যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
ফলের দেশ-বাংলাদেশ। আমাদের দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। দেশি ফলগুলো রঙে, রসে, স্বাদে অনন্য। শুধু খাদ্য হিসেবেই নয় দেশীয় ফলগুলোর রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যবহার। ফল আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানব জাতির সৃষ্টি ও বিকাশের সাথে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। আদিমকালে মানুষকে ফলমুল আহরণ ও ভক্ষণ করেই বাঁচতে হয়েছে। কাজেই তারা এসব ফল গাছের পরিচর্যা শুরু করে দেন। প্রকৃতিতে যত প্রকার খাদ্য দ্রব্য উৎপাদিত হয় তার মধ্যে ফল বেশি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু । এর মধ্যে রয়েছে মানব দেহের প্রয়োজনীয়তা সহ গুরুত্বপূর্ণ সকল পুষ্টি উপাদান।
ফল বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উৎস। কিন্তু অপ্রতুল সরবরাহ ও গ্রহণের কারণে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সুস্থ, সবল জাতি গঠনে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই দানা জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি ফলের উন্নয়নে সমগুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। ফল আর্য়ুবেদী চিকিৎসায় ও ভেষজ ঔষধ তৈরীতে ব্যবহার করে আসছে। এছাড়া কিছু কিছু ফল সরাসরি রোগ নিরাময়ে এবং রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পুষ্টি উপাদান ও ঔষধি গুণাগুণ ছাড়াও ফলে এমন কিছু জৈব এসিড ও এনজাইম আছে যা আমাদের হজমে সহায়তা করে। যেমন লেবু জাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিড, আঙ্গুর, তেতুঁল টারটারিক এসিড আছে এবং পেঁপেতে রয়েছে পেঁপেইন নামক হজমকারী উপাদান।
উচ্চ ফলনশীল জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দেশী ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আপামর মানুষের পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট হতে হবে। এ জন্য দেশের ফলের উৎপাদন বর্তমানে ৩৫ লক্ষ টন থেকে ৪৭ লক্ষ টনে উন্নীত করতে হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত ফলের মধ্যে কলা, আম, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, বাতাবীলেবু, লিচু, কুল এবং নারিকেল উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে কামরাঙ্গা, লটকন, সাতকরা, তৈকর, আতা, শরীফা, জলপাই, বেল, আমড়া, কদবেল, আমলকি, জাম, সফেদা, জামরুল, গোলাপজাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য অপ্রচলিত ফল। বাংলাদেশে মাথাপিছু দৈনিক ফলের প্রাপ্যতা মাত্র ৩৫ গ্রাম যা পুষ্টি বিজ্ঞানীদের সুপারিশকৃত ন্যূনতম চাহিদা মাত্রার (৮৫ গ্রাম) অনেক কম। দেশী ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন জাতীয় পদার্থ ও আঁশ বিদ্যমান যা মানুষের দেহের স্বাভাবিক গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে পুষ্টি নিরাপত্তায় বিরাট ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ফল জাতীয় খাদ্য থেকে শর্করা, আমিষ ও তেল প্রচুর পরিমাণে না পাওয়া গেলেও দেশের খাদ্য ঘাটতি আংশিকভাবে ফল উপাদনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। যেমন কাঁঠাল উৎপাদিত এলাকায় কাঁঠালের মৌসুমে অনেক লোকজন ভাতের পরিবর্তে একবেলা শুধু কাঁঠাল খেয়ে থাকে। একটা কলা ও পাউরুটি স্বল্প আয়ের লোকের দুপুরের খাবার। দেশী ফল চাষের মাধ্যমে অধিক ফল উৎপাদন এবং ব্যবহার করে দেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের মাধ্যমে ভাতের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ অনেকাংশ কমিয়ে আনার সাথে সাথে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা সুদৃঢ় করা সম্ভব। প্রযুক্তিগত কার্যক্রম প্রয়োগের মাধ্যমে দেশী ফলের ফলন বৃদ্ধি এবং মানসম্পন্ন ফল উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। দেশী ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে ফলভিত্তিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সাথে সাথে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উপরোক্ত মানসম্পন্ন তাজা ফল ও ফল থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকৃত দ্রব্যাদি রপ্তানীর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফলে জাতীয় অর্থনীতি সবল হবে এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যা খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখবে।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া রোধকল্পে সরকার বৃক্ষরোপণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই সকলকে ৩টি করে ফলদ বৃক্ষ ও ঔষধি চারা রোপণে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তাই ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষে দেশি ফলের চারা রোপণ ও উৎপাদনে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- রোগমুক্ত জীবন চান-ফল ঔষধির চাষ বাড়ান। অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান- দেশী ফল বেশী খান।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।