মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চলতি মাসে চীনের সাথে সীমান্ত সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর নয়াদিল্লি চীন থেকে আমদানি কমানোর উপায় খুঁজতে বলেছিল সংস্থাগুলিকে। তবে দুটি বড় শিল্প, গাড়ি ও ফার্মাসিউটিক্যালস বলেছে যে, এটি করার চেয়ে বলা সহজ।
অনেক দেশের মতো ভারতও ইলেকট্রনিক ও ওষুধের কাঁচামালের মতো পণ্যের জন্য চীনের উপর নির্ভর করে। কারণ সংস্থা ও শিল্পের পরিসংখ্যান বলছে, এত সস্তায় তারা এগুলো অন্য কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে না। এভাবে আমদানি রোধ বা বিকল্প ব্যবস্থা না করে সেগুলোকে ব্যয়বহুল করার যে কোনও পদক্ষেপ স্থানীয় ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
দেশটির বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি ইন্ডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান আর সি ভার্গভ বলেন, ‘আমরা আমদানি পছন্দ করি না, তবে তা করতে হয় আমাদের কোনও বিকল্প নেই বলে’।
‘স্থানীয়ভাবে সংস্থাগুলোকে উৎপাদনে কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে হবে, আমাদের আরও প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে এবং অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ব্যয় কমাতে হবে’।
ভারত ২০১৯ অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত চীন থেকে প্রায় ৭০.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং মাত্র ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার রফতানি করেছে। এটা যে কোনও দেশের সাথে এর বিস্তৃত বাণিজ্য ঘাটতি।
বাণিজ্য সংস্থার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সরকার এখন ১,১৭৩টি অপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে সংস্থাগুলোর সাথে পরামর্শ করছে। এর মধ্যে খেলনা, প্লাস্টিক, স্টিল আইটেম, ইলেকট্রনিক্স এবং নির্দিষ্ট অটো উপাদান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে - যা যানবাহন উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বনির্ভরতা অভিযানের অংশ হিসাবে চীন এবং অন্য কোথাও প্রায় ৩০০টি পণ্যের ওপর বাণিজ্য বাধা ও আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনার শীর্ষে এটি।
এপ্রিল মাসে, মহামারী পরবর্তী সময়ে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ব্যবস্থা রোধ করতে ভারত চীনসহ প্রতিবেশী দেশগুলির বিনিয়োগের জন্যও নিয়ম কঠোর করেছে। ‘শীর্ষস্থানীয় ১০ জন ওষুধ প্রস্তুতকারকের কর্পোরেট কৌশলটির প্রধান বলেন, ‘যদি পরিস্থিতি বাড়তে থাকে তবে চীনের চেয়ে ভারত অনেক বেশি হারাতে পারে। ‘আমরা এটি বহন করতে পারব না’।
অটো কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (এসিএমএ) এর তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে ৪.২ বিলিয়ন ডলারে চীন থেকে ভারতের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ইঞ্জিন এবং অন্যান্য যন্ত্র পণ্য আমদানি হয়েছে। এসিএমএর মহাপরিচালক ভিনি মেহতা বলেছেন, এগুলোর কয়েকটি উপাদান তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোথায় থেকে সংগ্রহ করা কঠিন। এসিএমএ’র সদস্যদের মধ্যে বোশ, ভ্যালিও এবং মিন্ডা ইন্ডাস্ট্রিজের মতো সংস্থাগুলিও রয়েছে।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা হাঁটু-ঝাঁকুনির প্রতিক্রিয়াও সহ্য করতে পারি না, বিশেষত যখন আমরা মহামারী সৃষ্ট বিঘ্ন থেকে উদ্ভ‚ত হয়েছি’।
চীনা সাপ্লাইও ভারতের বর্ধমান ওষুধ শিল্পে মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সস্তা জেনেরিক ওষুধ রফতানি করে। শিল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সান ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, লুপিন এবং আইপিসিএ ল্যাবগুলির মতো ভারতের কয়েকটি বৃহত্তম ওষুধ সংস্থাগুলি চীনের উপর নির্ভর করে এবং ভারত সামগ্রিকভাবে সেখান থেকে সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদানগুলি (এপিআই) সরবরাহের প্রায় ৭০ শতাংশ পেয়ে থাকে।
বড় বড় ওষুধ প্রস্তুতকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল সুদর্শন জৈন বলেন, ‘তাৎক্ষণিক ভবিষ্যতে আমরা চীনের উপর নির্ভরতা অব্যাহত রাখতে চলেছি’, যদিও তিনি বিশ্বাস করেন যে, এপিআই সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ‘খুব কম সম্ভাবনা’ রয়েছে।
এ মাসে, চীন সাধারণ ব্যথা নিরাময়কারী প্যারাসিটামল এবং সিপ্রোফ্লোকসাকিনের শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত একটি অ্যান্টিবায়োটিকের দাম ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন এক প্রবীণ শিল্প নির্বাহী।
‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ড্রাগ। আমরা যদি চীনাদের কাছ থেকে না কিনে থাকি তবে ঘাটতি দেখা দেবে’ -নির্বাহী বলেছিলেন। ‘ভারতে ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি ধীরে ধীরে, দীর্ঘ-টানা প্রক্রিয়া’।
লাদাখ নিয়ে সীমান্তে দু’দেশের সমরসজ্জা
লাদাখে সেনা সরানো নিয়ে আলোচনার মধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করল ভারত ও চীন। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘চীনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা এবং সীমান্ত চুক্তি ভেঙেছে। মে মাসের গোড়া থেকে চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর বিপুল পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করেছে। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই চীন স্থিতাবস্থা ভাঙার চেষ্টা করছে। তারা অন্যায্য দাবি জানাচ্ছে। চীনের সেনার ব্যবহার পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছে। গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে চীনের সুরবদল তার একটা উদাহরণ’।
পাল্টা অভিযোগ করেছে চীনও। ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদ‚ত সুং ওয়েংদুং সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘গালওয়ানে সা¤প্রতিক সংঘর্ষের দায় কোনোভাবেই চীনের নয়। আমাদের আশা, ভারত এমন কোনো কাজ করবে না, যাতে সীমান্ত পরিস্থিতি জটিল হয়।›› সংঘর্ষের দায় ভারতের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছেন সুং। চীনের অভিযোগ, ভারতই তাঁদের এলাকায় ঢুকে হামলা করেছে।
অনুরাগের দাবি, ‘ভারত কখনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পার হয়নি। ভারতের যা নির্মাণ তা নিজেদের দিকে এবং নিয়ম মেনে। চীন সেই ভ‚মিকা নেয়নি। তাই বারবার সঙ্ঘাত হচ্ছে। ভারত একতরফা স্থিতাবস্থা লঙ্ঘন করেনি। কিন্তু চীন দ্বিপাক্ষিক যাবতীয় চুক্তি, বিশেষ করে ১৯৯৩ সালের চুক্তি ভঙ্গ করে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় বিপুল সেনা সমাবেশ করেছে এবং স্থিতাবস্থা ভঙ্গ করেছে। অতীতে তারা মাঝে মাঝে এই কাজ করেছে। কিন্তু এবার তারা দুই দেশের সম্মতিতে যেসব নিয়ম চালু করা হয়েছিল, তা সবই ভেঙেছে’।
বুধবারই ভারত ও চীনের ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন বা ডবিøউএমসিসি-র বৈঠক হয়েছে। ভিডিও বৈঠকে কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেনি দুই দেশ। সূত্র জানাচ্ছে, সেখানেই ভারত ও চীন একে অপরকে দোষারোপ করেছে। তারপর দুই পক্ষের তরজা থেকে মনে হচ্ছে, আলোচনা খুব বেশিদূর এগোয়নি। ফলে দুই পক্ষ সেনা সরানো নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছনোর কথা বললেও, সেটা কবে থেকে শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না।
লাদাখের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উত্তেজক। সেনা প্রধান দুই দিন লাদাখ সফর করার পর দিল্লি ফিরেছেন। তিনি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার পর লাদাখে সেনা মোতায়েন নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে ভারত।
লে শহরের অবস্থা আগের মতোই। সমানে যুদ্ধবিমান উড়ছে। পাক খাচ্ছে সেনা হেলিকপ্টার। লে শহর থেকে বেরলেই পুলিশ ও সেনার অসংখ্য চেক পোস্ট। সমানে সেনার গাড়ি যাচ্ছে। সূত্র জানাচ্ছে, গালওয়ানে ভারত ও চীনের সেনা একেবারে মুখোমুখি রয়েছে। একাধিক বলয়ে সেনা রয়েছে। সবমিলিয়ে এই অঞ্চলে ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। চীনও সমানসংখ্যক সেনা মোতায়েন করেছে।
তবে লাদাখে সংঘর্ষের পর এই প্রথমবার চীনের তরফে সরকারিভাবে স্বীকার করা হলো যে, তাদের সেনাও মারা গেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা হে জিয়াংখি বলেছেন, সংঘর্ষে চীনের সেনাও মারা গেছে। কিন্তু উত্তেজনা বাড়বে বলে কতজন মারা গেছে তা বলা হচ্ছে না। সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। সূত্র : রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে ও এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।