পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেটেড কারসাজি চরম আকার ধারণ করেছে। এ কথা ঠিক যে, বিশ্বঅর্থনীতিতে মন্দার কারণে দেশের রফতানিমুখী খাতসমুহে এক ধরনের মন্দা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর এই মন্দা যেন কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার বাজারকেইসবচেয়ে বেশি গ্রাস করেছে। তৈরী পোশাক, পাটশিল্পের মত রফতানিমুখী শিল্পেও মন্দা ভর করলেও কাঁচা তুলা বা কাঁচা পাটের মূল্যে এমন ধস না নামলেও সব অবজ্ঞা যেন কাঁচা চামড়ার উপর গিয়ে পড়ছে। ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া রফতানিতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি কমলেও প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পুরো দায় কোরবানির পশুর চামড়ার উপর পড়ার কথা নয়। এ কারণে গত বছর কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য না বাড়িয়ে এর আগের বছরের নির্ধারিত মূল্য ঠিক রেখেছিল সরকার। কিন্তু সে মূল্য নিশ্চিত রাখতে মাঠ পর্যায়ে কোনো তদারকি বা বাধ্যবাধকতা ঠিক রাখার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চামড়া ব্যবসায়ীরা যথেচ্ছভাবে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেশের কওমি মাদরাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং ও অতিদরিদ্র গ্রামীন জনগোষ্ঠিকে তাদের ন্যুনতম প্রাপ্য থেকেও বঞ্চিত করে। চামড়ার নামমাত্র মূল্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক মওসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লোকসান মেনে রাস্তার পাশে চামড়া ফেলে গেছেন অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন, এমন খবরও তখন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রফতানিমুখী শিল্পখাত। যত মন্দাই হোক, এ খাত থেকে গত অর্থবছরেও বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় হয়েছে। দেশের চামড়া শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের শতকরা ৮৫ভাগই বিদেশে রফতানি হয়, যা আন্তর্জাতিক বাজার চাহিদার শতকরা ১০ ভাগের বেশি পুরণ করে। গত এক দশকে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার মূল্য অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য ছিল প্রতি বর্গফুট ৯০ টাকা, সেখানে গত ৩ বছর ধরে তা ৪৫টাকা নির্ধারন করা হলেও প্রান্তিক বিক্রেতারা তা পায়নি। সরকার যেন মূল্য নির্ধারণ করেই তার দায়িত্ব শেষ করেছে। শরিয়তের বিধান অনুসারে কোরবানির পশুর চামড়া বা এর মূল্যের হক এতিম ও হতদরিদ্র মানুষের। সিন্ডিকেটেড কারসাজি বন্ধ করতে এবং এতিম-মিসকিন ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকার অন্যতম অবলম্বন হিসেবে কোরবানির চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার কোনা কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় দেশের লাখ লাখ এতিম, হাজার হাজার কওমী মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিং ও গ্রামীন জনপদের অসহায়-দরিদ্র মানুষকে অশেষ বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। কোরবানির পশুর চামড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং এতিম-মিসকিন ও গ্রামীন দরিদ্র জনগোষ্ঠির সামাজিক নিরাপত্তায় বড় ভ’মিকা পালন করে থাকে।কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির শিক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবছর কোরবানির ঈদে গরু, মহিষ, ছাগল-ভেড়া মিলিয়ে দেশে প্রায় এককোটি পশু কোরবানি করা হয়। কোরবানির পশু থেকে প্রাপ্ত চামড়া থেকে দেশের চামড়াশিল্পে কাঁচা চামড়ার চাহিদার ৬০ ভাগের বেশি পুরণ হয়ে থাকে। আর কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বা তার মূল্য এতিম, হতদরিদ্রদের লালন-পালন, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করা হয়। সিন্ডিকেটেড কারসাজি করে কোরবানির চামড়া মূল্যে ধস নামিয়ে প্রকারান্তরে দেশের হাজার হাজার দ্বীনিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লাখ লাখ এতিম ও অতিদরিদ্র মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ কারণেই কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও তা নিশ্চিত করার বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরাও এ সমাজেরই মানুষ। তাদেরকে অবশ্যই কোরবানির চামড়ার মূল্যের ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হবে, শুধু ব্যবসা ও মুনাফার কথা ভাবলে চলবে না। কোরবানির চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের অনৈতিক মুনাফাবাজি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দেশের আলেম-ওলামা সমাজ। গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয় ওলামা পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের খ্যাতিমান পীর-মাশায়েখ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। চামড়া নিয়ে যে কোনো বিভ্রান্তি ও ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। এতিম দরিদ্রদের অধিকার ও ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি পাট, চা ও চামড়ার মত সম্ভাবনাময় ও ট্রাডিশনাল রফতানিমুখী শিল্পকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কুচক্রিমহলের তৎপরতা রুখে দিতে প্রধানমন্ত্রীকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।