে না, তবে সজাগ-সচেতন মাশায়েখ, উলামা এবং ইসলাম প্রিয় জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে সেগুলো মাঠে টিকতে পারেনি।
ইসলামের ওপর করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু বলার পূর্বে করোনাকালীন সময়ে বিশ^ব্যাপী ইসলামী জাগরণের কোনো লক্ষণ বা ইসলামী ঐতিহ্যের কোনো প্রভাব আদৌ কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছে কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। এ পর্যায়ে বলা যেতে পারে যে, করোনা মহামারির এ কঠিন সময়ে অমুসলিম সুবিবেচক বিভিন্ন শ্রেণির চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবী, জ্ঞাণী-গুণীদের মধ্যে কিছুটা হলেও শুভবুদ্ধি ও উপলব্ধি জন্মাতে শুরু করেছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। কোনো কোনো ব্যক্তিকে পবিত্র কোরআন হাতে করোনাভাইরাসের উপর আলোচনা করতে দেখা গেছে এবং কোরআনের বরাতে পবিত্রতা অর্জন, মদ্যপান থেকে বিরত থাকা ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে এবং যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে, কোরআন দেড় হাজার বছর পূর্বেই পবিত্রতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে, যা করোনা প্রতিরোধের বড় হাতিয়ার। বিভিন্ন জনের মুখে এখন এ কথাও শোনা যাচ্ছে যে, মহিলাদের জন্য মাস্ক থেকে নিকাব পরাই অধিক উপকারী, যা ইসলামে মহিলাদের পর্দার অংশ। কোনো কোনো অমুসলিম দেশে সাময়িকভাবে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও কুকুরের মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অমুসলিমদের মুখে এ করোনাকালে ইসলামের বিভিন্ন সৌন্দর্যের কথা উচ্চরিত হচ্ছে। সুতরাং, এ বর্ণিত বাক্য, ‘আল হাক্কু মা শাহিদাত বিহিল আ’দাউ’ অর্থাৎ ইসলামের সত্যতা শত্রæদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে যথার্থভাবে।
মুসলমানের জীবনে একবার হজ্জ্ব করা ফরজ। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের মুসলমানদের পক্ষে এবার মক্কা শরীফে গিয়ে হজ্জ্ব করা সম্ভব না হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আগামীতে তাদের পক্ষে হজ্জ্ব করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কোরবানি করা ওয়াজেব হলেও সক্ষম ব্যক্তিকে তা প্রতি বছর করতে হয়। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোরবানি করার রাষ্ট্রীয় অনুমতি রয়েছে। এ সম্পর্কে ইসলামী ইতিহাসের একটি ঘটনা স্মরণযোগ্য। মক্কা বিজয়ের পূর্বে হিজরী ৬ষ্ঠ সালে রসূলুল্লাহ (সা.) ১৪০০ সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ‘খানা-ই-কাবা’ তোওয়াফ ও ওমরা হজ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মদীনা হতে বের হন এবং সঙ্গে কোরবানির উটগুলোও ছিল। ‘হোদায়বিয়া’ নামক স্থানে পৌঁছার পর কাফের মোশরেকদের দ্বারা তারা বাধাপ্রাপ্ত হন, যা ছিল ঐতিহাসিক হোদায়বিয়ার সন্ধির পটভ‚মিকা, যার বর্ণনা কোরআনে রয়েছে এবং সীরাত গ্রন্থসমূহে এর বিশদ বিবরণও বিদ্যমান। সন্ধি রচনাকালে কাফেরদের পক্ষ হতে একটি শর্ত ছিল মুসলমানগণ এবার ‘খানা-ই-কাবা’ তোওয়াফ করতে যেতে পারবেন না, আগামী বছর যেতে পারবেন। রসূলুল্লাহ (সা.) কাফেরদের এ শর্তও মেনে নেন এবং চুক্তি সম্পাদিত হয়ে যায়। এতে সাহাবায়ে কেরামের অনেকে দারুণভাবে মনক্ষুণœ হয়ে পড়েন, যাদের মধ্যে হজরত উমর (রা.) ও হজরত আলীও (রা.) ছিলেন।
সম্পাদিত চুক্তির প্রথম শর্তানুযায়ী ঐ বছর মুসলমানগণ মক্কায় গিয়ে খানা-ই-কাবার তোওয়াফ ও উমরা পালন করতে পারবেন না। এ শর্ত মেনে নেওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা.) এই প্রেক্ষিতে এহরাম খুলে সকলকে কোরবানী করতে বার বার বলতে থাকেন। কিন্তু কেউ তা করছেন না দেখে বিরক্ত হয়ে তিনি উম্মুল মোমেনীন হজরত উম্মে সালমা (রা.)-এর নিকট বিষয়টি জানালেন, উম্মুল মোমেনীন (রা.) পরামর্শ দিলেন, ‘আপনি গিয়ে নিজেই সে কাজগুলো করুন, তখন সবাই আপনার অনুসরণ করবেন।’ হুজুর (সা.) তাই করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে সকল সাহাবা তার অনুসরণ করলেন।
এখানে বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী মুসলমানগণ ওমরা আদায় করতে না পেরেও কেন তারা কোরবানি করলেন? কাফেরদের কড়াকড়ি শর্ত মেনে নিয়েও রসূলুল্লাহ (সা.) কোরবানির নির্দেশ দিলেন? ঘটনাটি হচ্ছে, উমরা করার উদ্দেশ্যে যাত্রাকালেই কোরবানির পশুগুলোকে বিশেষ নিদর্শন পরিয়ে নেয়া হয়েছিল, তাই সেগুলো কোরবানি করা জরুরি ছিল। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মুসলমানগণ যেহেতু ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে খানা-ই-কাবায় যেতে পারবেন না এবং সেখানে কোরবানি করারও সুযোগ অনুপস্থিত তাই রসূলুল্লাহ (সা.) হুদায়বিয়াতেই কোরবানি করার নির্দেশ দিলেন। এই ঘটনা হতেই কোরবানি যে কোনো স্থানে করার নির্দেশ পাওয়া যায়। বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ, এর সাথে ওমরা হজ্জ্বের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই এই করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যারা কোরবানি করতে প্রস্তুত তাদেরকে কোরবানি দিতে বাধা দেয়ার কিংবা এ সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না।
এ পর্যায়ে ইসলামী অনুশাসন তথা এবাদ-বন্দেগী ও ইসলামে সামাজিক রীতিগুলোর মধ্যে যেগুলোর ওপর করোনাভাইরাসের পূর্ণ বা আংশিক বিরূপ প্রভাব প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান, তার কিছু নমুনা নি¤œরূপ:
১। মুসলমানদের এবাদত-বন্দেগীর মধ্যে মসজিদে গমন করে জামাতে পঞ্জেগানা নামাজ আদায় করা, মসজিদে সাপ্তাহিক জু’মার নামাজ আদায় করা এবং রমজান মাসে মসজিদে তারাবীহর জামাত করা এবং ঈদের জামাত করা ইত্যাদির ব্যাপারে মক্কা শরীফ ও মুসলিম বিশে^র উলামায়ে কেরাম করোনা প্রতিরোধে অহরহ জারিকৃত আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিধি মানার প্রতি সমর্থন হিসেবে মুসলমানদের মসজিদে গমন হতে বারণ করেছেন এবং যাবতীয় এবাদত-বন্দেগী ঘরে অবস্থান করেই সম্পন্ন করতে বলেছেন। মুসলমনাগণ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (করোনা সংক্রান্ত) পুরোপুরি মেনে চলছেন।
২। জানাজার নামাজ ‘ফরজে কেফায়া’। স্থানীয় কয়েকজন লোক নিয়ে মৃত মুসলমানের জানাজা পড়লে সকলের পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু যদি মৃত ব্যক্তির জানাজা কেউ না পড়ে, মহল্লাবাসী সবাই সে জন্য দায়ী থাকবে। তবে যে ক’জন জানাজা পড়বেন, তারা সবাই করোনা ছোঁয়াচে মুক্ত কিনা, তা জানাজার পূর্বেই নিশ্চিত করা উচিত। কেননা তাদের মধ্যে যদি একজনও করোনা আক্রান্ত থাকেন, তার মাধ্যমেও করোনার সংক্রমণ ঘটতে পারে। একই কথা, পাঞ্জেগানা ও জু’মার নামাজের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। এ দুই নামাজের ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরাম কর্তৃক পাঁচ ও দশজন মুসল্লী নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে, তারাও করোনা মুক্ত বলে নিশ্চিত হতে হবে।
৩। মানবের লাশ দাফনের তথা কবরস্থ করার প্রথা বাবা আদমের (আ.) যুগ থেকে চলে আসছে। পৃথিবীতে প্রথম হত্যাকারী কাবিল তার ভাই হাবিলকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে দারুণভাবে বিপাকে পড়েছিল, নিহত ভাইয়ের লাশ কাঁধে নিয়ে ঘুরছিল, লাশ কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। তখন আল্লাহর পক্ষ হতে দুটি কাক এসে পরস্পর ঠুকরা ঠুকরিতে লিপ্ত হয় এবং একটি কাকের মৃত্যু হয়। হত্যাকারী কাক ঠোঁট দিয়ে মাটি খুঁড়ে গর্ত করে এবং সে গর্তে মৃত কাকটিকে পুঁতে রাখে। এ ঘটনা প্রত্যক্ষকারী কাবিলের চৈতন্য উদয় হয় এবং সেও তার নিহত ভাই হাবিলের লাশ মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখে। এটাই পৃথিবীতে মানবের প্রথম কবর, যার বর্ণনা কোরআনে রয়েছে। তখন থেকে মৃত মানুষের লাশ দাফন বা কবরস্থ করার প্রথা চালু রয়েছে।
৪। মুসলমানের লাশ দাফনের জন্য স্থানের অভাব হওয়ার কথা আল্লাহর এ দুনিয়ায় কল্পনাও করা যায় না। তথাপি মুসলমানদের করোনায় মৃতদের যৌক্তিক কারণে আলাদাভাবে প্রত্যেক লাশ কবরস্থ করার স্থান না হলে এক সঙ্গে অনেক লাশ গণ কবরে দাফন করা যেতে পারে।
মোট কথা, করোনাভাইরাস কবলিত বিশে^ বহুবিধ সমস্যা সংকটের মধ্যে ধর্মীয় তথা ইসলামের ক্ষেত্রেও নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, যার একটা খÐিত চিত্র তুলে ধরা হলো। পরিশেষে বলা যায়, এ সময়েও ইসলামী পুনর্জাগরণের বহু দিক এরইমধ্যে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।