পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রতারণা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার অনুষঙ্গ হয়ে বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে। প্রতারকদের সামাল দেওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় তারা যা ইচ্ছা তাই করার অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। করোনাকালে যখন দুনিয়াজুড়ে মানবতার আর্তচিৎকার পাষাণেরও মন গলিয়েছে, তখন প্রতারকরা এটিকে অর্থ আয়ের সুযোগ হিসেবে ভেবেছে। এ অপকর্মে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবশেষে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। করোনার নকল সনদ তৈরি করে রোগী শুধু নয়, সরকারের কাছ থেকেও একই সঙ্গে অর্থ আদায়, লাইসেন্স ছাড়াই সাত বছর ধরে হাসপাতাল চালানো, মিরপুর শাখা পরিদর্শনের সময় অস্ত্রের মুখে মন্ত্রণালয়ের দু’জন কর্মকর্তাকে তাড়িয়ে দেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল নামের প্রতিষ্ঠানটি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে রাজধানীর সুপরিচিত বেসরকারি হাসপাতাল রিজেন্ট যে প্রতারণা করেছে, তা কেবল বৃহৎ নয়, বহু প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। নাগরিকদের ভীতি ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে একটি মহলের প্রতারণার খবর আগেও সংবাদমাধ্যমে এসেছে। হাসপাতালটির লাইসেন্স বা চিকিৎসা প্রদানের ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০১৪ সালে। তার মানে, নবায়ন ছাড়াই তারা গত ছয় বছর ধরে চিকিৎসার মতো স্পর্শকাতর সেবা দিয়ে আসছিল! করোনাকালেও দেখা যাচ্ছে, তারা বিনামূল্যে করোনা চিকিৎসার জন্য তালিকাভুক্ত হলেও রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে। অন্যদিকে বিনামূল্যে চিকিৎসার চুক্তি অনুযায়ী রোগীর নমুনা ঠিকই বিনামূল্যে পরীক্ষা করিয়েছে বিভিন্ন সরকারি গবেষণাগারে।
সংবাদে প্রকাশ, বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া অন্যান্য হাসপাতালের মতো তারা সরকারের কাছ থেকে বিলও আদায় করতে চেয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতাল স্পষ্টতই প্রতারণা, দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে। তারা চিকিৎসাপ্রার্থীর কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং সরকারি বিল উত্তোলনের মাধ্যমে গাছেরটা যেমন খেতে চেয়েছে, তেমনই কুড়াতে চেয়েছে তলারটাও। কিন্তু আমাদের বিস্ময়ের আরও বাকি থাকে, যখন দেখা যাচ্ছে তারা পরীক্ষা দূরে থাক, করোনা সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করে ফেলে দিয়েছে এবং মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছে। এই সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি বলে প্রাথমিক তদন্তে ধরা পড়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে হাসপাতালটি যা করেছে, তা নিছক প্রতারণা বা দুর্নীতি নয়। এটা নিঃসন্দেহে সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আমরা জানি, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়া সত্তে¡ও রিজেন্ট হাসপাতাল যাদের নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে, তারা স্পষ্টতই করোনা ছড়িয়েছে। আমরা দেখছি, কিছু ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশে দেশ থেকে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ নিয়েও সেখানকার বিমানবন্দরে গিয়ে আটকে যাচ্ছে। এদের কতজনের ক্ষেত্রে রিজেন্ট দায়ী খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা দেখছি, হাসপাতালটির চেয়ারম্যানও প্রতারকের শিরোমণি। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৩২টি প্রতারণা মামলা রয়েছে। জিকেজি হেলথ কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠানও একই কাজ করেছে। রিজেন্টের চেয়ারম্যান ও জিকেজির চেয়ারম্যান গ্রেফতার হয়েছে এবং প্রতারণা কথা স্বীকার করেছে। সরকারি দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথাও ইতোমধ্যে সকলের জানা হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলে এমন ব্যক্তিদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কী হতে পারে? কারা তাদের এসব সুযোগ দিয়েছে খতিয়ে দেখা জরুরি। যেমন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, তেমনই দলের আদর্শ ও ভাবমূর্তি ভবিষ্যতে অক্ষুণ্ণ রাখার প্রশ্নে। রিজেন্টের চেয়ারম্যান সাহেদ সংবাদমাধ্যমে বিশেষত টেলিভিশন টকশোতেও পরিচিত মুখ ছিলেন দেখা যাচ্ছে। বস্তুত এই জগতের কারও কারও অন্যায্য সহযোগিতা ছাড়া তার পক্ষে ‘মিডিয়া ব্যক্তিত্ব’ হওয়া সহজ ছিল না। আমরা এক্ষেত্রে আত্মজিজ্ঞাসা দেখতে চাই। রাঘববোয়ালদের বাইরে রেখে চুনোপুঁটি ধরে লাভ হবে না। নেপথ্যের রাঘব বোয়ালদেরও প্রকাশ্যে আনতে হবে। অন্যথায় মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য নিয়ে, রাষ্ট্রীয় অর্থ নিয়ে, নাগরিকের পকেট নিয়ে এভাবে প্রতারণা চলতেই থাকবে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।