২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
দেশের অনেক মানুষ লকডাউন না দেবার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেকে বিপক্ষে। ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি অনেক দেশের মানুষ তাদের নিজ নিজ এলাকায় লকডাউন তুলে নিতে রীতিমত মিটিং মিছিল করছে। রেডজোন ঘোষিত ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারেও এমনটা আমরা দেখেছি। আসলে এই অচলাবস্থার অবসান আমরা সবাই চাই। কিন্তু কিভাবে? আসুন সহজভাবে জেনে নেই-
আসলে লকডাউন কি?
একটু সহজভাবে যদি চিন্তা করি; আমরা নিশ্চই চিড়িয়াখানা দেখেছি। ওখানে কি হয়? ভয়ংকর সব জন্তুদের খাঁচায় ভরে রেখে বাইরে থেকে তা আমরা দেখি। আবার চিন্তা করুন সাফারি পার্ক গুলোর কথা। এখানে জন্তুরা বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর আমরা গাড়ীর খাঁচায় থেকে ঘুরে ঘুরে ওদের দেখি।
লকডাউন হলো সাফারি টেকনিক। করোনাভাইরাসকে বাইরে ছেড়ে রেখে আমরা এখন ঘরে আটকা। চীনসহ পৃথিবীর অনেক দেশ আমাদেরকে এটাই শিখিয়েছে। এতে অনেকে সফলও হয়েছে। নিউজিল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভুটান, নেপাল সহ অনেক দেশই এর সুফল পাচ্ছে।
লকডাউন না দেয়ার কি কি পদ্ধতি থাকতে পারে?
পদ্ধতি-১
এখন যদি সাফারি থেকে চিড়িয়াখানা টেকনিকে আমাদের যেতে হয় বা লকডাউন বাদ দিতে হয় তবে করোনাভাইরাসকে খাঁচায় আটকাতে হবে। কিন্তু ভাইরাস তো দেখা যায়না, একে আটকাবেন কিভাবে? আসলে আটকে দিতে হবে এই ভাইরাস বহনকারীকে। এই বহনকারী চিহ্নিত করতে আমাদের প্রচুর টেস্ট করতে হবে। পজেটিভ সব রোগীকে এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন সবাইকে আলাদা করে ফেলতে হবে। যখন এই কাজটি সমাপ্ত হবে তখন আমরা কিছু সময় নেব আর পর্যবেক্ষণ করব। এভাবেই একসময় সম্ভব লকডাউন বাদ দেয়া।
পদ্ধতি -২
এটি হাজার বছরের পুরনো পদ্ধতি। ডারউইনের “সার্ভাইভাল অব দা ফিটেস্ট” থিউরি এটি। সামনে এসে রোগ মোকাবেলা পদ্ধতিও বলা যায় একে। এই পদ্ধতিতে আপনি যখন তখন লকডাউন বাদ দিতে পারেন। এতে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হবে। কেউ মারা যাবে, বাকিরা সুস্থ হয়ে যাবেন। যারা সুস্থ হবেন তারা প্রাকৃতিক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা পেয়ে যেতে পারেন। এই পদ্ধতিতে দূর্বলরা ঝরে পড়ে করোনা প্রতিরোধী সবল সমাজ গঠিত হবে।
পদ্ধতি -৩
এটি ধীরে চলো নীতি। লকডাউন সামান্য শিথিল করে দেখা এর কি প্রভাব। সাথে পরীক্ষা আর রোগী সনাক্ত অব্যাহত রাখা। প্রান্তিক জনগণকে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসাকে ভর্তুকির আওতায় আনা। প্রচুর প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় আর তা থেকে কিভাবে বাঁচা যায় তার কার্যকরী অনলাইন, টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া।
কোনটার কি সুবিধা-অসুবিধা?
চিড়িয়াখানা টেকনিকের জন্য দরকার খুব শক্তিশালী পরিকল্পনা, আধুনিক ব্যবস্থা। র্যাপিড টেস্টিং। তবে এর সফলতায় ঝুঁকি কম, প্রাণহানির আশংকা খুবই কম। তবে এই কাজ সময়সাপেক্ষ তাই লকডাউন বাদ দিতে সময় লাগবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। ডারউইন পদ্ধতি সহজ, আদিম। তবে এতে ব্যাপকভাবে প্রাণহানি হতে পারে, ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক। স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। ফলে এখানে আরো বড় আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে পারে দেশ।
পরিশেষে বলা যায় লকডাউনই এখন পর্যন্ত আমাদের সরকারের পছন্দের তালিকায় আছে। এটা সারা দেশে একযোগে কার্যকর না থাকলেও অনেক জেলার অনেক অংশে এটা কার্যকর হয়েছে। ঢাকারও অধিত সংক্রমিত এলাকা চিহ্নিত করে ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই ছোট ছোট এলাকার লকডাউন কতটা ফল বয়ে আনবে তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। তবে এটা আমাদের মানতেই হবে যে, ভুল সিদ্ধান্তের বড় খেসারত দিতে হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি সর্বোত্তম।
ডাঃ মোহাম্মদ আলী
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস
মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।