পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করে রাতারাতি ব্যাংকিং সেবায় পরিবর্তন আনলেও গ্রাহক এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। এ সুযোগে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে জালিয়াতি চক্র এটিএম বুথে কার্ড স্কিমিং ও পিন ক্যাপচার ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য ও পিন নম্বর সংগ্রহ করে উঠিয়ে নিচ্ছে টাকা। আর এ সিন্ডিকেটে রয়েছেন বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা, আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী, মানি চেঞ্জিং প্রতিষ্ঠান ও ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিকরা। এ ঘটনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আতঙ্কে আছেন এটিএম কার্ড ব্যবহারকারী প্রায় ৯৫ লাখ গ্রাহক।
এদিকে পুলিশের তদন্তে এ এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় রাঘববোয়ালদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। এরা শুধু এটিএম কার্ড ব্যবহার করে নয়, এরা অন্য উপায়েও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা লুটপাট করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা জালিয়াতি করেছে এই চক্রটি।
অবশ্য জালিয়াতি ঘটনার পর থেকেই বিশ্লেষক ও আইন-শৃঙ্খলারাক্ষাকারী উভয়পক্ষেরই বক্তব্য ব্যাংকের ভেতরকার লোক না হলে বুথের ভেতরে এই ডিভাইস স্থাপন করা সম্ভব নয়। বাইরের কোনও চোর এতটা অল্প সময়ের মধ্যে ডিভাইস স্থাপন করতে পারবে না। প্রাথমিক তদন্তেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ বিয়য়ে তথ্য-প্রযুক্তি-বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিচ্ছে ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। ইনসাইট বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন মনে করছে, বিদেশিরা এই চক্রের হোতা হতে পারে। তবে, তাদের সঙ্গেও অবশ্যেই রয়েছে ব্যাংকের ভেতরকার কারো সম্পৃক্ততা। ব্যাংকের কারো যোগসাজশ ছাড়া এই ডিভাইস স্থাপন সম্ভব নয় বলেই মত সংস্থাটির।
এদিকে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার পর প্রতিটি এটিএম বুথে জালিয়াতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করাসহ ছয় দফা নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই নির্দেশনা ২০১৩ সালেও জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কোন ব্যাংকই সঠিকভাবে তা পরিপালন করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ এই সার্কুলারে বলেছে, আগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বুথে বসানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি এন্টি স্কিমিং ডিভাইস বসানো হলে এই জালিয়াতি প্রতিরোধ করা যেত।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এটিএম কার্ড জালিয়াতি ঘটনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তকারী একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুথের ভিডিওচিত্র সংগ্রহ পর্যালোচনা করে একাধিক বিদেশীর পাশপাশি দেশীয় চক্রের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। একেক বুথে একেকজন বিদেশীর সঙ্গে দেশীয় চক্রের লোকজনও রয়েছে। তাই এটি সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাজ বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তকারীরা তিনটি ব্যাংকের যেসব এটিএম বুথে বিশেষ যন্ত্র বসানো হয়েছিল, সেইসব বুথ পরিদর্শন করেন।
সম্প্রতি ইস্টার্ন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, ব্র্যাক ও দ্য সিটি ব্যাংকে এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এটিএম বুথের ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তে নামে। রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে ১ বিদেশীসহ সিটি ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদেরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে রাঘববোয়ালদের নাম বেরিয়ে এসেছে।
গতকাল ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা ও একজন বিদেশিকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে রাঘববোয়ালদের নাম বেরিয়ে এসেছে। অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নাম ছাড়াও আবাসিক হোটেল, ট্রাভেল এজেন্সি ও মানি চেঞ্জিং প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ায় মনে হয়েছে, এটিএম কার্ড জালিয়াতি শুধু একটি খ-িত অংশ। এরা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত পোলান্ডের পিটার জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তিনি চারটি দেশে এ ধরনের কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশেও অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তবে কোটি টাকা পর্যন্ত হিসাব বলতে পারেন। এরপর আর হিসাব মেলাতে পারেননি। কীভাবে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, এককভাবে কেউ টাকা হাতিয়ে নিতে পারে না। এটা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাউকে ছাড়াও সম্ভব নয়। এখানে ব্যাংকের কর্মকর্তা জড়িত থাকে। এর সঙ্গে মার্চেন্ডাইজার জড়িত থাকে, এরপর ওই ব্যক্তি। এই তিনজন মিলেই মূলত ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। তিনটি ব্যাংকের বাইরেও অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা জালিয়াতি করেছেন তারা। তবে এগুলো এটিএম কার্ড দিয়ে করেননি। এক্ষেত্রে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া গেছে। কৌশলগত কারণে এখনই বলা সম্ভব নয়। মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ব্যাংকগুলোর বিপুল পরিমাণ আর্থিক ঘাটতি হয়ে থাকে। ঘাটতি কীভাবে হয়? হয়তো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চুপ থাকে। কিন্তু সারা বিশ্বে প্রতিবছর ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার। এসব টাকা বিভিন্ন চক্রকার্ড ও অন্যান্য জালিয়াতির মাধ্যমে লুট করে থাকেন। বাংলাদেশেও এ রকম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারাও টের পান না। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের কার্ড জালিয়াতিতে রুমানিয়া, ইতালি, বুলগেরিয়া, ইউক্রেন ও লন্ডনের নাগরিক ছিলেন। যারা পলাতক রয়েছেন, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে রুমানিয়া ও ইউক্রেনের দুই নাগরিককে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে টাকা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বছরখানেক আগে। পিটার এ চক্রের মূলহোতা। তার সঙ্গে ছিল আরও চার বিদেশি নাগরিক ও লন্ডন প্রবাসী এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি। এদের মধ্যে দু’জন কয়েক মাস আগে ও বাকি দু’জন চলতি মাসের ১৩-১৪ তারিখে বাংলাদেশ থেকে চলে যায়। আর লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশী ওই ব্যক্তি চলে যায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে।
দেশে এসে তারা প্রথমে দেশীয় জালিয়াতদের খুঁজে বের করে। লন্ডন প্রবাসী ফরিদ নাবির চৌধুরীর মাধ্যমেই খুঁজে বের করে সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা মাকসুদকে। মাকসুদ নিজের দলে ভিড়িয়ে নেয় রেজাউল ও রেফাজকে। এরপর ধীরে ধীরে পরিকল্পনা করে কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়ার। তবে এ চক্র মোট কত টাকা জালিয়াতি করে তুলে নিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি।
যদিও চারটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৪০টি এটিএম কার্ডের বিপরীতে প্রায় ২০ লাখ টাকা চুরির কথা বলা হচ্ছে। তবে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ চক্র আরও অনেক বেশি টাকা তুলেছে। অনেক ব্যাংকই সুনাম হারানোর ভয়ে এটিএম জালিয়াতির বিষয়টি গোপন রেখে গ্রাহকের সঙ্গে রফা করে ফেলেছে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, পিটার আন্তর্জাতিক ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি চক্রের হোতা। তার নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫ জন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত। এরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কার্ড জালিয়াতি করতো। এমনকি ক্রেডিট জালিয়াতি করে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াতো। বাংলাদেশে বছর চারেক আগে প্রথম এসেছিল পিটার। এরপর ২০১৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ নাবির চৌধুরীসহ আসে। তারা একসঙ্গেই গুলশানের হোটেল হলিডে প্ল্যানেটে ওঠে। এরপর একে একে দেশে আসে রোমানিয়ার দুই নাগরিক, বুলগেরিয়ান এন্ডারসন ও ইউক্রেইনের রোমিও। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম জালিয়াতি নিয়ে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনামতো দেশীয় এজেন্ট হিসেবে মকসেদকে খুঁজে বের করে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে নিয়ে আসে স্কিমিং ডিভাইস। সেই ডিভাইস দিয়ে জালিয়াতির জাল পেতে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, কয়েক মাস ধরেই পিটারের এ চক্রটি এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কাজটি করে আসছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো নিজেদের সুনামের কথা ভেবে এগুলো ফাঁস করেনি। মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পিটারের দুই সহযোগী রোমানিয়ান কয়েক মাস আগেই দেশ ছাড়েন। অপর দু’জন অ্যান্ডারসন ওরফে অ্যান্ড্রি ও রোমিও পিটারের সঙ্গেই ছিল। এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তারাও মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে যায়। এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি লন্ডন চলে যায় ফরিদ নাবির চৌধুরীও। সে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র অনুযায়ী, দেশে সোয়া ৪ কোটি ব্যাংক হিসাব গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ৯৫ লাখ এটিএম কার্ড ব্যবহারকারী রয়েছেন। গত এক দশক ধরে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে সব ধরনের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডধারীর সংখ্যা। ব্যাংকিং চ্যানেলের এই পরিসংখ্যানেই বলছে দেশে এই মুহূর্তে অনলাইন ব্যাংকিং কতটা জনপ্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি জালিয়াতির ঘটনায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা। ব্যাংকের তথ্যভান্ডার হ্যাকিং এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সিম ডুপ্লিকেট, ক্লোনিং, ব্লক, কল ডাইভার্ট করে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। সর্বশেষ জালিয়াত চক্র এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। যদিও অনলাইন ব্যাংকিংয়ে সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও যথাযথ পরিপালন করে না দেশে কার্যরত সরকারী-বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলো।
জানা গেছে, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাংকের তথ্যভা-ার হ্যাকিং, পরিচিতি চুরি, গোপন নম্বর চুরি, ইলেকট্রনিক লেনদেনের বিভিন্ন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রাহকের অর্থ-আত্মসাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সিম ডুপ্লিকেট, ক্লোনিং, ব্লক, কল ডাইভার্ট করে এসব জালিয়াতি করা হচ্ছে। এসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য সংগ্রহ করতে পারলেও মোবাইল ফোন অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভিন্ন হওয়ায় আইনগত বাধ্যবাধকতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে কললিস্ট, কল লগ, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমস, নেটওয়ার্ক টাওয়ার অনুসরণ করে কোন সিমের অবস্থান শনাক্তকরণ, কোন সিমের কল ডাইভার্ট, ক্লোন, ডুপ্লিকেট, ব্লক করা হয়েছে কি-না, জালিয়াতির ঘটনায় ব্যবহৃত আইপি ঠিকানা, ম্যাক ঠিকানা, ব্রাউজিং ইতিহাস, ব্যবহৃত মডেমের অবস্থান, নেটওয়ার্ক টাওয়ারের ব্যবহার এসব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফলে তথ্য-প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে সংঘটিত জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
এদিকে সম্প্রতি এটিএম কার্ডের লেনদেন সমস্যা, জালজালিয়াতি ও প্রতিরোধ নিয়ে ‘ইন্ট্রাডাকশন অব দ্য বায়োমেট্রিক এটিএম কার্ড ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ : এ্যা ডিজিটাল ওয়ে টু রিডিউস দ্য ডিজিটাল ক্রাইম’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনেও জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, এটিএম কার্ডের লেনদেনেও কার্ড ও পিনকোড চুরি করে টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন তথ্যভা-ার থেকে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও বুথে গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও থেকে পিনকোড চুরি করা হচ্ছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। জড়িপে ব্যাংকার, ডাক্তার, গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ১৮০ জন এটিএম কার্ড ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিজিটাল চোরেরা ৪৩ জন গ্রাহকের কার্ড ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। এ সংখ্যা জরিপে অংশগ্রহণকারীর ২৪ শতাংশ। এটিএম কার্ডে জালিয়াতির ঘটনা শুনেছেন ২৮ গ্রাহক, যা ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে ডিজিটাল চোরের খপ্পরে পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে ৪০ শতাংশ গ্রাহকের। এ বিষয়ে জরিপকারী প্রভাষক তাসলিমা আখতার ও আরিফিন ইসলাম বলেন, আমরা প্রশ্ন পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যাগুলো জানতে পেরেছি। যে প্রক্রিয়ায় পিনকোড চুরি এবং লেনদেন হচ্ছে এটি দুষ্কৃতদের পক্ষে খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়। তাই আমরা মনে করছি, উন্নত প্রযুক্তির বায়োমেট্রিক কার্ড ব্যবহার করলে চুরি ও জালজালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে জালিয়াতির ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অটোমেটিক চেক ক্লিয়ারিং ক্ষেত্রে করপোরেট গ্রাহকের এক লাখ টাকা এবং ব্যক্তি ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকার বেশি চেক হলে তা পেমেন্ট করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানাতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং নিরাপদ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিদিনের লেনদেন মনিটরিং করা যায় কি না তা নিয়েও কাজ চলছে। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এটি করতে পারছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যবস্থায় অনিয়ম হলে পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের অপ্রতুল জনবলের কারণে ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগকে দিয়ে তদন্ত করা হয়। এখন এ পরিদর্শন জোরদার করতে পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগে আলাদা সুপারভিশন বিভাগ চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী ও মিরপুর এলাকার বিভিন্ন বুথ থেকে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা খোয়া যায়। গ্রাহকের কাছে ডেবিট কার্ড ও পাসওয়ার্ড গচ্ছিত থাকলেও তাদের মোবাইল মেসেজে টাকা উত্তোলন হওয়ার নোটিফিকেশন আসে। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা নিজ নিজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানালে বিষয়টি সবার নজরে আসে। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) পক্ষ থেকে বনানী থানায় তথ্য-প্রযুক্তি আইন ও পেনালকোডের ধারায় একটি মামলা করা হয়। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকেও পল্লবী থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। দুটো মামলাই তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। অপরদিকে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি তদন্ত করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।