Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাকি সেভেনেই ৪ বছর

পূর্ণাঙ্গ হয়নি স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২০, ৮:৫৭ পিএম | আপডেট : ৮:৫৯ পিএম, ২২ জুলাই, ২০২০

# মুলো ঝুলিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণরাই দায়িত্বে থাকতে চান : ব্যর্থ হলে কাউন্সিলের দাবি-পদপ্রত্যাশীদের

বিএনপিসহ সকল অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলকে সুসংগঠিত করতে চান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যোগ্য নেতৃত্ব বের করতে সকল পর্যায়ে কাউন্সিলের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। নির্দেশনা মেনে সে পথেই হাঁটছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও ছাত্রদল। তরুণ নেতারা দায়িত্ব পেয়েই ছাত্রদলকে সংগঠিত করতে শুরু করেছেন, কমিটি হচ্ছে কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই ব্যর্থতার জালে ঘোরপাক খাচ্ছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। সংগঠন পুনর্গঠন করে শক্তিশালী করতে ৭ জনকে স্বেচ্ছাসেবক দলের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিন বছরের এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে চার বছর হতে চলছে। কিন্তু এখনো সেই ৭ জনের হাতেই জিম্মি রয়েছে সংগঠনটি। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠন, ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রাখার কথা ছিল যাদের, তাদেরই মতবিরোধ, দু’তিনজন মিলে পকেট কমিটি গঠন করতে চাওয়ায় সংগঠনটি স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন পদপ্রত্যাশীরা। বিএনপির হাইকমান্ড ও নেতাকর্মীদের কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির মুলো ঝুলিয়ে ‘লাকি সেভেন’ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দীর্ঘায়িত করতে চায় বলে অভিযোগ তাদের।

সংগঠনটির সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর শফিউল বারী বাবুকে সভাপতি ও আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরাজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলীকে মনোনীত করা হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সকল পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নতুন কমিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদেরকে কয়েক দফা আল্টিমেটামও দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। এতে নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধও হন তিনি।

কমিটির একাধিক নেতা জানান, নেতারা তাকে (তারেক রহমান) বুঝাতে সক্ষম হন যে- স্বল্প সময়ের জন্য হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা দরকার। কেননা আংশিক কমিটি রেখে নতুন কাউন্সিল হলে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী বাদ পড়বেন, যারা কোনো সাংগঠনিক পরিচয় দিতে পারবেন না।

জানা যায়, কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর এর মধ্যে দুই দফা কেন্দ্রীয় খসড়া কমিটি জমা দিয়েছেন দলীয় ফোরামে। সেই তালিকা পর্যালোচনা করার পর দেখা যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ৭ নেতার মধ্যে ২ জনের কর্মী-সমর্থক দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানার পর তিনি খসড়া কমিটি ফিরিয়ে দেন। সর্বশেষ গত ১৯ মার্চ ৩৩১ সদস্যের একটি কমিটি জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখানেও আগের মতোই দুইজনের পছন্দের লোকদের পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এজন্য গত মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সভায় তারেক রহমান জমা দেয়া কমিটির একজন একজন করে সাধারণ সম্পাদকের কাছে পরিচয় জানতে চান। নিজে নানা মাধ্যম থেকে তাদের খোঁজ-খবরও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

পদপ্রত্যাশীরা বলেন, রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে অংঙ্গসংগঠনগুলোর ওপরই নির্ভর করে বিএনপি। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী ছাত্রদলের নেতারাও পুনর্বাসনের জন্য অপেক্ষায় থাকেন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলে। কিন্তু যাদেরকে কমিটি গঠন ও শক্তিশালী করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই সংগঠনকে কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ ওঠেছে। পদপ্রত্যাশী একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান কমিটির ৭ জনকে তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কমিটি গঠন ও সংগঠন শক্তিশালী করতে এই সময় যথেষ্ট। কিন্তু তাদের আন্তরিকতা আছে কিনা সে বিষয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, দীর্ঘদিনেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও এখন হতাশায় ভুগছেন। পদ-পদবী না থাকায় অনেকে মন মরা হয়ে রাজনীতিবিমুখও হচ্ছেন। কেউ কেউ রাজনীতি ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, কেউবা পদ-পদবীর আশা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা অন্য কাজে মনোযোগী হয়েছেন। ছাত্রদলের টুকু-আলিম, জুয়েল-হাবিব, রাজিব-আকরাম কমিটির সহ¯্রাধিক সাবেক নেতা এখন সাংগঠনিক পরিচয়হীন। রাজনীতিতে কোনো পদ না থাকায় অলস সময় পার করছেন। তারা আরো বলেন, দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংগঠনে ধরে রাখা কঠিন হবে। কেননা কেন্দ্রীয় কমিটি করার পর তৃণমূলে যুবদলের পুনর্গঠন অব্যাহত থাকায় দীর্ঘদিন পদ-পরিচয়হীন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা তখন যুবদলের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে, যা সংগঠনের জন্য হবে আত্মঘাতী। আংশিক কমিটির নেতারা ব্যর্থ হলে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে কাজ করছি। কবে নাগাদ দেয়া হবে সে বিষয়ে সুষ্পষ্ট বলা যাচ্ছে না, তবে খুব শিগগিরই দেয়া হবে। জমা দেয়া খসড়া কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেখানে কিছু সংযোজন-বিয়োজন রয়েছে এজন্য নতুন করে খসড়া পাঠানো হবে। সেই কাজ চলছে।

হতাশ পদপ্রত্যাশীরা: দীর্ঘদিনেও স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। ১/১১’র জরুরি অবস্থা পরবর্তী অন্তত এগারো বছরের রাজনীতিতে খেয়ে না খেয়ে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তারা। অনেকেই জেল খেটে, পালিয়ে পালিয়ে বেড়িয়ে একে একে ঝরে গেছেন। অনেকেই গত ১৩ বছর রাজনীতিতে কিছুই পাননি। অথচ দলের ঘানি টানতে টানতে তারা এখন ক্লান্ত, নিষ্ক্রিয়। হয়তো এক সময় হারিয়েই যাবেন। ছাত্রদলের বিগত তিনটি কমিটির সাবেক নেতাদের প্রায় সবারই অংশগ্রহণ আছে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অধিকাংশই এখন সাংগঠনিক পরিচয়হীন। রাজনীতিতে কোনো পদ না থাকায় অলস সময় পার করছেন।

পদহীন ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের অন্যতম্য হলেন- ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন, ঢাবি ছাত্রদলের সাবেক দফতর সম্পাদক সরদার মোঃ নূরুজ্জামান, টুকু-আলিম কমিটির সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান পলাশ, বিল্লাল হোসেন তারেক (দফতর সম্পাদক), জাবেদ হাসান স্বাধীন, শহীদুল্লাহ ইমরান, তরুণ দে, রুহুল ইসলাম মনি, জুয়েল-হাবিব কমিটির সহ-সভাপতি আহসান উদ্দিন খান শিপন, আব্দুল হালিম খোকন, আনোয়ারুল হক রয়েল, সাইদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, কামাল আনোয়ার আহাম্মদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মিশু, সহ-সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হক রুবেল, জসীম উদ্দীন খান সহ কয়েকজন। সদ্য বিদায়ী রাজীব-আকরাম কমিটির সাবেক সহসভাপতিদের মধ্যে- এজমল হোসেন পাইলট, মহিদুল হাসান হিরু, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, মনিরুল ইসলাম মনির, মামুন বিল্লাহ, সাদিউল কবির নীরব, আব্দুল ওহাব, নিয়াজ মাখদুম মাসুম বিল্লাহ, ইসতিয়াক নাসির, ইখতিয়ার রহমান কবির, আহমেদ সাইমুম, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, জয়দেব জয়, তরিকুল ইসলাম টিটু, ফেরদৌস মুন্না, খন্দকার এনামুল হক, মুকিত ভুইয়া লিঙ্কন, মনিরা আক্তার রিক্তা, যুগ্ম সম্পাদকদের মধ্যে- আসাদুজ্জামান আসাদ, মিয়া মো: রাসেল, আবুল হাসান, নূরুল হুদা বাবু, আব্দুল করিম সরকার, মফিজুর রহমান আশিক, বায়েজীদ আরেফিন, সামসুল আলম রানা, কাজী মোকতার হোসেন, মির্জা ইয়াসিন আলী, সেলিনা সুলতানা নিশিতা, মেহবুব মাসুম শান্ত, ওমর ফারুক মুন্না, শফিকুল ইসলাম শফিক, সহসাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা, নাসিমা আক্তার কেয়া, রাজিব আহসান চৌধুরী পাপ্পু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রেদওয়ান বাবু, মো: উজ্জল হোসেন, শাহীনুর বেগম সাগর, আমীর আমজাদ মুন্না, কাজী ইফতেখারুজ্জামান শিমুল, নাদিয়া পাঠান পাপন, সঞ্জয় দে রিপন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম রিপন, সমাজ সেবা সম্পাদক আব্দুর রহিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আহসানুল হক শুভ্র, প্রশিক্ষণ সম্পাদক আরজ আলী শান্তসহ টুকু-আলিম, জুয়েল-হাবিব, রাজিব-আকরাম কমিটির সহস্রাধিক সাবেক নেতা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ